ঢাকা শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

নগদ টাকা বেড়েছে মানুষের হাতে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ১২:৫৭ এএম

ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকা আবারও বেড়েছে। গত মে মাস শেষে ব্যাংক-ব্যবস্থার বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা, এপ্রিলে যার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেশ কিছু কারণে মে মাসে মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ওই মাস ছিল ঈদুল আজহার মাস। এ সময় মানুষের টাকার চাহিদা বাড়ে। এ ছাড়া ওই মাসে ছয়টি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করার খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়লে এসব ব্যাংক

থেকে মানুষ টাকা তুলে নেয়। ফলে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়।
যদিও এপ্রিলে মানুষের হাতের টাকা আবার ব্যাংকে ফিরেছিল। ওই মাসে ব্যাংকে ফিরেছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। তবে মার্চে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ অর্থ বেড়েছিল প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। মূলত ঈদুল ফিতরের খরচের জন্য ওই মাসে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার প্রবণতা বেড়ে যায়। পাশাপাশি কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন গুজব ছিল বাজারে। তার আগে টানা ছয় মাস ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ কমেছিল। তবে ওই কমার পরিমাণ ছিল খুবই কম। ওই ছয় মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ কমেছিল ২০ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত টানা ১১ মাস ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছিল।

তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বরে ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। গত বছর যথাক্রমেÑ জানুয়ারিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা, মার্চে ২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা, এপ্রিলে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা, মে মাসে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা, জুনে ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা, জুলাইয়ে ২ লাখ ৯১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা এবং আগস্টে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি ৪ লাখ টাকায়। তবে সেপ্টেম্বর থেকে তা আবার কমতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ, পরের মাস অক্টোবরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি ৭ লাখ, পরের মাস নভেম্বরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬ কোটি ৭ লাখ, এর পরের মাস ডিসেম্বরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি ৫ লাখ, চলতি বছরের জানুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ কোটি ৯ লাখ এবং ফেব্রুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের মার্চে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি ৬ লাখ।

পতিত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে নানা অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে, যা অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সামনে আসে। এতে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছিল। ফলে সেসব ব্যাংক থেকে টাকা তোলার চাপ ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছিল। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সেই প্রবণতা কমতে থাকে এবং হাতে থাকা টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করে। তবে দুই ঈদের আগের মাসগুলোতে বাড়তি খরচে জন্য নগদ টাকা তোলার প্রবণতা বেড়ে যায়।

এদিকে গত মে মাস শেষে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। এক মাস আগে এপ্রিলে যার পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ২০ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের আমানত বাড়লেও কিছু ব্যাংকে এখনো আমানত উত্তোলনের চাপ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর ঋণ ফেরত আসছে কম। আবার নতুন করে সেভাবে আমানত পাচ্ছে না। এতে করে সরকারি-বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংকের আমানত কমে গেছে।