ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে মাঠে সক্রিয় হয়েছে। দেশের বড় ৮টি ইসলামিক দল এরই মধ্যে জোটে আবদ্ধ হয়েছে। তবে জোট নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সবসময়ই ধোঁয়াশা তৈরি হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি ও নতুন গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর মধ্যে নির্বাচনী জোট গঠনের গুঞ্জন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও নুরের গণঅধিকার পরিষদও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসে, দলগুলো জোট গঠনে ততই ততপর হয়ে ওঠে। কারণ এটি একমাত্র উপায় রাজনীতিতে টিকে থাকার এবং মাঠ উত্তপ্ত রাখার।
গত বছরের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে, যার ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সংঘাতের সূচনা হয়েছে। এবার এই সংঘাত দীর্ঘদিনের দুই মিত্র বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এর মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও জামায়াত ইতিমধ্যেই নিজেদের জোট গঠন করেছে এবং মাঠে সক্রিয়।
বিএনপি ও এনসিপি মিলিতভাবে একটি নির্বাচনী জোট গঠন করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এটি তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি বড় সুযোগ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী রাখার গুরুত্বপূর্ণ সময় হতে পারে।
অন্যদিকে, এনসিপিকে নিজেদের জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে আগ্রহী জামায়াতে ইসলামীও।
জোট প্রসঙ্গে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব জানান, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোটে না গিয়ে স্বতন্ত্র অবস্থানে থাকার বিষয়ে বেশির ভাগ নেতাকর্মী মত প্রকাশ করেছেন। আসন সমঝোতা কথাটির সঙ্গেও আমরা একমত নই। তবে অভিন্ন এজেন্ডা, ঐক্য এবং রাজনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন হতে পারে।’
এনসিপি এরই মধ্যে আসন্ন নির্বাচনের জন্য অন্তত ১৭০টি আসনে প্রার্থীর খসড়া তালিকা তৈরি করেছে। শীর্ষপর্যায়ের নেতা নাহিদ, জারা, আদিব, সামান্থা, নিভাস সহ আরও কয়েকজন ঢাকা ও আশপাশের আসন থেকে লড়বেন বলে জানা গেছে।
জোট প্রসঙ্গে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দলটি এখনো কোনো জোটে যোগ দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদি কোনো জোটে যেতে হয়, তা অবশ্যই নীতিগত কারণে হবে। জুলাই সনদ বা অন্যান্য সংস্কারমূলক উদ্যোগে যারা দেশের স্বার্থে দাঁড়াচ্ছে, তাদের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা হবে। তবে ইতিহাসে দায়িত্ব ও দায়ভার থাকা দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আমাদের অনেকবার ভাবতে হবে। আমরা নিজেদের শক্তিতেই দাঁড়াতে চাই।’
এদিকে বিএনপি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যাতে এনসিপি কোনোভাবেই জামায়াতের জোটে যোগ না দেয়। এজন্য ঢাকার বেশ কয়েকটি আসনসহ অন্তত ২০টি আসনে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘শুধুমাত্র কয়েকটি আসনের জন্য এনসিপি জোট করবে না। এটি নির্ভর করবে বেশ কিছু বিষয়ে—যেমন, যে রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে থাকা মৌলিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে, শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেবে, এবং কাজে ও কথায় মিল থাকবে, তাদের সঙ্গে আমাদের জোট হতে পারে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রতিশ্রুতি পেলে জোট হতে পারে, না পেলে শুধুমাত্র কয়েকটি আসনের জন্য জোট হবে না। এনসিপি একেকভাবে নির্বাচন করবে।’
দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যে দল সংস্কারের পক্ষে থাকবে, কেবল তারা এনসিপির সঙ্গে জোট করতে পারবে। জুলাই সনদ নিয়ে এখন আর কোনো বিতর্ক নেই। বিএনপি সব দেখে-শুনেই স্বাক্ষর করেছে।’
উল্লেখ, এর আগে নাহিদ ইসলাম জানিয়েছিলেন, এনসিপি কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করবে না এবং ডানপন্থা রাজনীতিতে এখনই যাবে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অবস্থানের কারণে এনসিপি শেষ পর্যন্ত জামায়াতের সঙ্গে জোট নাও গড়ে তুলতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন