শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের হাত ধরে দেশের সংস্কার ও রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রিক কাঠামোর পুনরুদ্ধার করাই এ সরকারের কাজ। সে পথেই হাঁটছেন ড. ইউনূস। এমনকি রোডম্যাপ দিয়েছেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের। সংস্কার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে গঠন করা হয়েছে ঐক্যমত কমিশন। তবে দলগুলো কমিশনে এক টেবিলে বসলেও রাজনৈতিক ময়দানে কাদা ছুড়াছুড়ি এখন দিনের আলোর মতোই পরিস্কার। রাজনৈতিক এমন মতভেদ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এই রাজনীতির ভবিষৎ নিয়ে।
১৯ অক্টোবর, জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম মন্তব্য করেন, সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে জামায়াত যে আন্দোলন করছে তা সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। শুধু তাই নয়, জুলাই আন্দোলনের আগে ও পরে জামায়াতে ইসলামী কখনোই সংস্কার-আলোচনায় অংশ নেয়নি বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। যা কেবল জামায়াত নয় বরং বাংলাদেশের পুরো রাজনৈতিক মহলেই নতুন সমালোচনার জন্ম দেয়।
২১ অক্টোবর, জামায়াত ইসলামী যেন নাহিদের সেই মন্তব্যেরই কড়া জবাব দিলেন। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার এনসিপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমরা নতুন ছাত্রদের দল। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে তোমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে। জন্ম নিয়েই বাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ো না।’
শুধু তাতেই ক্ষান্ত হননি গোলাম পরওয়ার বরং নাহিদের মন্তব্য উল্লেখ করে নিজেদের ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি একপ্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করেই বলেন, ‘তারা চাচ্ছেন, আমরা যেন তাদের সমালোচনা করি। এমনকি তিনি এনসিপির দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘কেউ তো তাদের নামই নেয় না। আমরাও আপনাদের এত আমলে নিই না।’
অন্যদিকে এনসিপি আর বিএনপির মধ্যেও চলে একপ্রকার স্যোশাল বাগবিতণ্ডা। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে অনুষ্ঠানস্থল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সংগঠিত আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ তাদেরকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে আখ্যা দেন।
সালাউদ্দীন আহমেদের এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ প্রদর্শন করে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ভুলবশত, হয়তো তার কাছে তথ্য না থাকার কারণে তিনি এ রকমটা বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন দেশে ছিলেন না। যেহেতু তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দেশে ছিলেন না, রাজপথে ছিলেন না, সেহেতু হয়তো তিনি জানেন না যে কে রাজপথে ছিল, কারা লড়াই করেছিল, কারা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল।’
দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর এই পাল্টাপাল্টি জবাবে কোন্দল যেন বেড়েই চলেছে।
কে কখন কীভাবে কার মন্তব্যের সমালোচনায় জড়াবেন দেশের চলমান পরিস্থিতিতে তা মূখ্য না হলেও বাংলাদেশের আপামর জনতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকমহল পর্যন্ত এখন একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—কোন ভবিষ্যতের দিকে মোড় নিচ্ছে বাংলাদেশের আগামী রাজনীতি? কবেই বা থামবে এই পারস্পরিক রেষারেষি, কোন ভোরের সূর্যদ্বয়ে এক কাতারে ঐকমত্য দেখাবে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি?
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন