বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ রোববার রাতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ থামাতে নিজেই উপস্থিত হন। এসময় তিনি সমাধানের চেষ্টা করেন। উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের তিনি শান্ত হতে বলেন এবং ফিরে যেতে অনুরোধ করেন।
রোববার রাতেই বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওর একটিতে দেখা যায়, হাসনাত আব্দুল্লাহকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছেন ছাত্ররা। এর ভেতর উত্তেজিত একদল শিক্ষার্থী ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান দেয়। কিন্তু এতেও দমে যাননি তিনি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কোনো নেতা বা শিক্ষক না গেলেও হাসনাত একাই সেখানে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও যান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডেইলি স্টার বাংলার এডিটর গোলাম মোর্তজা । হাসনাতের ভূমিকার প্রশংসা করে লিখেছেন -
সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর কথা শিক্ষার্থীরা শোনে নি,তাকে ‘ভুয়া’ বলেছে-ফেসবুকে অনেককেই এটা নিয়ে উল্লসিত হতে দেখা যাচ্ছে।
বেকুব কিসিমের ব্যার্থদের এই মনস্তত্ত্ব চিরন্তণ।অন্যকে বিশেষ করে তিনি যদি একটু খ্যাতিমান হয়ে যান,তাকে অসম্মান করা গেলে বা তাকে অসম্মানিত হতে দেখলে, বেকুবরা পুলকিত হয়।
হাসনাত আবদুল্লাহ করেছেন কী?
মাঝরাতে সংঘর্ষ চলছিল ঢাবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের।এই সংঘর্ঘ বাধার কোনো দায় হাসনাত আবদুল্লাহর নয়।সে দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝখানে উপস্থিত হয়ে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করেছে।তার জীবনের ঝুঁকি ছিল,বিক্ষুদ্ধ দুই পক্ষের মাঝে তার যে কোনো কিছু হয়ে যেতে পারতো।এটা সে জেনে বুঝেই সেখানে গেছে, দায়িত্বশীল আচরণ করেছে।
হ্যাঁ, বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের সে শান্ত করতে পারে নি।
কেউ কেউ তাকে আজেবাজে কথা বলেছে।তো এতে হাসনাত আবদুল্লাহর অপরাধটা কী?
ঝুঁকি নিয়ে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করতে যাওয়াটা তার অপরাধ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আরও অনেক ছাত্রনেতা, শিক্ষক ছিলেন। তারা এগিয়ে যান নি,এগিয়ে গেছেন হাসনাত আবদুল্লাহরা।এটাই দায়িত্বশীল নেতার কাজ,যা হাসনাত আবদুল্লাহ করেছে।
আপনি তাকে বাহবা না দিয়ে রসিকতা করছেন,পুলকিত হচ্ছেন।
কারণ হয়ত এই যে, আপনার ভেতরে ফ্যাসিস্ট-স্বৈরাচারের বীজ রয়ে গেছে!
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমও পাশে দাঁড়িয়েছেন হাসনাতের। মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন,
আশেপাশে এমন বহুত শত্রু আছে যারা সুযোগ পেলে খুন করে ফেলবে, এইটা জানার পরেও মবের মধ্যে ঢুকে মারামারি থামানোর কথা বলতে হেডম লাগে। অন্য কেউ এই সাহস করে নাই। সাহস করেছে Hasnat Abdullah । সাহসটা করার জন্যে হাসনাতকে মাথায় তুলে ফেলতে হবে সেটা বলছি না, তবে ন্যূনতম এপ্রিশিয়েটটা অন্তত করতে শিখেন। হয়তো ফলাফল প্রত্যাশিত হয়নি কিন্তু এর চেয়েও খারাপ কিছু হতে পারতো ৷ সবচেয়ে বড় কথা উদ্দেশ্য সৎ ছিল ৷
এই ছেলেটার সমস্যা হলো এর মাথা গরম আর সবসময় গ্রেটার পার্পেপেক্টিভ চিন্তা করে। কিন্তু সত্যি এটাই যে, মাথা গরম বলেই সেই জুলাইয়ে ভিসি চত্ত্বরে গায়েবানা জানাজা শেষে যখন সবাই পুলিশের টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড আর ছোররা বুলেটে দিকবিদিক ছুটে যাচ্ছিলো তখন এই ছেলেটা সর্বপ্রথম স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ওই পুলিশের দিকে দুই হাত প্রশস্ত করে এগিয়ে যায় আর বলে "we are open to killed" !
ঠিক যেমনিভাবে গতকাল গিয়েছিলো ৷ এই ছেলেটাই সেই জুলাইয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে রাজাকার রাজাকার মিছিলের সামনের সারিতে মাঝখানে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো, যখন অনেকেই নিজেকে সেফ জোনে রেখেছিলো৷ এই ছেলেটাই সর্বপ্রথম এবং একা সচিবালয়ে আনসারলীগের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে এবং পরবর্তীতে ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় সচিবালয় অনেকটা সুরক্ষিত হয়ে উঠে৷
এই মাথা গরম ক্ষ্যাপা ছেলেটার দোষ হচ্ছে যখনই কোথাও অস্থিতিশীল অবস্থা দেখা দেয়, ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায় তখনই এ কোনো কিছু চিন্তা না করে সমাধানের জন্য ছুটে যায় ৷ হোক সেটা ক্যাম্পাস, রাজপথ কিংবা অন্য কোথাও ৷
আপনারা যারা শুধু ঘরে বসে স্যোশাল মিডিয়ার ঝড় তুলতে পারেন তাদের মতো সেইফ গেম প্লে না করতে পারাটা হাসনাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা ৷ কিন্তু তিক্ত সত্য এটাই যে, এই মাথা গরম স্বভাবওয়ালা ক্ষ্যাপা তরুণ প্রজন্মের কারনেই এই নতুন বাংলাদেশ ৷
কতজনের এখন কতরকম স্বার্থ আর ধান্ধা সেটা আমরা বুঝি, অপ্রত্যাশিত কিছু হলে এরা যে আবার গর্তে যাবে সেটাও জানি ৷ কিন্তু দিনশেষে চোখের সামনে রক্ত আর হাজারো জীবনের বিনিময়ে অর্জিত নতুন স্বাধীনতা রক্ষা করতে হাসনাতরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ৷
আপনাদের মতো গুটিকয়েক ভন্ড, সুবিধাবাজ, কালপ্রিট কি বললো আর কি বিহেভ করলো তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না ৷ হাসিনার পোষারা এর চেয়ে কম বলেনি বা করেনি ৷
মিনিমাম কমনসেন্স থাকলে বোঝা উচিত কারা করসে, কেন করসে। রকেট সাইন্স না বোঝাটা।
We are Hasnat & proud to be a fellow-fighter of Hasnat.
ডি ইউ ইনসাইডার্স নামের ফেসবুক পেইজে হাসনাতকে নিয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো রূপালী বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য। মূল পোস্টটি মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ নামের ব্যক্তির।
গতকাল জরুরী কাজে হাসনাত আব্দুল্লাহদের অফিসে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি গাজীপুর থেকে আসা শ’খানেক উ`ত্তেজিত তরুণ বসা। হাসনাত ঠাণ্ডা মাথায় তাদের ব্রিফ করছে। তরুণদের দাবি দাওয়া নিয়ে হাসতে হাসতে কথা বলছে। তার পাঞ্চে তরুণরাও মুখের শক্তভাব কাটিয়ে হেসে উঠছে। বেশ জটিল একটা বিষয়ের সমাধান হলো হাসতে হাসতে।
এরমধ্যে চার মিনিট সময় চেয়ে নোট পাঠালাম। আমাদের আগে থেকে আরেকগ্রুপ বসে ছিল। তাদের সাথে দাঁড়িয়েই আলাপ শেষ করলেন। সালাম ও পরিচয় দিলাম। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করল। হাসিমুখে সমস্যা শুনল। খুব দ্রুত সেই সমস্যা সমাধানের জন্য একজনকে অ্যাসাইন করে দিল। চার মিনিটের কাজ আড়াই মিনিটে শেষ। আরও অনেকে এসেছিলেন তাদের সমস্যা নিয়ে। একে একে কথা বললেন। পাশাপাশি সহযোদ্ধা-বন্ধু-ছোট ভাইদের সাথে দুষ্টুমি চলছে। হাসিমুখ। ইউটিউবে গান বাজার মতো করে তার মোবাইল বেজে চলছে। একের পর এক ফোন। ছোট ছোট কথায় ফোনের কাজ সারছেন। টেক্সেটের রিপ্লাই দিচ্ছেন।
কাজ শেষ করে বাংলামোটর নেমে চা খেতে খেতে ভাবছিলাম, সমস্যায় ডুবে থাকা দেশের সমস্ত মানুষ এই কয়টা ছেলের কথা ভাবে। কী এমন বয়স?
জাফর ইকবালের ভাষায়, ‘এই বয়সের ছেলেরা প্রেম করবে, নাটক দেখবে, আলুটিলা পাহাড়ে ট্যুর দিবে, দোচোয়ানি খেয়ে প্রাক্তনকে গালাগাল করবে।’ অথচ এদের দেশ চালাতে হচ্ছে।
অল্প সময়ের দেখায় হাসনাতকে আমার ভদ্র, বিনয়ী ও হাসোজ্জ্বল এক যুবক মনে হয়েছে, যে এখনো তারুণ্যের আবহে ভরপুর। সারাদিন এত এত কাজ করার পর আবার তাকে রাতে ছুটে যেতে হচ্ছে ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মারামারি থামাতে। তাকেই যেতে হচ্ছে। কারণ দেশের কেউ কারো কথা শুনছে না। কেউ কাউকে মানছে না। এই কয়দিন আগে যারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক লক্ষ্যে লড়াই করেছে এখন তারা একে অপরকে মারছে।
সেই মারামারি থামাতে গিয়ে আহত হচ্ছেন হাসনাতরা। দেশের বড় একটা অংশের মানুষ তাদের পছন্দ করে না। যা তা বলে। বডি শেমিং করে। উঠতে বসতে গালাগাল করে। সরকার চাপ দেয়। বিরোধীদল চাপ দেয়। আগামীতে সরকারে আসবে, তারাও চাপ দেয়। জনতার চাপ তো আছেই।
সবার সব দাবি দাওয়া এখনই চাই, দিতে হবে। অথচ দীর্ঘদিন এই মানুষগুলোর কোনো অভাব ছিল। কোনো দাবি দাওয়া ছিল না। যেভাবে যা চলছিল তাই মেনে নিচ্ছিল।
কে জানে, কোনো এক সন্ধ্যায় বাসার ছাদে বসে ডুবতে থাকা সূর্যের দিকে তাকিয়ে এরা ভাববে, ‘কার জন্য এত কিছু করলাম? কেন করলাম?’ তারপর হয়তো সিমটা বন্ধ করে চলে যাবে আড়ালে। তখনও আপার লোকেরা বলবে, এত হাজার কোটি টাকা লুট করে ওরা ঘাপটি মেরে গেছে।
আর আমরা ফেসবুকে পোস্ট করব, যে দেশে গুণীর কদর নেই; সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না।
অথচ আমরা কেউ হাসনাতদের পাশে দাঁড়াব না। হাসনাতরা মাইর খেলে খুশি হবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মেঘমল্লার বসু হাসনাতকে নিয়ে লিখেছেন-
হাসনাত আব্দুল্লাহ কাল আসলেই চেষ্টা করসেন গণ্ডগোল ঠেকাতে, সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আজকের এই দিনটা আসতই না, যদি সেদিন `আনসার লীগ` দমনের জন্য ছাত্রদের তিনি না নামাইতেন। মব নামানো যায়, ওঠানো যায় না।
আমরা সবাই আমাদের কৃতকর্মের ফল পাচ্ছি, অথবা অদূর ভবিষ্যতে পাব।
আপনার মতামত লিখুন :