মেট্রোরেল সেবা নগরজীবনের কতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ তা ঢাকাবাসী এখন বেশ উপলব্ধি করতে পারছেন। বলা যায় বিশ্বের যেসব শহরে মেট্রোরেল রয়েছে সেখানে কর্মজীবীদের জীবন কিছুটা হলেও গতিময়। স্বল্প খরচে মুহূর্তে পৌঁছে যাওয়া যায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে; খরচ ও সময় দুই সাশ্রয়। মেট্রোর কারণে সেখানে যানজটও থাকে কম। এবার মেট্রোরেলের জগতে প্রবেশ করল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। দেশটির রাজধানী রিয়াদে চালু হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম চালকবিহীন মেট্রো। চলতি মাসের ১ ডিসেম্বর থেকে রিয়াদ মেট্রো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে। বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইতোমধ্যে নানা বৃহত্তর নগর উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সৌদি আরব। বিশেষত ‘দ্য লাইন’ ও ‘মুকাব’। এগুলো হলো দেশটির ভবিষ্যতের নগর পরিকল্পনার একেকটি আধুনিক মডেল। যেগুলোর মাধ্যমে অবকাঠামো আধুনিকীকরণ করার পাশাপাশি দেশটির অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে। দেশটির বৃহত্তর নগর উন্নয়ন ও আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে চালকবিহীন এই মেট্রো।
ইতোমধ্যে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০৩৪ বিশ্বকাপের একক আয়োজক হিসেবে সৌদি আরবের নাম ঘোষণা করেফে ফিফা। অবশ্য সে উপলক্ষে অনেক আগে থেকেই জোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দেশটি। ধারণা করা যায়, ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে সৌদিজুড়ে ফুটবলপ্রেমী দর্শক, সমর্থক ও ভক্তদের ঢল সামাল দিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে রিয়াদ মেট্রো। দেশটিতে বসবাসরত নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রাকে আরও সহজ ও গতিময় করার পাশাপাশি এই মেট্রো রেল ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপে দেশটির পরিবহন সেক্টরে বড় সহায়ক হবে।
আবার ফেরা যাক, রিয়াদ মেট্রোর মূল আলোচনায়। দেশটির শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রিয়াদ মেট্রোর ছয়টি রুটের মধ্যে ১ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে তিনটি খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে চতুর্থটি এবং পরবর্তীতে আরও দুটি রুট খুলে দেওয়া হবে। এর মোট দৈর্ঘ্য ১৭৬ কিলোমিটার (১০৯ মাইল) এবং এর মাধ্যমে রিয়াদের মূল প্রাণকেন্দ্র, ব্যবসায়িক কেন্দ্র এবং দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাতায়াত করা যাবে খুব সহজে। পুরোপুরি চালু হলে রিয়াদ মেট্রো নেটওয়ার্ক প্রতিদিন ৩.৬ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। এর ফলে শহরের যানজট অনেকটাই কমে যাবে। ফলে প্রতি বছর প্রায় ১২.৫ মিলিয়ন টন (প্রায় ১০.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন) কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনও কমবে। মোট ৮৫টি মেট্রো স্টেশন নিয়ে গঠিত মেট্রোর বহরে যাত্রী চলাচলের জন্য ৬৯টি অ্যালস্টম মেট্রোপলিস ট্রেন এবং ৪৭টি ইনোভিয়া মেট্রো ট্রেন ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত জাহা হাদিদ আর্কিটেক্টসের ডিজাইন করা কিং আবদুল্লাহ ফিন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট (কেএএফডি) মেট্রো স্টেশন। চোখ ধাঁধানো ডিজাইনে তৈরি এই স্টেশনের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, যেন যাত্রীরা খুব সহজে চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া, এই স্টেশনের বাইরের অংশটি নজরকাড়া ঢেউ খেলানো জালের মতো ডিজাইনে তৈরি; যা রিয়াদের তীব্র গরম থেকে যাত্রীদের কিছুটা আরামদায়ক পরিবেশ পেতে সাহায্য করবে। রিয়াদ মেট্রোর সব ট্রেনই চলবে বিদ্যুতে। অত্যাধুনিক ইঞ্জিন ও বগির ট্রেনগুলো তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- ফার্স্ট ক্লাস, ফ্যামিলি ক্লাস ও সিঙ্গেল ক্লাস। ট্রেনগুলোতে আরামদায়ক আসন, এলইডি লাইটিং, এয়ার-কন্ডিশনিং এবং একটি যাত্রী তথ্য ব্যবস্থা থাকবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনগুলো স্বয়ংক্রিয় এবং এগুলো আগে বুদাপেস্ট (হাঙ্গেরি), সিডনি (অস্ট্রেলিয়া) এবং তাইপেই (তাইওয়ান)-এর চালকবিহীন মেট্রো হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
এই প্রকল্পের জন্য রোলিং স্টক সরবরাহ করা সংস্থা অ্যালস্টম জানিয়েছে, চালকবিহীন এই ট্রেনগুলোর কার্যক্রম একটি অত্যাধুনিক সিগন্যালিং সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যা ট্রেনের দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলা-বন্ধ হওয়াসহ ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করে। পুরোপুরি এয়ার-কন্ডিশনড স্টেশনগুলোতে প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর রয়েছে। যাত্রীদের ভ্রমণকালীন সময় সর্বপ্রকার তথ্য দেওয়ার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সব বগির অভ্যন্তরে এবং প্ল্যাটফর্মে রয়েছে এলইডি স্ক্রিন ও লাউডস্পিকার সিস্টেম। যার মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তের ট্রেনের তথ্য পাবেন যাত্রীরা।
আপনার মতামত লিখুন :