ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫

যে আইন না মানলে গুনতে হয় কঠোর জরিমানা! 

এসএম শাফায়েত, ইউএই ব্যুরো
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৫, ০১:৩১ পিএম
সংযুক্ত আরব আমিরাত। ছবি- সংগৃহীত

সংযুক্ত আরব আমিরাতে গ্রীষ্মের তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে শ্রমিকদের সুরক্ষিত রাখতে গত ১৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে ‘মধ্যাহ্ন কর্মবিরতি’ কার্যক্রম। মানবসম্পদ ও আমিরাত মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত এই কর্মসূচি চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত। প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চালু থাকা এই নিয়ম দেশটির শ্রমনীতি ও মানবাধিকার রক্ষার অন্যতম সফল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মধ্যাহ্ন কর্মবিরতির আওতায় প্রতিদিন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে কাজ নিষিদ্ধ। এই সময়কালে নির্মাণ খাতসহ বিভিন্ন খোলা জায়গায় কর্মরত শ্রমিকদের কাজে বিরতি দিতে হবে। নিয়োগকর্তাদের বাধ্যতামূলকভাবে বিশ্রামের জন্য ছায়াযুক্ত ও শীতল স্থান, পানীয় জল, ইলেকট্রোলাইট, এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সরবরাহ করতে হয়।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব। প্রতিকূল আবহাওয়ায় কাজ বন্ধ রেখে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।’

মধ্যাহ্ন কর্মবিরতির নিয়ম লঙ্ঘন করলে নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শ্রমিক প্রতি ৫,০০০ দিরহাম পর্যন্ত জরিমানা এবং সর্বোচ্চ ৫০,০০০ দিরহাম পর্যন্ত আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে যদি একাধিক শ্রমিকের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়।

মোহরের পক্ষ থেকে সারা দেশে বিশেষ তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের পরিদর্শনের পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপ ও হটলাইনেও জনগণকে নিয়ম ভঙ্গের তথ্য জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে কিছু বিশেষক্ষেত্রে এই কর্মবিরতির নিয়মে ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। যেমন- রাস্তা নির্মাণ, আসফল্ট ঢালা, পানি বা বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত জরুরি মেরামত, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, এবং জরুরি সরকারি সেবার কাজে এই সময় কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এসব কাজের জন্য পূর্বানুমোদন ও শ্রমিক সুরক্ষার অতিরিক্ত ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।

এ ছাড়াও গত কয়েক বছরে ডেলিভারি কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই খাতে কর্মরতদের সুরক্ষার বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। এ কারণে এ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতজুড়ে ১০ হাজারেরও বেশি ‘কুলিং রেস্ট স্টেশন’ স্থাপন করা হয়েছে যেখানে কর্মীরা এই মধ্যাহ্ন বিরতির সময় বিশ্রাম নিতে পারছে। এই রেস্ট স্টেশনগুলোতে ফ্রি পানীয় জল, ছায়াযুক্ত বসার স্থান, ঠান্ডা বাতাস ও প্রাথমিক চিকিৎসার সুবিধা রাখা হয়েছে। যার সঙ্গে ডেলিভারি কোম্পানিগুলো এই উদ্যোগে অংশ নিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সুপারিশ অনুসরণ করে আমিরাত সরকার প্রতি বছর এই কর্মসূচিকে উন্নত করে যাচ্ছে। কর্মস্থলে তাপমাত্রা নিরীক্ষণ, রোস্টার অনুযায়ী কাজ ভাগ করে দেওয়া, এবং হিট স্ট্রোক বা ক্লান্তিজনিত অসুস্থতার সময় জরুরি সাড়াদানের ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়াও নতুন একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে যেখানে প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজেদের কর্মীদের কাজের সময় ও স্বাস্থ্যবিষয়ক ব্যবস্থা নিয়মিত আপলোড করতে বাধ্য থাকবে।

নির্মাণ শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে দুপুরে রোদে কাজ করতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়তাম। এখন এই বিরতির সময় বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাই। এটা আমাদের শরীরের জন্য খুব দরকারি।’

মোহরের প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যাহ্ন কর্মবিরতিতে ৯৯% প্রতিষ্ঠান নিয়ম মেনে চলেছে। এটি একটি রেকর্ড পর্যায়ের সফলতা, যা দেখায় যে সরকার ও জনগণ উভয়ের মধ্যেই শ্রমিকদের প্রতি দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা বেড়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যাহ্ন কর্মবিরতি শুধু একটি শ্রমনীতি নয়, বরং মানবিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণের প্রতিফলন। এ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমিরাতকে একটি মানবিক ও দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে তুলে ধরছে। ২১তম বছরে পদার্পণ করা এই কর্মসূচি প্রমাণ করে, শ্রমিক সুরক্ষা কেবল আইনি বাধ্যবাধকতা নয়, এটি একটি জাতীয় অগ্রাধিকার।