ঢাকা সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

ইসলামে মায়ের মর্যাদা ও অধিকার

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম
প্রতীকী ছবি

পৃথিবীতে নি:স্বার্থ ভালোবাসা ও সম্পর্ক বলতে যদি কিছু থাকে; তবে তা একমাত্র মায়ের ভালোবাসা। মা সন্তানকে বহু কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেন, তীব্র কষ্ট সহ্য করে জন্মদান করেন। এরপর দুই বছর স্তন্যদান করেন, কোলে-পিঠে বড় করেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মা ও বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে মায়ের কষ্ট ও পরিশ্রমের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আমি মানুষকে তার মা-বাবার ব্যাপারে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার মা-বাবার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই। (সুরা লুকমান: ১৪)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আমি মানুষকে তার মা-বাবা প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। (সুরা আহকাফ: ১৫)

মায়ের অপরিসীম অনুগ্রহ ও কষ্টের ঋণ শোধ করার সামর্থ্য কোনো সন্তানের নেই। পৃথিবীতে সন্তানের জন্য মায়ের চেয়ে বেশি আপন ও নিঃস্বার্থ কল্যাণকামীও আর কেউ নেই। তাই সন্তানের কর্তব্য মায়ের নেক নির্দেশ মেনে চলা, তাকে খুশি ও সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা, কোনোভাবেই তাকে কষ্ট না দেওয়া। মা ও বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্ট হন, তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অষন্তুষ্ট হন। 
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, বাবা-মায়ের সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি, তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (সুনানে তিরমিজি)

কোরআনে আল্লাহ তাআলা নিজের ইবাদতের সাথে যুক্ত করে মা ও বাবার প্রতি উত্তম আচরণ ও ইহসানের আবশ্যকীয়তা বর্ণনা করেছেন। বাধ্যক্যে উপনীত বাবা-মায়ের সেবা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের কোনো আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করতেও নিষেধ করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং বাবা-মায়ের সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। তাদের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন’। (সুরা ইসরা: ২৩, ২৪)

কোরআন ও হাদিসে বাবা ও মা দুইজনের প্রতিই সদাচরণ করার নির্দেশ এসেছে গুরুত্বের সাথে। তবে কোরআনে আল্লাহ তাআলা যেমন মায়ের কষ্টের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, একাধিক হাদিসে নবিজি (সা.) মায়ের প্রতি সদাচরণকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কছে এল এবং প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা। (সহিহ মুসলিম)

আরেকটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের ব্যাপারে তাকিদ করেন—তিনবার। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের বাবার ব্যাপারে তাকিদ করেন—দুইবার। আর আল্লাহ তাআলা তোমাদের নিকটাত্মীয়দের ব্যাপারে তাকিদ করেন—ক্রম অনুসারে। (আলবানি ফি সহিহিল জামে’)

এই দুটি হাদিস থেকে বোঝা যায়, মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার ও সদাচরণের গুরুত্ব বেশি। সন্তানের সদাচরণে মায়ের প্রাপ্য অংশ বাবার চেয়ে তিনগুণ বেশি।