২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইসলাম বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই সময়কালে বিশ্বজুড়ে মুসলিম জনসংখ্যা ৩৪৭ মিলিয়ন বেড়ে ২ বিলিয়নে পৌঁছেছে—যা অন্যান্য প্রধান ধর্মের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি।
একই সময়ে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা ১২২ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়ে ২.৩ বিলিয়নে দাঁড়ালেও বৃদ্ধির হারে তা মুসলিম জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম।
পরিসংখ্যান যা বলে
পিউ রিসার্চ সেন্টার বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯৯.৯৮% কভার করে ২০১টি দেশ ও অঞ্চলে গবেষণা পরিচালনা করে। এতে দেখা গেছে, মুসলমানদের সংখ্যা যেখানে বেড়েছে ৩৪৭ মিলিয়ন, সেখানে বাকি সব ধর্মের সম্মিলিত বৃদ্ধি মাত্র ২৪৮ মিলিয়ন।
২০১০ সালে মুসলমানরা ছিল বিশ্ব জনসংখ্যার ২৩.৯% এবং খ্রিষ্টানরা ৩০.৬%। ২০২০ সালে এই অনুপাত দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২৫.৬% এবং ২৮.৮%-এ। অর্থাৎ মুসলিম ও খ্রিষ্টান জনসংখ্যার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই কমছে।
বৌদ্ধদের জনসংখ্যা এ সময় ১৯ মিলিয়ন হ্রাস পেয়ে ৩২৪ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে—এটি একমাত্র ধর্ম যার অনুসারী সংখ্যা কমেছে।
বৃদ্ধির মূল কারণ
ইসলামের এই বিস্তারের প্রধান কারণ জনসংখ্যাগত প্রবণতা। পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, মুসলিম নারীদের গড় প্রজনন হার ২.৯, যেখানে অমুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে এটি ২.২। পাশাপাশি মুসলিম জনসংখ্যার গড় বয়স ২৪ বছর—যা অমুসলিমদের তুলনায় (৩৩ বছর) অনেক কম। তরুণ ও অধিক সন্তানপ্রসূ জনগোষ্ঠী ইসলামের বৃদ্ধিকে গতিশীল করছে।
ধর্মান্তরকরণের দিক থেকেও ইসলাম এগিয়ে। গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি একজন মুসলিম যিনি ধর্ম ত্যাগ করেছেন, তার বিপরীতে তিনজন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। যদিও সামগ্রিকভাবে ইসলাম গ্রহণ ও ত্যাগের হার তুলনামূলকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ।
ভৌগোলিক বিস্তার
২০২০ সালে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মুসলমানদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১.২ বিলিয়ন। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ছিল ৪১৪ মিলিয়ন, উপ-সাহারান আফ্রিকায় ৩৬৯ মিলিয়ন। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় মুসলিম সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও বৃদ্ধির হার অমুসলিমদের চেয়ে বেশি।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার দেশগুলো হলো—ইন্দোনেশিয়া (২৩৯ মিলিয়ন), পাকিস্তান (২২৭ মিলিয়ন), ভারত (২১৩ মিলিয়ন), বাংলাদেশ (১৫১ মিলিয়ন)। মোট ৫৩টি দেশ ও অঞ্চলে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
অন্যান্য ধর্মের অবস্থা
ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন গোষ্ঠী ২৭০ মিলিয়ন বেড়ে প্রায় ২ বিলিয়নে পৌঁছেছে। এর মধ্যে চীনে বসবাসকারী লোকজন সংখ্যাগরিষ্ঠ। খ্রিষ্টধর্মে প্রতি একজন নতুন অনুসারীর বিপরীতে তিনজন ধর্মত্যাগ করেছেন। হিন্দুধর্ম ১২৬ মিলিয়ন বেড়ে ১.২ বিলিয়নে পৌঁছালেও বিশ্ব জনসংখ্যায় অনুপাত অপরিবর্তিত থেকেছে। ইহুদি ও অন্যান্য ধর্ম, যেমন শিখ ও বাহাই মিলিয়ে বিশ্বের প্রায় ২.৪% জনসংখ্যা ধারণ করে।
ফলাফল ও ভবিষ্যৎ
মুসলিম জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও অবকাঠামোর ওপর নতুন চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে, বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে।
ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় এই বৃদ্ধির ফলে ধর্মীয় সহাবস্থান, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নতুন নীতিগত আলোচনার সূচনা হচ্ছে।
অধিক জনসংখ্যা একদিকে মুসলিম-অধ্যুষিত দেশগুলোর জন্য চাপ তৈরি করলেও অন্যদিকে তরুণ জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এক বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। সঠিক নীতিমালা ও শিক্ষানীতির মাধ্যমে এই সম্ভাবনাকে ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তর করা যেতে পারে।
সূত্র: নিউজ উইক, মিডল ইস্ট, পিউ রিসার্চ সেন্টার

 
                             
                                    
                                                                 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন