প্রতিশ্রুতি রক্ষা আমাদের দায়িত্ব

জামিল আহমদ

প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ১২:৫৪ এএম

প্রতিশ্রুতি রক্ষা আমাদের দায়িত্ব

ছবি: সংগৃহীত

আমরা সমাজবদ্ধভাবে বাস করি। তাই বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন বিষয়ে নানা অজুহাতে, স্বেচ্ছায়, অনিচ্ছায় একে অপরের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দেই। চাই তা লেনদেনের ক্ষেত্রে হোক আর কাজের ক্ষেত্রেই হোক। 

যখন কোনো প্রতিশ্রুতি করা হয়, তখন তা মুমিন ব্যক্তির জন্য পালন করা অত্যন্ত আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। কারণ মুমিনের জীবনে প্রতিশ্রুতি পালন করার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রকৃতপক্ষে নৈতিক উন্নতি ও উত্তম আচরণের মূল ভিত্তি হচ্ছে তাকওয়া। আর আল্লাহর ভয়ই মানুষকে প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে আগ্রহী করে তোলে।

তাই প্রতিশ্রুতি সৃষ্টির সঙ্গে হোক আর স্রষ্টার সঙ্গে হোক তা পূর্ণ করা আবশ্যক ও ফজিলতপূর্ণ কাজ। পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ দুনিয়ার স্বার্থে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদের নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছেন। পাঁচ ধরনের ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। 

তাহলো- প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীর জান্নাতের নেয়ামতে কোনো অংশ নেই। অতএব সামান্য কয়েকটি মুহূর্তের দৃশ্যমান আনন্দের জন্য, মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কোনো অবস্থাতেই ভুলেও না, কখনো অযথা অঙ্গীকার করা সমীচীন হবে না।

প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা মুমিনের বিশেষ গুণ। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে কোনো মুসলিম পরিপূর্ণ ইমানদার হতে পারে না। রাসুল (সা.) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীকে মুনাফিক অবহিত করেছেন। 

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করাকে ইসলামি শরিয়তে কবিরা গুনাহ বলা হয়েছে। আল্লাহ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারীদের ব্যাপারে অনেক সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি রক্ষাকে মুত্তাকি বান্দাদের গুণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। 

আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো, নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে (কিয়ামতের দিনে) তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৪)

রাসুল (সা.) প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতিগত, আন্তর্জাতিকসহ সব ক্ষেত্রেই কারো সঙ্গে কোনো বিষয়ে প্রতিশ্রুতি করলে তা পালনের জন্য অধীর থাকতেন। সর্বদা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেন। কখনো প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করতেন না। সামান্য বিষয়ে প্রতিশ্রুতি করলে তাও রক্ষা করতেন। উম্মতকেও প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য আদেশ দিয়েছেন তিনি।

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম শিক্ষা হলো নিজেদের অঙ্গীকারগুলোকে যেন পূর্ণ করা হয়। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অঙ্গীকারগুলোর বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। 

আল্লাহ আমাদের অঙ্গীকার পালনের যে নির্দেশ দিয়েছেন, এ নির্দেশের মাঝে সব অঙ্গীকার যেমন ক্রয়-বিক্রয়সংক্রান্ত অঙ্গীকার, অংশীদারভিত্তিক অঙ্গীকার, শপথের প্রতিশ্রুতি, দৃষ্টির প্রতিশ্রুতি, শান্তিচুক্তি এবং বিয়ের অঙ্গীকার প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত।

আজকাল যত ধরনের ঝগড়া-বিবাদ, ফ্যাসাদ ও নৈরাজ্য সংঘটিত হচ্ছে এর মূল কারণ হচ্ছে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা। মানুষ মুখে বলে একটা আর করে আরেকটা। কথা এবং কাজে যেহেতু মিল নেই, তাই ঝগড়া-বিবাদ পিছু ছাড়ে না।

হুদাইবিয়ার সন্ধির একটি অংশ এটাও ছিল, কোনো মুসলমান পালিয়ে মদিনাতে চলে গেলে তাকে ফেরত পাঠানো হবে। এই অংশের ওপর মুসলমানরা সন্ধি বাস্তবায়নের আগেই তা পালন করে দেখিয়ে দিয়েছিল আর মক্কা থেকে পালিয়ে আগমনকারী আবু জানদালবে দ্বিতীয়বার তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, তাকে আবার কষ্টদায়ক বন্দিদশায় ঠেলে দেয়। 

এভাবে বিশ্বনবি ও শ্রেষ্ঠনবি (সা.) অঙ্গীকার রক্ষা করে তার উম্মতের জন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে অঙ্গীকার রক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে তা নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দিন।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!