শনিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৫, ১০:০৩ এএম

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ফেসবুকে যা বললেন গুলতেকিন

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৫, ১০:০৩ এএম

হুমায়ূন আহমেদ ও গুলতেকিন খান। ছবি- সংগৃহীত

হুমায়ূন আহমেদ ও গুলতেকিন খান। ছবি- সংগৃহীত

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন খান শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে নিজের ফেসবুক পেজে একটি আবেগঘন ও ব্যক্তিগত স্ট্যাটাস প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি অকপটে তুলে ধরেন তাদের দাম্পত্য জীবনের কিছু অপ্রিয় অধ্যায়ের কথা।

বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রে কাটানো এক শীতার্ত রাতের নির্মম ঘটনার বর্ণনা ছিল পোস্টটির সবচেয়ে আলোচিত অংশ- যেখানে তিনি জানান, কীভাবে তাকে সেই রাতে ঘরের দরজা থেকে ঠেলে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

স্ট্যাটাসে গুলতেকিন শুধু অতীতের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতাই শেয়ার করেননি, বরং নিজের মেয়ে নোভাকে ঘিরে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথাও জানান। তার লেখায় মিশে ছিল এক জননী, একজন নারী এবং একজন সাহসী মানুষের কণ্ঠস্বর- যিনি অতীতকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

নিচে তার ফেসবুক পোস্টটি রূপালী বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

এই সত্যি কথাগুলো আমি লিখেছি শুধুমাত্র কিশোরী, তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্যে।

এত ব‍্যক্তিগত ঘটনা লিখেছি কারণ আর কোনো মেয়ে আমার (পুরো বিয়েটাতে আমার চেয়ে অভিভাবকদের বেশি ভুল ছিল।) মতো ভুল যেন না করে।

জুন মাসের ৬ তারিখ ছিল রোববার। শীলাকে যেমন হাসতে হাসতে বলেছিলাম প্রায় একইভাবে ইকবাল ভাইকেও জানালাম।

ড. ইয়াসমীন হক তার পরিচিত কয়েকজন lawyer আমার বাসায় পাঠান। তাদের একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ব‍্যাংকে টাকা-পয়সা কেমন আছে?

আমি বলি, কার ব‍্যাংকে?

আপনাদের জয়েন্ট account-এ?

আমাদের তো কোনো জয়েন্ট account নেই!

ব‍্যাংকে হুমায়ূন আহমেদের কত টাকা আছে?

সেটা তো আমি জানি না

তখন উনি upset হয়ে বলেন, কিছু একটা বলেন?

আমি বলি, একজন মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে!

কী ধরনের সম্পর্ক?

: যতদূর জানি সব ধরনের সম্পর্ক। উনি নিজেই আমাকে জানিয়েছেন! আমি বাকি কারো নাম বললাম না! তারা এখন বিয়ে করে শান্তিতে আছেন। কী দরকার তাদের নাম বলার!

Lawyer-রা দখিন হাওয়ায় (আমার ফ্ল্যাটে যেখানে আমার মৌখিক agreement নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ থাকছিলেন) সেখানে যান। এবং চলেও আসেন আমার কাছে। একজন বলেন, তিনি তো কয়েকটি বই দেখান যেখানে আগে থেকেই আন্ডারলাইন করা ছিল।

: হোটেল গ্রেভার ইন, মে ফ্লাওয়ার আরও কিছু বই। আপনি নাকি অনেক আগে থেকেই ডিভোর্স চাচ্ছিলেন?

: ওগুলো সত্যি না। ডিভোর্সের নিয়ম আমি এখনো জানি না! অ্যামেরিকাতে কীভাবে জানব? ‘হোটেল গ্রেভার ইনে’ ওসব বানিয়ে লেখা! তার আত্মজীবনীমূলক বইয়ে অনেক কিছুই তার কল্পনা থেকে লেখা। ঐসব বই লেখার সময় আমি তাকে বারবার বলেছিলাম ওসব না লিখতে! কিন্তু উনি আমাকে তখন বলেছিলেন, একদম সত্যি হচ্ছে জলের মতো, কোনো স্বাদহীন, তাই কিছু মিথ‍্যা থাকলে লোকজন পড়ে মজা পাবে! আমি শুধু তার পায়ে ধরা বাকি রেখেছিলাম। বারবার বলেছি, আমার সম্পর্কে কিছু না লিখতে। আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাইনি! ওর তখন খারাপ একটি সময় যাচ্ছিল, নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডির জন্যে একটি পরীক্ষা হয় যার নাম কিউমিলিয়েটিভ, সেখানে দশ নাম্বার থাকে। পরীক্ষার জন‍্যে সম্ভবত দুই বছর সময় থাকে। সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষা হয় এবং দশের মধ‍্যে তিনটিতে ২ নাম্বার পেতে হয়, বাকি গুলো ১ নাম্বার পেলেই হয়। কিন্তু সে অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েও একটিতেও ২ নাম্বার পায়নি তখনো। এটা নিয়ে তার মধ্যে ফ্রাস্ট্রেশন কাজ করছিল। তা ছাড়া তিনি রেগে গেলেই বলতেন, বাসা থেকে বের হয়ে যাও। সেদিনও পরীক্ষায় ১ পেয়ে মেজাজ খুব খারাপ ছিল। বাসায় এসেই অকারণে রাগারাগি শুরু করে। এবং একপর্যায়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে যাও!

: আমি বলি কোথায় যাব?

: উনি বলেন যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও! আমাকে চুপচাপ কাঁদতে দেখে আরও রেগে যান এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। আমার গায়ে তখন একটি শার্ট এবং প‍্যান্ট, পায়ে স্পন্জের স‍্যান্ডেল ছিল। আর বাইরে ডিসেম্বর মাসের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা! আমি শীতে কাঁপতে কাঁপতে দরজা ধাক্কা দেই আর বলি, দরজা খোলো প্লিজ, কলিংবেল বাজাতে থাকি কিন্তু দরজা খুলে না। বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার হাত পা প্রায় জমে যায়! তখন দৌড়াতে থাকি। আমাদের বাসার কাছে একটি দোকান ছিল। একজন আমেরিকান বৃদ্ধা মহিলা তার বিশাল ড্রয়িং রুমকে নানারকম মসলা, আচার, হারবাল জিনিস দিয়ে দোকান বানিয়েছিলেন। নাম ছিল ‘টচি’। আমরাও ওখান থেকে মসলা কিনতাম এবং প্রায়ই যেতাম নতুন কোনো মসলার খোঁজে! এমনিতে কাছেই মনে হতো কিন্তু সে শীতের সন্ধ্যায় যেন দোকানটি বাসার কাছে ছিল সেটি মনে হলো বহু দূরে চলে গেছে! শেষ পর্যন্ত টচি পৌঁছেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। মনে হলো স্বর্গে ঢুকেছি! বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করলাম, আমি একটি ফোন করতে পারি কি না! টাকা পরে দেব! উনি বললেন, টাকা লাগবে না, তুমি ফোন করো। তিনি আমার প্রাইভেসির জন‍্যে একটু দূরে সরে গেলেন। আমার একমাত্র মুখস্ত নাম্বারে ফোন করলাম ।

: এ‍্যান, আমি টিংকু বলছি।

: কী হয়েছে টিংকু, এমনভাবে কথা বলছো কেন?

: এ‍্যান, তুমি কি আমাকে একটু তুলে নিতে পারবে?

(এ‍্যানের ছেলে এ‍্যারোনকে আমি বেবিসিট করি। কিন্তু আমরা ভালো বন্ধুও)

ওকে ঠিকানা বলি।

এ‍্যান চলে আসে। আমি টচির বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে ওঠি। ও আমাকে একটি জ‍্যাকেট দেয়। আমি ভাবি, ও কেমন করে জানল যে আমার গায়ে জ‍্যাকেট নেই?

ওর বাড়িতে যেতে যেতে সবকিছু বলি ওকে।

বাসায় পৌঁছে এ‍্যান আমাকে একটি রুম দেখিয়ে বলে, এখন তুমি ঘুমাও তো!

সারা দিন কাজ করার ক্লান্তি, বাসা পরিষ্কার, রান্না কত কী করেছি! কোনো কিছুতেই ঘুম আসে না! ভয়ে, উৎকণ্ঠায় এতক্ষণ কাঁদতেও পারিনি! বালিশে মাথা রাখতেই ঝর্নার মতো দু’চোখের জলে বালিশ ভিজে গেল! নোভার কথা ভেবে কষ্ট গলার ভেতর আটকে গেল! এখানে আমার মা-বাবা, ভাই-বোন, কোনো আত্মীয়স্বজন নেই! কি করে সে পারল এমন করতে? সারা রাত কাঁদতে কাঁদতে কাটল।

বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আমি বসে থাকি।

এ‍্যান আর স্টেইনলি নাস্তার টেবিলে এসে বসে।

আমিও বসি ওদের সঙ্গে। 

টেবিলে এ‍্যান বলে, কি ঠিক করলে?

: কী বলছ, এ‍্যান?

: লয়্যারের সঙ্গে কথা বলবে না? একবারে ডিভোর্স পাঠাতে বলবে?

আমি ভয়ে আঁতকে উঠি!

না, না। হুমায়ূন আমাকে অনেক ভালোবাসে! রাগের মাথায় ওসব করেছে!

তুমি আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসতে পারবে? নোভার জন‍্যে খুব মন খারাপ লাগছে!

ওরা দু’জন অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকে।

বাসায় ঢুকেই আমি নোভাকে কোলে নিয়ে দুতালায় যাই। বিছানায় বসে নোভাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদতে থাকি।

আর বলি, নোভাকে আমার বোকামি করতে দেব না। ওর হাজবেন্ডের যেন সাহস না হয় ওকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেবার!

আমার চোখের সামনে অসংখ‍্য ছবি দেখতে পাই যেখানে একটি ১৮-১৯ বয়েসের তরুণী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এবং একজন হুমায়ূন আহমেদ তাকে যা ইচ্ছে তা বলে বকছে।

আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ইয়াসমীনের পাঠানো ঐ লয়‍্যারকে জিজ্ঞেস করতে ‘আসলে তখনই নোভাকে নিয়ে দেশে ফিরে ঐ ভদ্রলোককে ডিভোর্স দেওয়া উচিত ছিল, তাই না?’ কিন্তু পারিনি!

Link copied!