মঙ্গলবার, ০৬ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাহীন করিম (ঢাকা) ও হাসানুর রহমান তানজির (খুলনা)

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৪, ১২:৩৬ এএম

গাফিলতিতে ধ্বংস দাদা ম্যাচ

শাহীন করিম (ঢাকা) ও হাসানুর রহমান তানজির (খুলনা)

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৪, ১২:৩৬ এএম

গাফিলতিতে ধ্বংস দাদা ম্যাচ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

একসময় দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি ও সুনাম ছিল দাদা ম্যাচের (দেশলাই)। ক্রমাগত লোকসানের ফলে ২০১০ সালে বন্ধ হয়ে যায় খুলনার ঐতিহ্যবাহী দাদা ম্যাচ ওয়ার্কস (ফ্যাক্টরি)। প্রায় ১৪ বছর ধরে বন্ধ থাকা কারখানাটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে। চালু করা তো পরের কথা, সরকারি-বেসরকারি মালিকানার ওই বিশাল স্থাপনায় কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নেই। 

সরকারিভাবে ২০১১ সালে সিলগালা করা হলেও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির বেশিরভাগ দামি যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য মালামাল ইতোমধ্যে হয়ে গেছে লুটপাট ও চুরি। বিশেষ করে ২০২০ সালে পুলিশ পাহারা তুলে নেওয়ার পর থেকে অরক্ষিত কারখানাটিতে শুরু হয় লুটপাটের মহোৎসব। 

সীমানা প্রাচীর ভেঙে রাস্তা তৈরি করে ট্রাক ও পিকআপ ভাড়া করে প্রকাশ্যে মূল্যবান যত্রাংশ নেওয়া হয়। টিনের চাল ও দেয়ালের ইটও খুলে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া নির্জন স্থাপনাটি পরিণত হয়েছে মাদক সেবনসহ অপরাধের আখড়ায়। চোর চক্রের মধ্যে দ্বন্দ্বে গত বছর ঘটেছে হত্যাকাণ্ড। সরকারি কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও উদাসীনতায় এক ধরনের হরিলুট চলছে। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কারখানাটির পুরোনো শ্রমিকরা।

তারা জানান, ঐতিহ্যবাহী দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির মালামাল সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা খুলনা জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় থানা পুলিশ এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। প্রয়োজনীয়, কার্যকর কিংবা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা শিল্প মন্ত্রণালয় কিংবা তার অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। 

তাদের অবহেলা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে এক যুগের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে কারখানাটি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এটি দখলের পাঁয়তারা করেন কতিপয় কথিত শ্রমিক নেতাসহ সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। তারা শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে তোলেন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

রূপসাবাসীসহ শ্রমিকদের দাবি, কারখানা নদীতীরবর্তী হওয়ায় বহুমাত্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে এখন আধুনিক মানের ফয়েল প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি (মোড়কজাত), শিল্পপার্ক করে সময় উপযোগী শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারে সরকার ও বেসরকারি কোম্পানিটি। 

বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কারখানার বেশিরভাগ অংশের মালিক কোম্পানির কাছে পুরোটা হস্তান্তর করতে পারে। কারণ বিগত ১৪ বছরেও কারখানা চালু করতে পারেনি সরকারি কর্তৃপক্ষ। পুরোনো কিছু শ্রমিক পরিবার এখনো আশায় বুক বেঁধে আছে এখানে আধুনিক মানের শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। শ্রমিকেরাও পাবে কাজের সুযোগ। পাশাপাশি জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখতে পারে। 

এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা ম্যাচের জায়গায় লজিস্টিক সাপোর্টসহ একটি আধুনিক জেটি নির্মাণ ও খুলনা ফ্যাক্টরিতে একটি আধুনিক ফয়েল প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি (মোড়কজাত) করার প্রকল্প প্রস্তাব তিন বছর আগে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বেসরকারি শেয়ারহোন্ডার কোম্পানি। তবে এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো সিন্ধান্ত দিতে পারেনি মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, ঢাকা ম্যাচ ও দাদা ম্যাচ নামের ফ্যাক্টরি বা কারখানা দুটি ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ সালে বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতির আওতায় এটি করা হয়। এই কোম্পানির ৭০ শতাংশের মালিকানা দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী ভাইয়া গ্রুপের। আর বাকি মাত্র ৩০ শতাংশের মালিকানা শিল্প মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন শেয়ারের প্রতিনিধিত্বে তার অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। 

১৯৫৫-১৯৫৬ সালে গেওয়া কাঠের ওপর নির্ভর করে খুলনার রূপসা নদীর তীরে ১৭.৩৫ একর জমির ওপর দাদা ম্যাচ ওয়ার্কস বা ফ্যাক্টরির যাত্রা শুরু হয়। এর মালিকানায় ছিল পাকিস্তানি দাদা গ্রুপ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতীয়করণ করা হয়। ঢাকা ম্যাচ ও খুলনার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পরিচালনা করে সুইডিশ একটি কোম্পানি। 

পুরোনো মেশিনারিজসহ অব্যাহত লোকসানের ফলে ১৯৯৩ সালে সুইডিশ কোম্পানি তাদের ৭০ শতাংশ মালিকানা বিক্রি করে দেয়, যা সাফ কবলামূলে কিনে নেয় ভাইয়া গ্রুপ। সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় ২০১০ সাল পর্যন্ত চলে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি। 

উপর্যুপরি লোকসান ও কথিত শ্রমিক নেতাদের ষড়যন্ত্রের কারণে ২০১০ সালে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পরে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়ে চলতি মূলধনের জন্য একাধিক আবেদন করেও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা না করে ২০১১ সালের মার্চ মাসে সিলগালা করে দেয় সরকারি কর্তৃপক্ষ। সেই সময় থেকে মালামাল সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় খুলনা জেলা প্রশাসনকে।

দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ধ্বংস ও নিরাপত্তাহীনতা প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সিলগালা করার পর প্রথমে খুলনা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকায় পুলিশ পাহারা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ডিসি সারেন্ডার করে, আর নিরাপত্তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ কারণে দাদা ম্যাচ কারখানায় সমস্যা দেখা দেয়। 

তিনি আরও বলেন, ‘দাদা ম্যাচ ও ঢাকা ম্যাচ কারখানা দুটির বিষয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপরই বাস্তবসম্মত ও আইনানুগ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতা, সিদ্ধান্তহীনতা ও গাফিলতির অভিযোগ সঠিক নয় বলেও দাবি করেন সচিব জাকিয়া সুলতানা।

১৪ বছর ধরে বন্ধ, ধ্বংস দাদা ম্যাচ কারখানা: গত ২৮ অক্টোবর রূপসায় অবস্থিত কারখানায় সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার বাউন্ডারি দেয়াল ভাঙা আর প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে বাধে ভূতুড়ে পরিবেশ। শরীর ছমছম করে উঠবে যে কারো। মনে হবে যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো ধ্বংসাবশেষ। 

যেখানে বড় বড় মেশিন রাখা ছিল সেই কক্ষগুলো পুরোটাই ফাঁকা। ভিতরে একেবারে শুনসান নীরবতা। সামনে এগুতেই কানে শব্দ আসে লোহা পেটানো। কিছু মধ্য বয়সের কিছু ছেলে বয়লারে ট্যাংক ভাঙার চেষ্টা করছে।  প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা সটকে যায়। তাদের অনুসরণ করতে গিয়ে চোখে বাধে জানালাার গ্রিল ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশের অংশ। 

টুটপাড়া মেইন রোডের পাশে কারখানাটির বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে মালামাল বের করার পথ দেখা যায়। এ ছাড়া কারখানার গুদাম ঘর, মেশিন রাখার কক্ষ পুরো ফাঁকা। কোনো মালামালই আর অবশিষ্ট নেই। কারখানায় কোনো নিরাপত্তা প্রহরী দেখা যায়নি। 

কারখানার চাকরিচ্যুত শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম বলেন, এখন মিলের অবকাঠামো আর জমি ছাড়া কিছুই নাই। আশপাশের লোকজন সব মালপত্র নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এখন তো আর ম্যাচ তেমন চলে না। এই কারখানা নদীতীরবর্তী হওয়ায় বহুমাত্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে এখন আধুনিক মানের শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা দরকার। এতে একদিকে এই অঞ্চলে কর্মসংস্থানের ঘাটতি পূরণ হবে, অপরদিকে আগের শ্রমিকেরাও কাজের সুযোগ পাবেন। একই ধরনের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা জানান, গত ৩-৪ বছর ধরে এখান থেকে দিনরাত মালামাল লুটের ঘটনা আমাদের চোখের সামনে হচ্ছে। আগে রাতে লুট হলেও এখন সবসময়ই হয়। তাদের বাধা দিলে রামদা, দায়ের সামনে জিম্মি করে লুট করে। তাই এখন আর ভয়ে কেউ বাধা দেয় না। টুটপাড়া, লবনচড়া, রূপসা বাজার ও রূপসা ট্রাফিক মোড় এলাকার মধ্য বয়সী ছেলেরা কারখানার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। রাতে ট্রাক পিকাপে করে মালামাল নেয় তারা। আর দিনে স্বল্প পরিসরে ইজিবাইকে করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। গেল ৫ আগস্টের পর এটি আরও বেড়েছে। আগে কারখানা দেখভালে পাঁচজন নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। এ ছাড়া ৪-৫ জন পুলিশও পাহারা দিত নিয়ম করে। পুলিশ বসার একটি কক্ষ থাকলেও সেটি এখন পরিত্যক্ত।

ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলনার নৈশপ্রহরী মোবারক হোসেন বলেন, কিশোর গ্যাং স্কুলের সিসি ক্যামেরা কয়েকবার ভেঙে ফেলেছে। ৫ আগস্টের পর থেকে তারা রাতে এই স্কুলের পথ ব্যবহার করে কারখানা মালামাল নিয়ে যায়। তাদের হাতে চাপাতি চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন অস্ত্র থাকে। আমি নিরুপায় হয়ে গেট খোলা রাখি। বেসরকারি মালিকানা থাকা ভাইয়া গ্রুপের পক্ষে খুলনার এই দাদা ম্যাচ কারখানা দেখভালের দায়িত্বে আছেন মো. শাহজাহান সরদার। 

তিনি জানান, কারখানার বেশিরভাগ মালামালই লুট হয়ে গেছে। আশপাশের সবাই বিষয়টি জানে। কেউ কোনো প্রতিবাদ করে না। বর্তমানে লুটপাটকারীরা বিভিন্ন স্থাপনার চালার টিন, এ্যাংগেল ও লোহার খুঁটি লুটপাটে ব্যস্ত। ভারী ভারী মালামাল সহজে বের করার জন্য লুটেরা বাহিনী কারখানার পেছন দিকের দেয়াল ভেঙে পথ তৈরি করেছে। আমরা এসব বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়, স্থানীয় পুলিশ, জেলা প্রশাসনের দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে গত কয়েক বছরে শতাধিক অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খুলনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ‘সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নেব। যে রকম আছে, সে রকম চলবে আর কি- এ টুকু বলতে পারছি’। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা চেয়ে যে কেউ যেকোনো জায়গায় আবেদন করতেই পারে’। কোনো গাফিলতি ছিল বা আছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, ‘তিনি মাত্র দেড় মাস আগে খুলনায় যোগদান করেছেন। আগে জেলা প্রশাসন সরকারি আইন মোতাবেকই কাজ করেছে’।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের কারসাজি: ১৯৫৫-৫৬ সালের পুরাতন মেশিনারি ও ম্যানুয়াল পদ্বতির কারণে ভাইয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত লোকসানের ফলে ২০১০ সালে খুলনাস্থ দাদা ম্যাচ ওয়ার্কস ও রাজধানীর ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ২০০৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। 

কারখানা দুটিকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বেসরকারি শেয়ারহোন্ডার কোম্পানি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাথে জোর তৎপরতা শুরু করে। এরই মধ্যে সাবেক  প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানসহ কথিত শ্রমিক নেতাদের মিথ্যা তথ্যের (লিজ দেওয়া প্রতিষ্ঠান) ভিত্তিতে ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার জনসভায় দাদা ম্যাচ ওয়ার্কস সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেন। ওই বছরের ২১ মার্চ ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি  ও খুলনার দাদা ম্যাচ ওয়ার্কস সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে সিলগালা করে। 

সরকারিভাবে দাদা ম্যাচ ফাক্টরির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর দেখা যায়, সাফ কবলামূলে কোম্পানির ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ভাইয়া গ্রুপ। সেখানে সরকারি অর্থ বরাদ্দ সম্ভব নয়, প্রতিষ্ঠানটি চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্দ দেয়নি। 

পরে প্রধানমন্ত্রীর ২০১৩ সালে ব্যক্তি মালিকানায় বা পিপির অধীন সেখানে আইসিটি পার্ক প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেয়। গঠিত কমিটি প্রতিবেদনে আইসিটি পার্ক করতে ভূমির একক মালিকানা নিশ্চিত ও ব্যাংক লোনসহ সকল দায় থেকে মুক্তির মাধ্যমে নিষ্কণ্টক করার সুপারিশ করা হয়।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির সরকারি মালিকানার পরিমাণ  মাত্র ৩০ শতাংশ। আর বেসরকারি মালিকানা ৭০ শতাংশ, যা সম্পূর্ণ অগ্রণী ব্যাংকে দায়বদ্ধ। বেসরকারি শেয়ার হোল্ডাররা বেশিরভাগ মালিকানা থাকায় প্রতিষ্ঠানটির জায়গা নিষ্কণ্টক করা সম্ভব নয়। 

পরবর্তীতে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে বেসরকারি শেয়ার হোল্ডাররা প্রতিষ্ঠানটির বেসরকারি মালিকানাধীন ৭০ শতাংশ শেয়ার সরকারকে গ্রহণ কিংবা সরকারি মালিকানাধীন ৩০ শতাংশ শেয়ার বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়। ওই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সম্পদের মূল্যায়ন ও দায়দেনার হিসাব অডিট ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তারপরও মন্ত্রণালয় কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি।

এদিকে খুলনার দাদা ম্যাচের মালামাল লুটপাট হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মাসুদ খান। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ২০১১ সালের ২৩ মার্চ খুলনার জেলা প্রশাসককে কারখানাটির সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও সম্পদ ইনডেন্টরি করে কোম্পানির কাছ থেকে বুঝে নিয়ে সিলগালা করে কারখানাটির নিরাপত্তাকর্মীদের বের করে দেওয়া হয়। শুরুতে মূল ফটকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত করলেও পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ফলে কারখানাটি সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে, শুরু হয় লুটপাট’।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে লুটপাটকারীরা কারখানাটির স্থাপনা ভেঙেচুড়ে লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। সহজে লুটপাটের মালামাল কারখানা থেকে বের করার জন্য লুটেরা বাহিনী কারখানার পেছনের টুটপাড়া মেইন রাস্তা সংলগ্ন নিরাপত্তা প্রাচীর ভেঙে প্রশস্ত পথ তৈরি করে নিয়েছে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দৃশ্যমান। 

বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, চেয়ারম্যান বিসিআইসি ও শিল্প সচিবকে সবশেষ গত ১৪ অক্টোবর নতুনভাবে অবগত করা হয়। এতে সেখানে নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে’।

কারখানাটির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মো. মাসুদ খান বলেন, ‘যেহেতু সিলগালা অবস্থায় শতভাগ সরকারি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেহেতু সরকারেরই উচিত কিংবা দায়িত্ব ছিল যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করা। সরকারকে কারখানাটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সাথে সাথে নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবা উচিত ছিল। 

অবশ্য যখন অতিরিক্ত চুরি ও লুট শুরু হয়, তখন কোম্পানির পক্ষ থেকে ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর চিঠির মাধ্যমে সরকারকে কারখানায় আনসার নিয়োগে প্রস্তাবও করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি’।

ওই কারখানায় লুটপাট হওয়া প্রসঙ্গে রূপসা ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আমজাদ হোসেন বলেন, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে এখানে চারজন পুলিশ বাই রোটেশন সার্বক্ষণিক ডিউটি করত। যারা পুলিশ লাইন থেকে আসত। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় থেকে কোনো পুলিশ সদস্য থাকে না। 

খুলনা সদর থানার ওসি শেখ মনির-উল-গিয়াস বলেন, আমি অল্প কিছুদিন হলো এ থানায় যোগদান করেছি। ম্যাচ ফ্যাক্টরির নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমার জানা নাই। তবু চুরি বা লুটপাটের খবর পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব। এদিকে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের মোবাইল ফোনে গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকবার কল করা হয়। হোয়াটসআপ করা হলেও কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!