দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৯ মাসের মাথায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির পদে ফের পরিবর্তনের গুঞ্জন। গুঞ্জন এতটাই প্রবল যে, একে আর নিছক গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদকে সরে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে, আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বিসিবি সভাপতি পদে আসা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এখন তিনি পারিবারিক কারণে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকার বা বিসিবির পক্ষ থেকে এ নিয়ে তার সঙ্গে এখনো কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেনি।’
তিনি জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকায় এসেছেন মূলত জরুরি কিছু পারিবারিক কাজে। তাঁর দেশে আসার পরিকল্পনা হুট করে নয়, বরং বেশ আগে থেকেই।
গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পরিবর্তন আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি)। বিসিবিতে শেষ হয় নাজমুল হাসান পাপনের দীর্ঘ এক যুগের রাজত্বের। এরপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত পরিচালক হিসেবে বিসিবির সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক আহমেদ।
অন্যদিকে, যদি ফারুক আগে থেকেই বিসিবির নির্বাচিত পরিচালক হতেন এবং সেখান থেকে সভাপতির চেয়ারে বসতেন, তাহলে তার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে সরিয়ে দেওয়া এতটা সহজ হতো না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সম্প্রতি বেশকিছু বিতর্কে জড়িয়ে পড়া এবং ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির কারণেই তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিপিএল ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সফল আয়োজন না করতে পারা, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ, জাতীয় দলের বাজে পারফরম্যান্স সব মিলিয়ে প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন ফারুক।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বিসিবিকে জানিয়ে দিয়েছে যে, ফারুককে আর সভাপতি হিসেবে চায় না তারা। ফারুক যদি নিজে থেকে পদ ছাড়েন, তাহলে পরিবর্তনটা হবে অনেক সহজে। আর না হলে যেহেতু তিনি এনএসসি মনোনীত, সে ক্ষেত্রে তার কাউন্সিলরশিপ বাতিল করে তাঁকে বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়ার নজির অতীতে আছে—যেমনটা হয়েছিল আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববির ক্ষেত্রে।
এদিকে, ফারুকের জায়গায় যদি বুলবুলকে আনা হয়, তাহলে তিনিও এনএসসি থেকে মনোনীত হয়ে পরিচালক হবেন। যদি সরকারের সমর্থন থাকে, পরে পরিচালকদের সভায় সভাপতির পদে নির্বাচিত হওয়াটা হয়ে যাবে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। প্রথমে বিসিবির সম্ভাব্য দায়িত্ব নেওয়ার কথা ফারুক অস্বীকার করলেও পরে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, বুলবুল যদি সভাপতি হন, তাহলে কি আইসিসির চাকরি ছেড়ে আসবেন, নাকি সাময়িক ছুটিতে থাকবেন?
সূত্রে জানা গেছে, ফারুক ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচন না করার শর্তে মেয়াদ শেষ পর্যন্ত সভাপতি থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে ৩১ মে বিসিবির জরুরি সভার আগেই এই জট খুলে যেতে পারে। ঈদের আগেই বিসিবিতে আরেক দফা পালাবদল এখন খুব একটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
আবারও এমন পরিবর্তন হলে ‘সরকারি হস্তক্ষেপ’ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) দৃষ্টি বিসিবির ওপর পড়তেই পারে। এর আগে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে এ ধরনের হস্তক্ষেপের কারণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল। যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রশাসনিক কৌশল আর নিয়মের ফাঁক গলে সে রকম পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া এখনো সম্ভব। যেমনটা হয়েছিল গত বছরের আগস্টে।
আপনার মতামত লিখুন :