আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জাসপ্রিত বুমরাহ সাড়ে ৯ বছর আর পেশাদার ক্যারিয়ারে এক যুগেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন। এই দীর্ঘ পথে তিনি বারবারই চোটের সঙ্গে যুদ্ধ করে ফিরেছেন ২২ গজে।
মাঝখানে পিঠের চোটে ১১ মাস মাঠের বাইরে ছিলেন। আর এই বছর সেই চোট ফিরে আসায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও আইপিএলের শুরুর কয়েকটি ম্যাচে খেলতে পারেননি বুমরাহ।
এমনও কথা উঠেছিল, আর একবার এই ধরনের চোটে পড়লে হয়তো তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যাবে।
কিন্তু বুমরা এসব কথায় কান দেননি। যতবারই চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন, ততবারই তিনি রুদ্ররূপে ফেরার চেষ্টা করেছেন এবং দারুণভাবে সফল হয়েছেন।
এর সর্বশেষ প্রমাণ চলমান হেডিংলি টেস্টে তার ঝলমলে পারফরম্যান্স।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে বুমরাহর ৫ উইকেট শিকারের সুবাদে ভারত ৬ রানের মূল্যবান লিড নিতে পেরেছে। কাল তৃতীয় দিন শেষে শুবমান গিল-এর দল দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেট হাতে রেখে ৯৬ রানে এগিয়ে আছে।
আমি সবসময় মানুষের কাছ থেকে ‘না’ শুনে এসেছি
নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৪তম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার পর দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন বুমরা। সেখানেই তিনি কড়া জবাব দিয়েছেন সেই সমালোচকদের, যারা তার ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন।
৩১ বছর বয়সি এই ফাস্ট বোলার বলেন, আমি সবসময় ভারতের হয়ে খেলতে চেয়েছি। নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে সব সংস্করণেই খেলেছি। আমি সবসময় মানুষের কাছ থেকে ‘না’ শুনে এসেছি।
প্রথমে তারা বলেছিল, তুমি আর খেলতে পারবে না। তারপর তারা বলেছিল, তুমি বড়জোর ছয় মাস টিকবে। এরপর বলল, তুমি মাত্র আট মাস টিকবে। এসব শুনেই আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ বছর (আসলে সাড়ে ৯ বছর) কাটিয়েছি। আইপিএল খেলছি ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে।
অন্যরা যেভাবে চায়, আমি সেভাবে খেলব না
সংবাদমাধ্যম বা অন্যরা তাকে নিয়ে কী লিখছে, সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না বুমরা। তার স্পষ্ট ভাষ্য, মানুষ আমাকে নিয়ে কী লিখবে, সেগুলো তো আমার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে লিখতে পারে। আমি বুঝতে পারছি আমাদের দেশে ক্রিকেট খুবই জনপ্রিয় এবং শিরোনামে আমার নাম ব্যবহার করলে পাঠক-দর্শক বাড়ে।
কিন্তু এটা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না। কারণ, আমি যদি এসব নিয়ে মাথা ঘামাই, তাহলে তাদের কথা বিশ্বাস করতে শুরু করব। আমাকে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে এবং নিজস্ব উপায়েই এগিয়ে যেতে হবে। অন্যরা যেভাবে চায়, আমি সেভাবে খেলব না।
প্রথম ইনিংসে বুমরার বলে সতীর্থ ফিল্ডাররা চারটি ক্যাচ ফেলেছেন। আরেকবার নো বলের কারণে উইকেট বঞ্চিত হয়েছেন। নয়তো ভারতের লিড আরও বড় হতে পারত।
প্রত্যাশার চাপ ও বুমরানির্ভরতা
বুমরার দুর্দান্ত বোলিং ভারতকে যেমন সাফল্য এনে দিচ্ছে, তেমনি এক দিক থেকে দুশ্চিন্তাও বাড়াচ্ছে। অনেকেই বলছেন, ভারতের বোলিং আক্রমণ অতিমাত্রায় বুমরানির্ভর।
চাপ কমাতে ও চোটমুক্ত রাখতে পাঁচ টেস্টের এই সিরিজে বুমরাকে দুটি ম্যাচে বিশ্রামে রাখা হতে পারে- এমন আলোচনাও চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে বুমরা নিজেও জানিয়েছেন, তার ওপর প্রত্যাশার চাপ অতিরিক্ত বোঝা হয়ে উঠতে পারে, যা তিনি বহন করতে চান না।
তিনি বলেন, আমি রাতে নিজেকে এই প্রশ্ন করি- আমি কি মাঠে নিজের সেরাটা দিয়েছি? যদি উত্তর হয় ‘হ্যাঁ’, তাহলে চুপচাপ ঘুমাতে যাই।
আপনার মতামত লিখুন :