টেস্টের প্রথম দিনে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল বুধবারের বিকেলের শেষ ঘণ্টায় এক অদ্ভুত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটারদের একজন মুশফিকুর রহিম তখন অপরাজিত ৯৯ রানে।
স্টেডিয়ামের আলো নিভতে বসেছে, সূর্য নামছে পশ্চিমে, আর স্কোরবোর্ডে স্থির হয়ে আছে এক রহস্য—আর এক রান… কিন্তু সেই রান কি আজই আসবে?
না আসল না! ৯৯তেই আম্পায়ারের ইশারা আজ এখানেই বন্ধ! দিনশেষে খেলাঘণ্টা বাজতেই ক্রিকেটের স্ক্রিপ্ট হঠাৎ থেমে গেল। মুশফিকের ব্যাটে তখন অসমাপ্ত ইতিহাস, আর পুরো দেশের চোখে শুধু অপেক্ষা—পরের দিনের সকাল।
দ্বিতীয় দিনের ভোরে মিরপুর যেন এক নতুন মঞ্চ। ঘাসে শিশির, গ্যালারিতে ক্রমে জমে ওঠা দর্শক, আর ড্রেসিংরুম থেকে ব্যাট হাতে বেরিয়ে এলেন মুশফিক—ঐতিহাসিক দিনের সবচেয়ে প্রত্যাশিত চরিত্র। কোনো বাড়তি তাড়াহুড়া নেই, কোনো উত্তেজিত প্রতিক্রিয়াও নয়—শুধু সেই চিরচেনা শান্ত মনোযোগ।
প্রথম কয়েকটি বল দেখে নেওয়ার পর, শুরু হলো অপেক্ষার শেষ অধ্যায়। বল পড়ল, হালকা পুশ…তখনই মিরপুর যেন দম বন্ধ করে তাকিয়ে এবং—একটি সিঙ্গেল! সেই এক রানেই খুলে গেল ইতিহাসের দরজা। ১৯৫ বলে তুলে নিলেন শততম টেস্টে গোল্ডেন সেঞ্চুরি।
মিরপুর আচমকা বিস্ফোরিত হলো উচ্ছ্বাসে, আর মুশফিক দাঁড়িয়ে রইলেন নতুন এক মঞ্চের কেন্দ্রে— শততম টেস্টে শতক, যা বিশ্ব ক্রিকেটে মাত্র কয়েকজন বেছে নিতে পেরেছেন। এটি শুধু একটি সেঞ্চুরি নয়; এটি একজন ক্রিকেটারের দুই দশকের অধ্যবসায়, পরিশ্রম, ব্যথা–বেদনা আর প্রতিশ্রুতির চূড়ান্ত স্বাক্ষর।
মুশফিক বাংলাদেশের হয়ে—
১/ প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেললেন
২/ সেই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে যুক্ত হলেন বিশ্ব ক্রিকেটের এলিট তালিকায়
৩/ দেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক
৪/ উইকেটের পেছনে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল
লর্ডসে কিশোর বয়সে অভিষেক করা ছেলেটি, যে সমালোচনার পাহাড় পেরিয়ে বারবার নিজের দৃঢ়তায় ফিরে এসেছে, যে দলের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তেও ব্যাট হাতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে—সেই মুশফিকের এই সেঞ্চুরি দেশের জন্য হয়ে দাঁড়াল এক উজ্জ্বল সকালের প্রতীক।
ক্রিজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো মুশফিকের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল—একজন খেলোয়াড় কখনো শুধু রানের জন্য খেলেন না; কখনো কখনো তিনি একটি দেশের বিশ্বাস হয়ে ওঠেন।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন