বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানার ক্রিকেট জীবনের শুরুটা অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটারের মতোই। খুলনার স্থানীয় ক্রিকেট অঙ্গন থেকে কঠোর পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমেই তিনি জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়েন।
ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি রানার প্রবল আগ্রহ ছিল। খুলনার বিভিন্ন স্থানীয় টুর্নামেন্টে তিনি নিয়মিত অংশ নিতেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাঁহাতি স্পিন ও ব্যাটিং প্রতিভার ঝলক দেখাতে শুরু করেন। তার অলরাউন্ড সক্ষমতা খুব দ্রুতই স্থানীয় কোচ এবং ক্রিকেট সংগঠকদের নজরে আসে।
খুলনার বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলে রানার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাকে দ্রুত পরিচিতি এনে দেয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার উজ্জ্বল পারফরম্যান্স নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
বিশেষ করে তার কার্যকরী বাঁহাতি স্পিন এবং প্রয়োজনের সময় ব্যাট হাতে রান করার দক্ষতা তাকে একজন সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
জাতীয় পর্যায়ে রানার আগমন ঘটে ২০০৪ সালে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো খেলার পুরস্কার হিসেবে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে স্কোয়াডে সুযোগ পান। একই বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়।
অভিষেক বছরেই রানা নিজের প্রতিভার জানান দেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ দলের জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়ানডে সিরিজে তিনি অসাধারণ পারফর্ম করেন এবং পরপর দুটি ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।
তার এই পারফরম্যান্স ক্রিকেট বিশ্বে তাকে এক নতুন সম্ভাবনারূপে তুলে ধরে। এরপর তিনি টেস্ট দলেও সুযোগ পান এবং সেখানেও নিজের অলরাউন্ড সক্ষমতার প্রমাণ দেন।
কিন্তু এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ২০০৭ সালে তার জীবন কেড়ে নেয়। আজ এই প্রতিভাবান ক্রিকেটারের ৪০তম জন্মদিন।
২০০৭ সালের ১৬ই মার্চ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বালিয়াখালি ব্রিজের কাছে এক মর্মান্তিক মোটরবাইক দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারান রানা। সেই দুর্ঘটনায় তার ক্লাব সতীর্থ সাজ্জাদুল হোসেন সেতুও নিহত হন।
মৃত্যুকালে রানার বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর ৩১৬ দিন। তার এই অকালমৃত্যুতে ভেঙে যায় আর্চি জ্যাকসনের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে মৃত্যুর দীর্ঘদিনের রেকর্ড।
আজ তার জন্মদিনে ক্রিকেটপ্রেমীরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছেন এই প্রতিভাবান ক্রিকেটারকে, যিনি অল্প বয়সেই ক্রিকেট বিশ্বে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
মানজারুল ইসলাম রানার ক্রিকেট ক্যারিয়ার হয়তো আরও দীর্ঘ হতে পারত, যদি না সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা তার জীবন কেড়ে নিত। তবে তার ক্রিকেট জীবনের উত্থান এবং জাতীয় দলের হয়ে তার অবদান আজও অনেক তরুণ ক্রিকেটারকে অনুপ্রাণিত করে।
আপনার মতামত লিখুন :