আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বহুদিন ধরে আলোচনায় থাকা দুই স্তরের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তাব বাস্তবে রূপ না-ও পেতে পারে। প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী ১২টি টেস্ট খেলুড়ে দেশকে দুটি ডিভিশনে ভাগ করা হবে, প্রতিটি ডিভিশনে ছয়টি দল, এবং প্রতি চক্র শেষে এক বা দুই দল অবনমন ও উন্নীত হবে।
কিন্তু শুরু থেকেই ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে, আর এই আপত্তিতে একা নয় তারা।
বড় তিনের (ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) প্রভাব
টেস্ট ক্রিকেটে আর্থিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে সবচেয়ে বড় আয় আসে ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজ থেকে। তাই অধিকাংশ বোর্ডই এই তিন দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ হারাতে চায় না।
প্রস্তাবিত কাঠামোতে বড় তিনের বাইরে থাকা দলগুলোর জন্য শীর্ষ ডিভিশনে সুযোগ পাওয়া কঠিন হবে, আর বড় তিনের কোনো দল অবনমিত হলে সেই লাভজনক সিরিজের সম্ভাবনাও কমে যাবে।
বর্তমান র্যাঙ্কিং অনুযায়ী প্রস্তাবিত শীর্ষ ডিভিশনে থাকবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। আর দ্বিতীয় ডিভিশনে থাকবে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে।
বোর্ডগুলোর অবস্থান
ইসিবি: বোর্ডের চেয়ারম্যান রিচার্ড থমসন বলেন, ‘যদি আমরা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাই এবং ডিভিশন টু-তে নেমে যাই, তাহলে ভারত বা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলার সুযোগ হারাতে পারি। এটা মেনে নেওয়া যাবে না।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সিডব্লিউআই): সিইও ক্রিস ডেহরিং জানান, টেস্ট ক্রিকেটের আর্থিক মডেলই এখন কার্যকর নয়, তাই কোনো কাঠামোগত পরিবর্তনের আগে আর্থিক দিক সংস্কার জরুরি।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি): সিঙ্গাপুরে সাম্প্রতিক আইসিসি সভায় তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দুই ডিভিশনের কাঠামোর বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, আইসিসির টেস্ট সূচি আগামী দুই বছরের জন্য ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত, তাই এখনই এই আলোচনা অগ্রসর করা অযৌক্তিক।
বিসিসিআই: ভারতীয় বোর্ড এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি, তবে অন্যান্য বোর্ডের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে সিরিজ খেলার আগ্রহের কথাই শোনা যাচ্ছে।
বাস্তবায়নে জটিলতা
আইসিসির টেস্ট এফটিপি (ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম) সাধারণত চার বছরের জন্য নির্ধারিত হয়। ফলে, উদাহরণস্বরূপ আয়ারল্যান্ড যদি প্রথম দুই বছরের মধ্যে শীর্ষ ডিভিশনে উঠে আসে, তবে তাদের পরবর্তী দুই বছরের সূচি অর্থহীন হয়ে যাবে। কারণ শীর্ষ ডিভিশনের দলগুলোর সঙ্গে তখন কোনো ম্যাচ নির্ধারিত থাকবে না।
সহযোগী ও বিরোধীরা
নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার রজার টুয়েস এই কাঠামোর জোরালো সমর্থক এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সমর্থনও তার পেছনে রয়েছে।
তবে ইসিবি, পিসিবি এবং সিডব্লিউআই-এর মতো বোর্ডগুলোর আপত্তি এই পরিকল্পনাকে বড় বাধার মুখে ফেলেছে।
এদিকে আইসিসি একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে, যেখানে রয়েছেন আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ, রজার টুয়েস, ইসিবি সিইও রিচার্ড গুল্ড এবং আইসিসি সিইও সঞ্জোগ গুপ্তা।
বছরের শেষ নাগাদ তারা সুপারিশ জমা দেবে। তবে বোর্ড সভায় এই পরিকল্পনা অনুমোদন পাওয়া এখনও বড় প্রশ্নের মুখে।