ঈদুল আজহা কড়া নাড়ছে দরজায়। তাই দেশজুড়ে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো। তবে এবারের চিত্র একটু ব্যতিক্রম—বেচাকেনা চলছে পুরোদমে, কিন্তু বড় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা। ছোট ও মাঝারি গরুর প্রতি ঝোঁক বাড়লেও বিশালদেহী গরুর ক্রেতা কম, ফলে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন অনেক খামারি।
রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুর, গাবতলী, কমলাপুর, হেমায়েতপুর, বসিলা ও মুগদা-গোপীবাগ হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের ভিড় বাড়লেও মূল আকর্ষণ এখন মাঝারি ও তুলনামূলক কম দামের গরু।
শাহজাদপুর থেকে আসা খামারি মফিদুল ইসলাম জানান, ৪ লাখ টাকা করে দুটি বড় গরু বিক্রির চেষ্টা করছেন তিনি। দুই লাখ হলেও বিক্রি করবেন বলে ভাবছেন, কারণ ছোট ও মাঝারি গরুগুলো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘বড় গরু বাড়িতে নিয়ে গেলে লস। বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হবে। আগে অনেক দাম পাওয়া যেত, এখন মনে হচ্ছে টাকাওয়ালারা দেশে নেই।’
অন্যদিকে, গাইবান্দার খামারি জাহাঙ্গীর আলম তার ১০টি খাসির মধ্যে দুটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। মাঝারি ওজনের খাসি ১৫-৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। হাটে ছাগল, ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা এবং বিক্রি দুটোই ভালো।
হাট ইজারাদাররা জানান, এবার ছোট ও মাঝারি গরু ১ থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় গরু তুলনামূলক কম দামে থাকলেও ক্রেতারা সাড়া দিচ্ছেন না।
চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ী তানভীর হাসান জানান, তিনি ৮টি গরু এনেছিলেন, যার মধ্যে চারটি ৬ লাখে বিক্রি করেছেন, বাকিগুলোর দাম হাঁকিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। দরদাম মিললে ৬ লাখে ছাড়বেন বলেও জানান।
এদিকে বসিলা, আমিনবাজার ও গাবতলীর বড় হাটগুলোতে বড় আকারের গরু থাকলেও সে অনুপাতে দেখা যাচ্ছে না পর্যাপ্ত ক্রেতা। অনেক খামারি ও ব্যবসায়ী বলছেন, খরচ সামলে লাভ তো দূরের কথা, মূলধনও উঠে আসবে কি না তা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
এক ক্রেতা বলেন, ‘যে গরু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় হওয়া উচিত, তার দাম চাওয়া হচ্ছে ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। আবার বড় গরুর দাম তুলনামূলক কম হলেও লোকজন কিনছে না। ভয়ে বা বাজেটের কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে।’
বিক্রেতারা বলছেন, গেল বছরের তুলনায় দাম কিছুটা সহনীয় হলেও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি থাকায় শেষ সময়ে বড় গরু বিক্রির আশায় বসে আছেন বহু খামারি।