আসন্ন বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের (১৩-২১ সেপ্টেম্বর, টোকিও) আগে নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স কর্তৃক নির্ধারিত নতুন জেনেটিক টেস্ট নিয়ে চরম জটিলতায় পড়েছে কানাডা ও ফ্রান্সসহ একাধিক দেশের ক্রীড়াবিদরা।
বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নারী ক্রীড়াবিদদের সেক্স-ডিটারমিনিং রিজিয়ন অব দ্য ওয়াই ক্রোমোজোম (SRY) জিন পরীক্ষা করতে হবে, যা তাদের জৈবিক লিঙ্গ নির্ধারণে সহায়তা করে। তবে কানাডায় অনুষ্ঠিত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে এই টেস্ট করার জন্য যে কিট ব্যবহার করা হয়েছে, তা বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের মানদণ্ড অনুযায়ী, যথোপযুক্ত ছিল না বলে জানানো হয়েছে।
কানাডার অবস্থান
অ্যাথলেটিক্স কানাডা তাদের অ্যাথলেটদের পাঠানো এক ই-মেইলে জানায়, টেস্ট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডায়নাকেয়ার (Dynacare) মানসম্পন্ন কিট সরবরাহ করেনি।
অ্যাথলেটিক্স কানাডার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ জেন্তেস বলেন, আমরা সময়সীমার মধ্যে টেস্ট সম্পন্ন করতে যা কিছু সম্ভব, তাই করছি। পরিস্থিতি খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।
ডায়নাকেয়ার এখন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবস্থানরত ক্রীড়াবিদদের জন্য নতুন টেস্ট কিট পাঠাচ্ছে এবং পরীক্ষার নতুন স্থান নির্ধারণ করছে।
ফ্রান্সের আইনি বাধা
অন্যদিকে, ফ্রান্সের স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জানায়, দেশটির ১৯৯৪ সালের বায়োএথিকস আইনের অধীনে এ ধরনের জেনেটিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ। ফলে ফ্রান্সে কোনো ধরনের পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
ফ্রেঞ্চ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন (FFA) জানায়, তারা এখন বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের সহায়তায় ফ্রান্সের বাইরে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প বা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় টেস্ট করার চেষ্টা করছে।
বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের অবস্থান ও প্রস্তুতি
বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের স্পেশাল প্রজেক্টস পরিচালক জ্যাকি ব্রক-ডয়েল জানান, তারা ফ্রান্স, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ডের অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে কাজ করছে, যাতে বাকি ডায়মন্ড লিগ প্রতিযোগিতাগুলোর সময় পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়।
জ্যাকি আরও বলেন, আমরা মার্চ মাসেই জানিয়েছিলাম যে, সেক্স-ডিটারমিনিং রিজিয়ন অব দ্য ওয়াই ক্রোমোজোম (SRY) টেস্ট চালু করা হবে। ৩১ জুলাই এটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয় এবং আমরা তখনই জানিয়েছিলাম, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেই এটি প্রথমবারের মতো প্রয়োগ হবে।
কেন এই টেস্ট?
বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান কো এ প্রসঙ্গে বলেন, নারীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে এই টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা নিশ্চিত করে যে, নারীরা কোনো জৈবিক বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন না।
তিনি আরও জানান, আমরা চাই নারী ক্রীড়াবিদরা যেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলায় অংশ নিতে পারেন, যে এখানে লিঙ্গভিত্তিক কোনো বৈষম্য নেই।
বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স জানিয়েছে, ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টেস্ট শেষ করা বাধ্যতামূলক হলেও, কেউ যদি টেস্ট করে ফেলে কিন্তু ফল না আসে, তাহলে তাকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে ফলাফলে কোনো সমস্যা ধরা পড়লে, সেই অ্যাথলেট ও তার পারফরম্যান্স তদন্তের আওতায় আসবে।
ব্রক-ডয়েল জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ অ্যাথলেট টেস্ট সম্পন্ন করেছেন। তিনি আশাবাদী, সময়মতো সবাই এই পরীক্ষার আওতায় আসতে পারবেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন