সাত দশকের দীর্ঘ অভিনয় জীবনে যিনি দর্শকের মনে গেঁথে দিয়েছেন অসংখ্য চরিত্র- তিনি আবুল হায়াত। বয়স যখন ৮০, তখনো যিনি মাসে ১৫-১৬ দিন শুটিং করেন, সেই চিরসবুজ শিল্পীই এবার পেলেন ‘মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা’।
ঢাকার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ২৬তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে রুপালি পর্দায় তাঁর জীবনী তুলে ধরা হয় এক বিশেষ তথ্যচিত্রে। আর সেই মুহূর্তেই মিলনায়তনজুড়ে দাঁড়িয়ে বাজে করতালি। সম্মান জানানো হয় জীবন্ত এ কিংবদন্তিকে।
সম্মাননার ক্রেস্টটি তুলে দেন আরেক বরেণ্য অভিনেত্রী দিলারা জামান। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। আবুল হায়াতের কাঁধে উত্তরীয় জড়ানো হয়, হাতে তুলে দেওয়া হয় সম্মাননার চেক।
মঞ্চে উঠে আবেগমথিত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এই পুরস্কার শুধু আমার একার নয়, আমার সঙ্গে থাকা প্রতিটি চরিত্রের, যারা মেকআপ তোলার পরও আমার ঘরে ফিরে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদেরই লোক।’ ধন্যবাদ জানান আয়োজকদের। আর পুরস্কারটি উৎসর্গ করেন স্ত্রী শিরীন হায়াতকে- ‘শিরি, এই পুরস্কার তোমার।’
আবুল হায়াতের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদে হলেও শৈশব কাটে চট্টগ্রামের রেলওয়ে কলোনিতে। বাবা ছিলেন রেল কর্মকর্তা, তাই খুব ছোট বয়সেই চলে আসা এই শহরে।
প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নে ১৯৬২ সালে ভর্তি হন ইস্ট পাকিস্তান ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে (বর্তমানে বুয়েট)। আর সেখানেই জন্ম নেয় আরেক ভালোবাসা- ‘মঞ্চ’।
প্রথম নাটক ‘এক মুঠো আকাশ’। প্রথম টিভি নাটক নাগরিকের ‘ইডিপাস’ (১৯৬৮), প্রথম চলচ্চিত্র ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭২)-তারপর তো ইতিহাস।
বিটিভির স্বর্ণযুগের মুখ হয়ে ওঠেন ‘অয়োময়’, ‘বহুব্রীহি’, ‘আজ রবিবার’, ‘নক্ষত্রের রাত’-সহ অগণিত নাটকে। নব্বই দশকে ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’তেও বাজিমাত করেন।
১৯৭০ সালে বিয়ে করেন মাহফুজা খাতুন শিরীনকে। সংসারে সময় কম দিলেও স্ত্রী সবটা সামলে দিয়েছেন ভালোবাসায়- এ কথা অকপটেই বলেন হায়াত।
সরকারি চাকরি, প্রবাস জীবন, বেসরকারি চাকরি পেরিয়ে ১৯৯৫ সালে পুরোপুরি অভিনেতা হয়ে ওঠেন যিনি, তিনি আজও ক্যামেরার সামনে প্রাণবন্ত।
তার স্কুলজীবনের ডাকনাম ছিল ‘রবি’। সেই রবির হৃদয়ে গেঁথে ছিল আরেক রবি- রবীন্দ্রনাথ। তাঁর সাহিত্য ও মানবিক চেতনায়ই বড় হয়েছেন আবুল হায়াত।
২০০২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই আজীবন সম্মাননায় এবার নিয়ে ২৩ জন গুণী ব্যক্তিত্ব ভূষিত হলেন। আগেরবার সম্মাননাটি পেয়েছিলেন প্রয়াত অভিনেতা মাসুদ আলী খান। আর এবারের আসরে আলোর মুখ দেখলেন সেই চিরসবুজ রবি- যার নাম আবুল হায়াত।
আপনার মতামত লিখুন :