কান ২০২৫-এর লাল গালিচায় হীরার ঝলক নয়, নজর কাড়ল একটি নেকলেস। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখাবয়ব খচিত এই ‘ব্যতিক্রমী’ অলংকার পরে কান-এর চোপার্ড ‘ক্যারোলিনস ইউনিভার্স’ ডিনারে উপস্থিত হয়ে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যান রুচি গুজ্জার নামের এক নবাগত ভারতীয় অভিনেত্রী ও মডেল।
একটি গণমাধ্যমকে রুচি বলেন, ‘এই নেকলেস শুধুই অলংকার নয় এটি শক্তি, ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি আর ভারত কীভাবে বিশ্বে জায়গা করে নিয়েছে, তার প্রতীক’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাইছিলাম বিশ্বের সামনে দেখাতে যে, আমি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছি, মোদিজির নেতৃত্বকে সম্মান জানাতে এসেছি।’
সোনালি লেহেঙ্গাটি ছিল রূপা শর্মার নকশা করা, যেখানে গোটাপট্টি, আয়না কাজ আর সূক্ষ্ম হস্তশিল্পে উঠে এসেছে রাজস্থানের রূপ। এই লেহেঙ্গার সঙ্গে পরেছিলেন বান্ধনী দোপাট্টা, যা এসেছিল জারিবাড়ির ডিজাইনার রামের কাছ থেকে।
রুচি বলেন, ‘এই দোপাট্টাটি গায়ে জড়ানো মানে যেন গোটা রাজস্থানের আত্মাকে ধারণ করা।’ পোশাকের প্রতিটি স্তরে ছিল ঐতিহ্যের ছোঁয়া, আর গলার নেকলেসে ছিল এক রাজনৈতিক বার্তা।
রুচি গুজ্জারের বলিউডে যার যাত্রা শুরু মিউজিক ভিডিও দিয়ে, যেমন ‘জব তু মেরি না রাহি’ আর ‘হেলি মে চোর’-এর মতো কাজ। ২০২৩ সালের ‘মিস হরিয়ানা’ খেতাব পাওয়া এই তরুণী আজ বলিউডের গসিপ হেডলাইনের কেন্দ্রবিন্দু।
অপরদিকে, এই ‘স্পেশাল লুক’ নিয়ে প্রশ্নও উঠছে- এটা কি রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা, না কি শুধুই সস্তা মনোযোগ কাড়ার কৌশল? কেউ বলেন, গলায় মোদির মুখ ঝুলিয়ে তিনি চমক তৈরির চেষ্টায় সফল, আবার কেউ দেখতে পান গেরুয়া ঘরানার ‘গোদি রাজনৈতিক এজেন্ডা’।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের ভাবমূর্তি তুলে ধরার কথা বললেও সমালোচকেরা বলছেন, এটি ক্ষমতাসীন নেতার প্রতি অন্ধ আনুগত্যের প্রদর্শনী।
আবার ফ্যাশনের দিক থেকে বিচার করলে, এমন ‘নেকলেস’ নিঃসন্দেহে সাহসী কিন্তু বিতর্কিত। কানের মতো একটি সর্বজনীন শৈল্পিক-সাংস্কৃতিক আসরে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ‘জাহির’ করার এই প্রচেষ্টা কতটুকু যুক্তিযুক্ত- এমন প্রশ্নেরও অবকাশ থেকে যায়।
আদতে এটি শিল্পের মাধ্যমে রাজনৈতিক অবস্থান জানানো, না কি মোদি সরকার কৃপাদৃষ্টি লাভের পাঁয়তারা, না কি বলিউডে টিকে থাকার নিছক আরেকটা ভাইরাল কৌশল- এই বিতর্কই যেন রুচির কানস লুককে আরও বেশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনে দিয়েছে।
মোদি মুখাবয়বের নেকলেস নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক, প্রশংসা আর কৌতূহলের মধ্যে রুচি নিজে ছিলেন স্পষ্ট। বলেন, ‘মোদিজি বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি বদলে দিয়েছেন। আমি সেই গর্ব বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম।’
রুচির ‘কানস লুক’ এক ধরনের নতুন ফ্যাশন পলিটিক্সের দরজা খুলে দিয়েছে, যেখানে পোশাক আর অলংকার হয়ে উঠছে রাজনীতির নতুন হাতিয়ার। আর তারকাদের মিলনমেলাগুলো হয়ে উঠছে রাজনীতির নতুন ফ্রন্টলাইন।
আপনার মতামত লিখুন :