এবারের শীত মৌসুম নিয়ে বড় দুঃসংবাদ দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটির দীর্ঘমেয়াদি মৌসুমি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে একের পর এক অন্তত দশটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর মধ্যে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। ফলে এবারের শীত স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা দীর্ঘ ও শীতল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল রোববার (৩ নভেম্বর) রাতে প্রকাশিত এই মৌসুমি পূর্বাভাসে বলা হয়, এ বছর শীতের প্রকোপ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি দেখা দেবে ঘন কুয়াশা, হালকা বৃষ্টি এবং তাপমাত্রার উল্লেখযোগ্য ওঠানামা। এর প্রভাবে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে চারটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে দুটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ সময় চার থেকে সাতটি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং দুই থেকে তিনটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সময় শীতের মাত্রা এতটাই বাড়তে পারে যে, দৈনন্দিন কাজকর্মেও বাধা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, নভেম্বর মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় সাগরে তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এই সময় থেকেই দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করবে।
উত্তরাঞ্চল ও হিমালয়ঘেঁষা এলাকাগুলোতে এবারের শীতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। মৌসুমি পূর্বাভাস অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়টি হবে মৌসুমের সবচেয়ে ঠাণ্ডা সময়। এ সময় দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের শীত কেবল তাপমাত্রার দিক থেকে নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা ঠাণ্ডা জনজীবনে ভোগান্তি বাড়াবে। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে ঠাণ্ডাজনিত রোগ যেমন নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বাড়তে পারে। একইসঙ্গে কৃষিক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে তীব্র শীত। বিশেষ করে বোরো ধান, আলু, গম ও শাকসবজির উৎপাদনে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ঠাণ্ডার মাত্রা বেড়ে গেলে ফসলের ফলন ব্যাহত হতে পারে। তাই আগেভাগেই সেচব্যবস্থা ও ফসল রক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে।
আবহাওয়াবিদরা আরও জানিয়েছেন, এবারের শীত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি শীত পড়বে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে। বিশেষ করে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরে তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলেও শীতের তীব্রতা গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি অনুভূত হতে পারে।
এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের এখন থেকেই শীত মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র, আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা রাখতে সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়টিই হবে সবচেয়ে ঠাণ্ডা সময়। এ সময় দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইবে। দীর্ঘ সময় ধরে এই পরিস্থিতি বিরাজ করলে জনজীবন ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
এমন পূর্বাভাসে স্পষ্ট হচ্ছে, এ বছর শীতের প্রকোপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে। তাই আগেভাগেই সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়াই হতে পারে সম্ভাব্য দুর্ভোগ মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।




সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন