ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। ফলে দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বিদ্যমান। প্রাণহানি ঘটেছে অন্তত ৬৫ হাজার। হামাসের এই আক্রমণ নিয়ে ব্যাপক চর্চা হয়েছে। কারণ ও উদ্দেশ্য নিয়েও হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
মূলত সেদিনের ওই আক্রমণের পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে ‘ইসরায়েল শিগগিরই থার্ড টেম্পল নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে’—এমন একটি আশঙ্কা। হামাসের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।
এই ‘থার্ড টেম্পল’ কী?
খ্রিষ্টান, ইহুদি ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় আল-আকসা। মুসলমানদের কাছে মক্কা ও মদিনার পর এটি তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। এবং ইহুদিদের কাছে ‘টেম্পল মাউন্ট’।
ইহুদিদের একটি পবিত্র গ্রন্থ তালমুদ। এ গ্রন্থের ব্যাখ্যানুযায়ী, কিয়ামতের আগে ইহুদিদের ত্রাণকর্তার আগমন ঘটবে। তারা তাকে বলে মাসিহ। মাসিহের আবির্ভাবের তিনটি প্রধান শর্ত- ১. সারা পৃথিবীতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ইহুদিদের ইসরায়েলে জড়ো হতে হবে। ২. একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ৩. সোলাইমানি মন্দির আগে যেখানে ছিল, ঠিক সেখানেই সেই মন্দির তৈরি করতে হবে। এটাকে তারা বলে ‘থার্ড টেম্পল’।
জেরুজালেমের আজকের আল-আকসা মসজিদ যেখানে অবস্থিত, ঠিক এখানেই নবী সোলাইমান (আ.) মসজিদটি বানিয়েছিলেন। নবী সোলাইমান (আ.) ইহুদিদের কাছে ‘কিং সলোমন’ বলে পরিচিত। ইহুদিরা যেহেতু ইসরায়েলের (ইয়াকুব নবীর; বাইবেলের ভাষায় জ্যাকব) এর বংশধর; সেহেতু সোলাইমান (আ.) বা কিং সলোমন ইহুদিদের কাছে পবিত্র পুরুষ। সোলাইমানের বানানো এই মসজিদ বা উপাসনালয়ই হলো ইহুদিদের ‘ফার্স্ট টেম্পল’।
৫৮৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ইরাকের ব্যাবিলনের শাসক বখতে নাছর (পশ্চিমা বিশ্বে যিনি ব্যাবিলনের সম্রাট দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার নামে পরিচিত) হামলা চালিয়ে এই ‘ফার্স্ট টেম্পল’ গুঁড়িয়ে দেন। এবং সব বনি ইসরায়েল বা সব ইহুদিকে দাস হিসেবে বন্দি করে ইরাকে নিয়ে যান। এরপর পারস্য শাসকেরা বখতে নাছরের সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে বনি ইসরায়েল তথা ইহুদিদের ইরাক থেকে মুক্ত করে আবার ফিলিস্তিনে নিয়ে আসেন। ধ্বংস করে ফেলা সোলাইমানের মসজিদ বা ফার্স্ট টেম্পলের ওপর ৫১৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আবার আরেকটি উপাসনালয় নির্মাণ করার কাজ শুরু হয়। এটিকে বলা হয় ‘সেকেন্ড টেম্পল’।
পরে রোমানরা পারস্যদের পরাজিত করে বাইতুল মুকাদ্দাস বা জেরুজালেম দখল করে এবং ৭০ খ্রিষ্টাব্দে তারা ‘সেকেন্ড টেম্পল’ও ধ্বংস করে ফেলে।
বর্তমানে আল-আকসা বলতে পুরো কম্পাউন্ডকে বোঝানো হয়। এই কম্পাউন্ডের চার দেয়ালের মধ্যে থাকা কিবলি মসজিদ, কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অব দ্য রক) ও বুরাক মসজিদ—এই তিন মসজিদের সমন্বয়ই হলো আল-আকসা। মূল আল-আকসা বা কিবলি মসজিদ হলো ধূসর সীসার প্লেট দিয়ে আচ্ছাদিত গম্বুজওয়ালা স্থাপনাটি।
তবে মিডিয়ায় আল-আকসা নামে বেশি প্রসিদ্ধ সোনালী গম্বুজের স্থাপনার নাম কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্য রক। ইহুদিদের মূল লক্ষ্যস্থল হলো এই ডোম অব দ্য রক যেটিকে তারা ‘টেম্পল মাউন্ট’ বলে। তারা এর হিব্রু নাম দিয়েছে, ‘হার হাবাইত’। এই টেম্পল মাউন্টের স্থলেই আদি সোলাইমানি মন্দিরের নকশায় ‘থার্ড টেম্পল’ বানানোর পরিকল্পনা আছে ইহুদি কট্টরপন্থীদের।
আল-মাসিহ আদ-দাজ্জাল
ইহুদিরা বিশ্বাস করে, তাদের মুক্তি দিতে এবং সারা বিশ্বে ইহুদিদের একচ্ছত্র শাসন প্রতিষ্ঠা করতে তাদের মধ্যে একজন মাসিহ বা ত্রাতা আসবেন। কিন্তু যতক্ষণ না কয়েক হাজার বছর আগে ধ্বংস হয়ে যাওয়া সোলাইমানি মন্দির পুনরায় তৈরি করা হচ্ছে, ততক্ষণ সেই ত্রাতা আবির্ভূত হবেন না।
ইসলামের মতে, ইহুদিদের এই মাসিহই দাজ্জাল, যে কিনা গোটা বিশ্ব শাসনব্যবস্থার একক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে।
ইসরায়েলের কট্টর ইহুদিদের একাধিক গোষ্ঠী মাসিহের আগমনের শর্ত পূরণ করতে বহু বছর ধরে আল-আকসা মসজিদ ভেঙে সেই জায়গায় ‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এই টেম্পল নির্মাণের লক্ষ্য সামনে রেখে সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে প্রভাবশালী যে সংগঠন দাঁড়িয়ে গেছে, সেটির নাম ‘টেম্পল ইনস্টিটিউট’। আলট্রা-অর্থোডক্স বা চরম কট্টর ইহুদিরা ১৯৮৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।
আল-আকসা ভেঙে সেই জায়গায় ‘থার্ড টেম্পল’ বানানোর জন্য কাজ করে যাওয়া আরেকটি সংগঠন- ‘বোনেহ ইসরায়েল’ বা ‘ইসরায়েল গঠন’। এই সংগঠনটিতে ইহুদি ও ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিষ্টানরা একজোট হয়ে কাজ করে। আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘রিটার্নিং টু দ্য মাউন্ট’। সংগঠনটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে তারা তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, ‘টেম্পল মাউন্টের ওপর পূর্ণ ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বের আদায় ও প্রয়োগ’।
২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিবিসি বাংলা ‘আল-আকসা: নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মুসলমানের বেশ ধরে প্রার্থনা করছেন ইহুদিরা’ শিরোনামে একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছিল। তাতে ‘রিটার্নিং টু দ্য মাউন্ট’-এর কর্মীরা কীভাবে আল-আকসা মসজিদে মুসলমান সেজে ঢুকে ইহুদি প্রার্থনা করে, তা দেখানো হয়েছে।
‘থার্ড টেম্পল’র জন্য প্রস্তুতি
‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণের জন্য টেম্পল ইনস্টিটিউট অনেক আগে থেকেই সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুত করছে। মন্দির প্রতিষ্ঠার পুরোহিতদের জন্য নির্ধারিত পোশাকও আগেভাগেই বানিয়ে রাখা হয়েছে। তাওরাতের নির্দেশনা অনুযায়ী, মন্দিরের জন্য তামার জলপাত্র (কপার লিভার), ২৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে বানানো ৪৫ কেজি ওজনের আলোকদানিসহ (গোল্ডেন ম্যানোরাহ) নানা ধরনের আসবাব তারা তৈরি করে রেখেছে।
টেম্পল ইনস্টিটিউটের প্রকাশ করা ভিডিওতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেরুজালেরেমের ওল্ড সিটির ইহুদি মহল্লার সেন্ট্রাল প্লাজায় এসব সংরক্ষিত আছে। তাদের এসব জোগাড়যন্ত্র দেখে ফিলিস্তিনিদের এবং এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন মুসলমানদের মধ্যে আশঙ্কা ও ভীতি তৈরি হয়েছে। উদারপন্থী ইহুদিরাও মনে করছেন, ‘থার্ড টেম্পল’ তৈরির এসব উদ্যোগ ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের বাসিন্দাদের আরও বেশি শত্রুভাবাপন্ন করে তুলছে।
ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই ইহুদিরা ‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণের উদ্যোগ নিতে পারে। ইতোমধ্যে সে রকম লক্ষণ প্রকট হয়ে উঠেছে।
লাল গরু
ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ, এমনকি ইসরায়েল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতা মনে করছেন, আল-আকসা মসজিদ ভেঙে সেখানে ‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণের জন্য ইহুদিরা অপেক্ষা করে আসছে এবং সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। তারা মনে করছে, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আল-আকসা মসজিদ ভেঙে সেখানে ‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণ করা যাবে। এজন্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার, তার সবই নেওয়া হয়ে গেছে।
মাসিহের আবির্ভাবের তিনটি প্রধান শর্তের প্রথম দুটি ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে বলে বিশ্বাস করে ইহুদিরা। অর্থাৎ তারা ইসরায়েলে জড়ো হয়েছে এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রও গঠন করেছে। এখন বাকি আছে তৃতীয় শর্ত। সেই শর্ত পূরণ করতে হলে আল-আকসা মসজিদ ভাঙতে হবে আর সেখানেই ‘সোলাইমানি মন্দির’ বা ‘থার্ড টেম্পল’ গড়তে হবে।
আল-আকসা মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে এখনই মন্দির বানানোর সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ইহুদিদের আছে। কিন্তু তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে বলা আছে, সেই মন্দির বানানোর কাজ করতে হলে তাদের আগে পবিত্র হতে হবে। তার জন্য কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের একটি ‘লাল গরু’ দরকার। সেই গরু পেয়ে গেলেই মন্দির বানানোর কাজ শুরু করা যাবে।
ইহুদিরা মনে করে, তাওরাতের ভাষ্যমতেই তারা অপবিত্র অবস্থায় আছে। আগে তাদের জাতিগতভাবে পবিত্র হতে হবে। পবিত্র হতে হলে তাদের অনিবার্যভাবে একটি ‘লাল গরু’ দরকার। ধর্মগ্রন্থের ভাষ্যমতে, ‘লাল গরু’ জন্ম হওয়ার পর তিন বছর বয়সে উপনীত হলে তারা সেটিকে জবাই করে রক্ত ও আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই মেখে ইহুদি সম্প্রদায় পবিত্র হবে। তাই তারা বিশ্বের সর্বত্র এই ‘লাল গরু’ খুঁজে বেড়াচ্ছে।
তাওরাতের ভাষ্য অনুযায়ী, গরুটির প্রতিটি পশমকে লাল রঙের হতে হবে। একটি পশমও লাল ছাড়া অন্য রঙের হলে হবে না। গরুটির গায়ে কোনো কাটাছেঁড়া বা খুঁত থাকতে পারবে না। গরুটিকে একেবারে কম বয়সী হলেও হবে না, আবার বুড়ো হলেও হবে না; সেটিকে হতে হবে মাঝারি বয়সের। সেটির কাঁধে কখনো পানি সেচার কিংবা জমি চাষের জোয়াল পড়লে চলবে না। তার ঘাড়ের পশমকে খাড়া হতে হবে।
এই গরুকে বিশেষ প্রার্থনা সহযোগে জবাই করার পর পুরো দেহটি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। সেই ছাই পানিতে মিশিয়ে শুচিকরণ পানি তৈরি করতে হবে। সেই পানি দিয়ে যাজকেরা পবিত্র হবে। এর মধ্য দিয়ে পুরো ইহুদি জাতি পবিত্র হবে। ‘রেড কাউ’—শব্দবন্ধটি এই লাল গরুকে বোঝাতে পশ্চিমা সমাজে ব্যবহৃত হয়।
বহু খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র টেক্সাস থেকে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ মডেলের একটি বিমানে করে ইসরায়েলে পাঁচটি ‘লাল গরু’ আনা হয়। গরুগুলো আমদানি করেছে ‘বোনেহ্ ইসরায়েল’। যেগুলোর বয়স এক বছরেরও কম। তাৎক্ষণিকভাবে বাছুরগুলো হাইফায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে ইসরায়েল ভেটেরিনারি কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুসারে কমপক্ষে সাতদিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এরপর ইসরায়েলের আলাদা দুটি স্থানে পরিচর্যার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এর মধ্যে একটি স্থান প্রত্নতাত্তিক পার্ক শিলো, যেটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। তবে সেখানে প্রবেশেও রয়েছে কড়া নির্দেশনা। ইহুদি রাব্বি (ধর্মীয় নেতা) ও ধর্মানুসারীরাই সেখানে প্রবেশের সুযোগ পায়। দর্শনার্থী কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোরিয়া শাপিরা।
এএফপির প্রতিবেদনে অন্য আরেকটি স্থানের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, আল-আকসা মসজিদের অদূরেই জাবাল উজ জয়তুন বা মাউন্ট অলিভ এলাকায় একটি খামারে গরুগুলোকে রাখা হয়েছে। তৃতীয় বছর (সম্ভবত ২০২৫-২৬ সাল) থেকে গাভী জবাই করে ছাইয়ে পরিণত না করা পর্যন্ত এই স্থানেই রাখা হবে।
গত বছর আগস্টের শুরুতে ‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণের জন্য মাউন্ট অলিভ এলাকায় টেম্পল ইনস্টিটিউটের একদল কর্মীকে ‘লাল গরু’র ধর্মীয় আচার পালন করতে দেখা গেছে বলে মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ৬ আগস্ট সাংবাদিক ইয়িনন মাগাল তার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে একটি ছবি পোস্ট করেন। যেখানে একটি লাল গরু নিয়ে ধর্মীয় আচার পালন করছেন রাব্বি (ইহুদি ধর্মীয় নেতা)। ধারণা করা হচ্ছে, শিলোর পাঁচটি লাল গরুর মধ্যে এটি একটি। অবশ্য এরপরে একত্রে চারটি ‘লাল গরু’ দেখা গেছে।
বার ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের গবেষণা মতে, একটি গরুর ছাই দিয়ে ৬৬০ বিলিয়ন শুদ্ধিকরণ পানি তৈরি করা যেতে পারে।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত গরুর কথা
গরুর সাথে ইহুদি জাতির সম্পর্ক নতুন নয়। হযরত মুসার (আ.) জাতির গরু প্রীতি নিয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। একবার তারা গরুর মূর্তি তৈরি করে আরেকবার গরু নিয়ে হাজারো প্রশ্ন করে। গরু সম্পর্কে পরীক্ষা নিরীক্ষা- এটা তাদের পুরানো অভ্যাস।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, যখন মুসা (আ.) তার সম্প্রদায়কে বললেন, আল্লাহ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন। তারা বললো, তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছো? মুসা (আ.) বললেন, মুর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তারা বললো, তুমি তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, যেন সেটির রূপ বিশ্লেষণ করা হয়।
মুসা (আ.) বললেন, তিনি বলছেন, সেটা হবে একটা গাভী, যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়- বার্ধক্য ও যৌবনের মাঝামাঝি বয়সের। এখন আদিষ্ট কাজ করে ফেল। তারা বললো, তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যে, তার রং কিরূপ হবে? মুসা (আ.) বললেন, তিনি বলেছেন যে, গাঢ় পীতবর্ণের গাভী- যা দর্শকদের চমৎকৃত করবে। তারা বলল, আপনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন- তিনি বলে দিন যে, সেটা কিরূপ?
কেননা, গরু আমাদের কাছে সাদৃশ্যশীল মনে হয়। ইনশাআল্লাহ এবার আমরা অবশ্যই পথপ্রাপ্ত হব। মুসা (আ.) বললেন, তিনি বলেন যে, এ গাভী ভূকর্ষণ ও জল সেচনের শ্রমে অভ্যস্ত নয়- হবে নিষ্কলঙ্ক, নিখুঁত। তারা বলল, এবার সঠিক তথ্য এনেছ। অতঃপর তারা সেটা জবাই করল, অথচ জবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না। (সুরা বাকারা: ৬৭-৭১)
বাইবেলে বর্ণিত গরুর ধরণের সাথে কোরআনে বর্ণিত গরুর বেশ কিছু মিল আছে, যেমন, গাভী হতে হবে,মাঝারী বয়সের হতে হবে, কোনো চাষাবাদ বা অন্য কাজে ব্যবহৃত হয়নি এমন হতে হবে, নিখুঁত ও কলঙ্ক বিহীন হতে হবে, তাদের ধর্মগ্রন্থে আছে, ‘হাইকলের জমি আমাদের হাতে আসা মাত্রই আল্লাহ লাল গাভীকে আদেশ করবেন, সে হাম্বা ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে তারপর আমরা শুরু করবো হাইকল নির্মাণ। বনী ইসরাইলের নবীগণ এই ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন’ (আখবারুশ-শারক ১৩/০৫/১৯৯৭)
ইহুদি আরেক এক পণ্ডিতের ভাষায়, ‘আমরা হাইকলের নির্ধারিত জায়গার সামনে পূর্বমুখী করে গাভী জ্বালাবো। এ কাজে বিভিন্ন বৃক্ষের কাঠ ব্যবহৃত হবে, তারপর ছাইকে পানি সরবরাহের মতো পাইপলাইনের সহয়তায় প্রতিটি ইহুদির ঘরে ঘরে পোঁছে দেবো (এভাবেই সব ইহুদিকে পবিত্র করা হবে)।

 
                             
                                    
-20250406173810.webp)

-20250316114631.webp)

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন