পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণের পর থেকেই নতুন পোপ নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কে হবে নতুন পোপ? কেননা ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ নেতা হলেন পোপ। প্রায় ১.৪ বিলিয়ন মানুষের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু তিনি। যিশুর প্রধান শিষ্য। খ্রিস্টান সমাজ ও চার্চে পোপের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ধরা হয়।
নতুন পোপ নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছেন এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে কলেজ অব কার্ডিনালসে আসা বেশ কয়েকজন ধর্মযাজক। তবে পোপ হওয়ার প্রক্রিয়াটা খুব একটা সহজ না।
ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে নানান ধর্মীয় আচার মেনে অনুষ্ঠিত হয় কনক্লেভ। গুরুত্বপূর্ণ সেই সভায় কার্ডিনালদের ভোটে নির্বাচিত হন নতুন পোপ। এখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সবাই তাদের পছন্দের ব্যক্তির নাম কাগজে লিখে জানান।
আর পৃথিবীর এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে শুধুমাত্র পুরুষকেই বেছে নেওয়া হয়। সেখানে কোনো নারীকে স্থান দেওয়া হয় না।
এ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে- ক্যাথলিক চার্চের এই পদে নারীরা কেন অধিষ্ঠিত হয় না? এ বিষয়ে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, চার্চের সুদীর্ঘ নীতি, ধর্মতত্ত্ব এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ঘাটলেই এর উত্তর পাওয়া যায়।
ক্যানন আইন অনুসারে,(ক্যানন) ১০২৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র দীক্ষিত পুরুষেরাই পোপ হিসেবে নিযুক্ত করা যেতে পারে। আসলে খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস যে প্রভু যীশু কেবল পুরুষদের শিষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিলিজিওন এন্ড পাবলিক পলিসি প্রোগ্রামের ডিরেক্টর রেভারেন্ড টমাস রিজের মতে, পোপের মতো পদের জন্য অর্ডিনেশন প্রয়োজন এবং মহিলাদের পুরোহিত হওয়ার অনুমতি নেই।
ক্যাথলিক চার্চের বিশ্বাসদের অনুযায়ী, যিশু খ্রিষ্ট কেবল পুরুষদেরই তার প্রেরিত (অ্যাপোস্টল) হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে পোপ জন পল দ্বিতীয় এই ঐতিহ্যকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেন।
আমেরিকান ক্যাথলিক সংস্কৃতি বিষয়ক সমাজবিজ্ঞানী মিশেল ডিলনের মতে, ক্যাথলিকরা চান যিশু পুরুষ ছিলেন, ফলে এই পদে পুরুষরাই নেতৃত্ব দিক। ২০২৩ সালে পোপ ফ্রান্সিসও ‘শুধুমাত্র পুরুষ অর্ডিনেশনের’ এই নিয়ম পুনর্ব্যক্ত করেন। তার পূর্বসূরি দ্বিতীয় পোপ জন পলও একই অবস্থানে ছিলেন।
ক্যাথলিক চার্চের নীতি অনুযায়ী, পোপ পদের জন্য আবশ্যক হলো প্রার্থীকে ব্যাপ্টিস্ট (নির্দিষ্ট ধর্মীয় আচারপ্রাপ্ত) ক্যাথলিক পুরুষ হতে হবে এবং তার কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা চলবে না। এ ছাড়া তাকে অবশ্যই বিশপস (গির্জার পরামর্শ পরিষদের সদস্য), কার্ডিনাল, ধর্মযাজক, ডিকন অথবা সাধারণ কোনো ধার্মিক পুরুষ হতে হবে। নারীদের এই পদে নির্বাচনের সুযোগ না থাকার প্রধান কারণ হলো ক্যাথলিক চার্চের নারী ধর্মযাজকের ওপর নিষেধাজ্ঞা।
আপনার মতামত লিখুন :