অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় নতুন করে আরও ৩১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দিনব্যাপী চালানো আক্রমণে প্রাণ হারান এ সব নিরীহ মানুষ। আহত হয়েছেন অন্তত ৫৭ জন।
শুক্রবার (২ মে) ভোরেও বিমান হামলা অব্যাহত থাকায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত গাজায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৪১৮ জনে। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৯১ জন। আহতদের অনেকেই সংকটজনক অবস্থায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের আগ্রাসন
গত ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। দুই মাস ধরে গাজায় পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে ফের হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে হামাসের সঙ্গে মতবিরোধকেই আক্রমণের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন দফার হামলায় ইতোমধ্যে ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
আমরা বন্দিদের নয়, বিজয় চাই: নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধের উদ্দেশ্য ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করা নয় বরং ‘শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন’।
এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কার্যত বেসামরিক প্রাণহানিকে বৈধতা দিয়েছেন বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ।
গাজায় মানবিক বিপর্যয়
জাতিসংঘের মতে, চলমান হামলায় গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ অধিবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মারাত্মক সংকট চলছে। গোটা উপত্যকার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে চলছে ওষুধ সংকট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং পরিষেবা ঘাটতির কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু
এর আগেও, ২০২৩ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও ইসরায়েল বর্তমানে গণহত্যার মামলার সম্মুখীন।