ঢাকা শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

‘গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ’

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২, ২০২৫, ১০:১৪ এএম
ধ্বংসস্তূপে প্রিয়জনদের খোঁজে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকছেন পরিবারের বাকি সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় সাম্প্রতিক সংঘাত আবারও মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক বিবৃতি অনুযায়ী, বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। 

এই বিবৃতিটি শুধু একটি তথ্য নয়, বরং গাজার জটিল মানবিক, অবকাঠামোগত ও রাজনৈতিক সংকটের বহিঃপ্রকাশ। এই প্রবন্ধে বিষয়টির পেছনের বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা মানুষ: মানবিক সংকটের চরম বহিঃপ্রকাশ

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়েছে এবং এইসব ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ এখনও চাপা পড়ে আছেন। 

অনেক সময় উদ্ধারকারী দল পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, জ্বালানি বা নিরাপত্তার অভাবে উদ্ধার কাজ চালাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রাথমিক চিকিৎসা, খাদ্য, পানি ও বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

The pace of Israel‍‍`s war in Gaza far exceeds previous conflicts

উদ্ধারকাজের চ্যালেঞ্জ

যুদ্ধ পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাহীনতা

গাজার রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, ও প্রশাসনিক কাঠামো ক্রমাগত বোমা বর্ষণের শিকার হওয়ায় উদ্ধারকাজ চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ সময় উদ্ধারকারী দলের সদস্যরাও হামলার শিকার হচ্ছেন।

মোট নিহত ও আহতের পরিসংখ্যান

অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৫২,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এই নিহতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।

এছাড়া, আহতের সংখ্যা প্রায় ১,১১,৬০০- এদের অনেকেই গুরুতর আহত, যাদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও ওষুধ নেই।

এই সংখ্যা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হওয়া তথ্য। ধ্বংসস্তূপের নিচে যাদের এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, সেই সংখ্যা যুক্ত হলে প্রকৃত হতাহতের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অপর্যাপ্ত রসদ ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা

গাজায় দীর্ঘদিনের অবরোধের ফলে আধুনিক উদ্ধার সরঞ্জাম, ভারী যন্ত্রপাতি, এবং দক্ষ উদ্ধারকর্মীর অভাব রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মানুষদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দ্রুত কমে আসে।

স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার বিপর্যয়

যে সমস্ত মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তাদের জরুরি চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত, ওষুধ ও চিকিৎসক সংকট চরমে পৌঁছেছে। 

Hundreds killed in explosion at Gaza hospital: Gaza Health Ministry - ABC  News

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সহায়তার ঘাটতি

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে কার্যকর সহায়তা পৌঁছাতে রাজনৈতিক জটিলতা, সীমান্ত বন্ধ থাকা এবং অনুমতির অভাব বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল যতই নিন্দা জানাক, বাস্তব পরিস্থিতির খুব কম পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

সামাজিক ও মানসিক প্রভাব

ধ্বংসস্তূপে প্রিয়জনদের খোঁজে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলো চরম মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছে। শিশুরা আতঙ্ক, খাদ্যাভাব এবং ঘরহীন অবস্থায় বেড়ে উঠছে, যা তাদের ভবিষ্যৎ মানসিক ও সামাজিক বিকাশে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই দাবি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, এ শুধু একটি রাজনৈতিক সংঘাত নয় – এটি একটি গভীর মানবিক বিপর্যয়। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা মানুষদের উদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও কার্যকর হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। 

Gaza health ministry issues urgent call for world to send medical teams –  Middle East Monitor

যুদ্ধের চেয়ে মানবতা বড়- এই সত্যকে যদি উপেক্ষা করা হয়, তাহলে আরও অনেক জীবন নিঃশেষ হয়ে যাবে, এবং গাজার ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।