আবারও ইয়েমেনের হুতি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল।
সর্বাধুনিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ‘আয়রন ডোমের’ পর যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘থাড’ সিস্টেমও নতিস্বীকার করল ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের কাছে।
রোববার (৪ মে) স্থানীয় সময় সকালে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হুতি বাহিনী।
এরো-৩ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দুই জন নিহত ও ছয় জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট ও টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন এসব তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, প্রধান বিমানবন্দরে হুতি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল। সতর্কতাস্বরূপ ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজানো হয়।
তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি কেন প্রতিহত করা যায়নি- সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি আইডিএফ।
ওয়াইনেট জানায়, হুতির ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি টার্মিনাল ১-এর কাছে আঘাত হানে। আঘাতস্থলে প্রায় ২৫ মিটার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধনে সক্ষম হয়েছে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
ঘটনার পর বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আহত প্রত্যেককে চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ শিবা মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সমিতির সভাপতি পিনচাস ইডান ওয়াইনেট-কে বলেন, ‘সাইরেন শোনামাত্র সবাই দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাই। আমরা বিকট বিস্ফোরণ শুনতে পাই। বোমাটি উড়োজাহাজের নিকটে পড়েছিল। তবে আমরা সৌভাগ্যবান, কারণ একটি বিমান তখন উড়ছিল।’
টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, হামলার পর বেন গুরিয়নে সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। এ হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি নতুন দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, ইরানের বার্তা সংস্থা মেহের নিউজ জানিয়েছে, রোববার সকালে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হঠাৎ করে সাইরেন বেজে ওঠে। কিছুক্ষণ পর জানা যায়, একটি ক্ষেপণাস্ত্র দখলকৃত তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছে আঘাত হেনেছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি এ হামলা চালিয়েছে। তবে ইয়েমেনের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের ক্ষতি করবে তারা দ্বিগুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।
তিন মাস আগে ইসরায়েল হুতিদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ সামরিক পদক্ষেপ নেয়। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার আন্তর্জাতিক সঙ্গী জোট হুতিদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। ইসরায়েলকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত সপ্তাহে জানা যায়, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রত্যক্ষ জবাব দেওয়া থেকে বিরত থাকছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র এ লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের আক্রমণ করায় বেশি কিছু যায় আসে না। গত দুই দিনে ইসরায়েলের ক্ষতি সাধন প্রচেষ্টায় ইরান-সমর্থিত হুতির পঞ্চম আক্রমণ ছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামলার ঘটনার ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিমানবন্দরের পাশে বিশাল একটি ধোঁয়ার কুণ্ডলী উপরের দিকে উঠছে—যা ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের স্পষ্ট প্রমাণ।
হামলার পরপরই সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে ইসরায়েলের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো বাতিল অথবা বিকল্প রুটে পাঠানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা বেন গুরিওন বিমানবন্দর এলাকায় আঘাত হানা ইয়েমেনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আইডিএফ মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের প্রভাবের বিষয়ে রিপোর্ট পাওয়া গেছে। দুই সেনা সদস্য নিহত ও বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। তদন্ত চলছে। বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী ও অনুসন্ধান দল ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করছে।
এদিকে, হামলার দায় আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ স্বীকার না করলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, হামলাটি ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :