প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমকে ফাঁকি দিয়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফার তেল শোধনাগারে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন।
সোমবার (১৬ জুন) রাতে এ মিসাইল হামলা চালায় ইরান।
হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে হাইফার মেয়র ইয়োনা ইয়াহাভ চ্যানেল ১২ নিউজকে বলেন, স্থাপনাটি আমাদের এলাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিহত তিনজন একটি স্থাপনায় কাজ করছিলেন। হামলার সময় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া তিনজন নিখোঁজ ব্যক্তির কাছে পৌঁছানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেন উদ্ধারকারীরা। মিসাইল বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে আগুনও লেগেছিল। ফলে উদ্ধার কাজকে জটিল করে তুলে।
ইয়াহাভ বলেন, শহরের বেশ কয়েকটি বাড়ি এবং অন্যান্য ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।তবে মাত্র চারজন সামান্য আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ইসরায়েল পুলিশ জানিয়েছে, হাইফা এলাকায় মিসাইল হামলার সরাসরি সম্প্রচার করা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের সরিয়ে নিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
একজন মুখপাত্র বলেন, উপকূলীয় জেলার পুলিশের গাড়িগুলো ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রওনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, হাইফায় তেল শোধনাগার, একটি প্রধান বন্দর এবং একটি নৌঘাঁটিসহ বেশ কয়েকটি সংবেদনশীল স্থাপনা রয়েছে। ফলে শহরটি রক্ষায় আইডিএফ মরিয়া।
এদিকে, দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তেল আবিব ও হাইফা শহরে আঘাত হেনেছে। এতে চলতি সপ্তাহের জি-৭ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে যে, এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে আরও বড় যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের চারটি স্থানে ইরানি হামলায় চারজন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ রয়েছেন, যাদের সবার বয়স আনুমানিক ৭০ বছর।
পেতাহ টিকভা শহরের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে কংক্রিটের দেয়াল পুড়ে যায়, জানালাগুলো উড়ে যায় এবং বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উত্তরাঞ্চলীয় বন্দরনগরী হাইফায় হামলার পর সেখানে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে। স্থানীয় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে এবং সেখানে প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। জনগণকে বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাইরে না যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের উদ্দেশে অন্তত ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তারা বলছে, ইসরায়েলের শুক্রবারের আকস্মিক হামলার প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা চালানো হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আহ্বানে তারা কর্ণপাত করছে না।
এর আগে, ইসরায়েল ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে সরাসরি হামলা চালায়। সংক্ষিপ্ত ঘোষণায় বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।’
এই হামলার ফলে কিছু সময়ের জন্য টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। পরে সম্প্রচার পুনরায় চালু করা হয়। ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক (আইআরআইএনএন) জানায়, হামলার সময় ভবনে সরাসরি সম্প্রচার চলছিল।
ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় কয়েকজন কর্মী নিহত হয়েছেন। তবে নির্দিষ্ট সংখ্যা ও পরিচয় জানানো হয়নি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এই হামলার দায় স্বীকার করেছেন এবং জানান, ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছিল। হামলার আগেই তেহরানের বাসিন্দাদের ভবনটি থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘ইরানের স্বৈরশাসক যেখানেই থাকুক না কেন, তাকে আঘাত করা হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :