সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ০৩:০৪ এএম

মার্কিন হামলা, সংঘাতে নতুন মোড় 

উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ০৩:০৪ এএম

ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিবে আঘাত হানার পর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ছবি- সংগৃহীত

ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিবে আঘাত হানার পর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ছবি- সংগৃহীত

ইসরায়েলের হামলার মধ্য দিয়ে গত ১৩ জুন শুক্রবার শুরু হয় ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। সংঘাতের দশম দিনে এসে গতকাল রোববার এই সংঘাতে যুক্ত হয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলাকে অসাধারণ সামরিক সাফল্য বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির স্থাপনা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া না গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ত হওয়া দুই দেশের চলমান সংঘাতকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ এ হামলার পর এবার শক্তিশালী বন্ধু প্রয়োজন হয়ে পড়েছে ইরানেরও।

এ অবস্থায় রাশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। অন্যদিকে অনেক দেশই তাদের নিজেদের পারমাণবিক ওয়ারহেড ইরানকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ।

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হেজাম আল-আসাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি সংক্ষিপ্ত সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটনকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।

পাশাপাশি ইরানের কৌশলগত মিত্র হিসেবে পরিচিত চীন, তুরস্কসহ অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নতুন মোড় নেওয়া ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী শেষ হবে, নাকি নতুন যুদ্ধের শুরু হচ্ছে এই অনিশ্চিত বাস্তবতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ইরানের তিন পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা: ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিজেই হামলার কথা স্বীকার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এগুলো হলো ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহান।

পরে ট্রুথ সোশ্যালে এক বার্তায় ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহানে আমাদের অত্যন্ত সফল হামলা সম্পন্ন করেছি। সব বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে রয়েছে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ফোরদো স্থাপনায় ‘পূর্ণ শক্তির বোমা হামলা’ চালানো হয়েছে এবং সব মার্কিন বিমান এখন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে।

ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ফোরদোতে মূল লক্ষ্যবস্তুতে সম্পূর্ণ পরিমাণ বোমা ফেলে সফলভাবে হামলা সম্পন্ন করেছি। সব বিমান নিরাপদে দেশে ফেরার পথে। আমাদের মহান আমেরিকান যোদ্ধাদের অভিনন্দন! পৃথিবীতে আর কোনো সেনাবাহিনী নেই, যারা এ কাজ করতে পারত। এখনই শান্তির সময়। এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’ট্রাম্প আরও বলেন, এখন ইরানের উচিত এই যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হওয়া।

ইরানের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির বার্তা সংস্থা তাসনিমও বলেছে, শত্রুপক্ষের বিমান হামলায় ফোরদোর একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সিবিএস নিউজ জানায়, হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে ইরানকে জানিয়ে দিয়েছে, এই হামলাগুলোই তাদের চূড়ান্ত পদক্ষেপ, তেহরানে সরকার পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানগুলো দেশটির মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে। টানা প্রায় ৩৭ ঘণ্টা উড়ে গিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানান যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা।

এই কর্মকর্তা বলেন, হামলায় অংশ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানগুলো মাঝ আকাশে একাধিকবার জ্বালানি নিয়েছে।

ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের : ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর ইরান তাদের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি এই হামলার কিছু ফুটেজ প্রচার করেছে। এতে দাবি করা হচ্ছে, ‘খোররামশহর-৪’ ক্ষেপণাস্ত্রটি এ হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে।

ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জানিয়েছে, মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইসরায়েলে কমপক্ষে ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে খোররামশহর-৪ ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে এবং প্রায় ১ হাজার ৫০০ কেজির ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ক্ষেপণাস্ত্রের নামকরণ করা হয়েছে ১৯৮০-এর দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় ভয়াবহ লড়াইয়ের সাক্ষী ইরানের ‘খোররাম শহর’-এর নামে। এটি খাইবার নামেও পরিচিত, যা সপ্তম শতাব্দীতে দখল করা একটি ইহুদি দুর্গ (বর্তমানে সৌদি আরবে) থেকে নামকরণ করা হয়েছে।

খোররামশহর-৪ বা খাইবার ক্ষেপণাস্ত্রকে ইরানের চতুর্থ প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এটি শব্দের গতির চেয়ে ১৬ গুণ বেশি গতিতে বায়ুমণ্ডলের বাইরে এবং শব্দের গতির চেয়ে ৮ গুণ বেশি গতিতে বায়ুমণ্ডলের ভেতরে চলতে সক্ষম। উচ্চগতি ও কৌশলগত সক্ষমতার জন্য এটিকে শনাক্ত ও প্রতিহত করা কঠিন।

ইসরায়েলের উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, মার্কিন হামলার প্রতিশোধ হিসেবে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছে।

তেল আবিবের উত্তরাঞ্চলের একটি বেসামরিক এলাকায় এই হামলা হয়। একটি শপিং সেন্টার, একটি ব্যাংক, একটি সেলুনসহ বেশ কিছু স্থান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান, ভাঙা গেট এবং রাস্তার ওপর কাচের টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, তার দোতলা বাড়িটি একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, তবে তিনি অক্ষত আছেন; কারণ তিনি মায়ের বাড়িতে ছিলেন। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেখা গেছে। কিছু রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে এবং রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য আর্থমুভার মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ছাড়া ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সাহায্যকারী ঘাঁটি, কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং একটি জৈব গবেষণ কেন্দ্রও রয়েছে। ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) বরাতে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন জানায়, দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের উত্তরাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে একটি চারতলা আবাসিক ভবন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভবনটির মাঝখানে একটি গর্ত হয়ে গেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের তথ্যমতে, ভবনটির ওপর তলার দেয়াল ভেঙে গেছে, চূর্ণবিচূর্ণ সব জানালা। সিএনএনের ইসরায়েল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের তীব্রতায় বাইরে উড়ে এসেছে আসবাবপত্র, বিছানার তোশক ও অন্যান্য জিনিসপত্র। তবে, কেউ হতাহত হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

এদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলজুড়ে ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সূত্র। দেশটির সংবাদমাধ্যম আরুতস শেভা জানিয়েছে এ তথ্য। এর আগে গতকালের হামলায় ১৬ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছিল ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড আদম। 

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান দুই দফায় মোট ২৭টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। প্রথম দফায় ২২টি এবং দ্বিতীয় দফায় পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।

লক্ষ্যবস্তু হওয়া এলাকাগুলো ছিল বেশ বিস্তৃত, যা দখলকৃত সিরিয়ার গোলান মালভূমি থেকে শুরু করে ওপরের দিকে গালিলি এবং উত্তরাঞ্চলীয় ও মধ্যাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। ১০টি পৃথক স্থানে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র অথবা বড় শার্পনেল আঘাত হেনেছে এবং এই স্থানগুলোতে বিশেষ করে তেল আবিব ও হাইফা এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রভাবশালী একজন উপদেষ্টা মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এই প্রণালি বিশ্বজুড়ে জ¦ালানি তেল পরিবহনের প্রধান রুটগুলোর একটি। 

ইরানের হামলার জবাব দিয়েছে ইসরায়েল : ইরানের ব্যাপক হামলার জবাবে ইরানের মধ্যাঞ্চলে ইয়াজদ প্রদেশে ইসরায়েলের হামলায় বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গেছে। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বুশেহর প্রদেশেও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।

ইরানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, ইয়াজদ প্রদেশে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেখানে বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির বুশেহর প্রদেশে ‘জোরালো বিস্ফোরণের’ শব্দ শোনা গেছে বলে পৃথকভাবে জানানো হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ইরানের দেজফুল বিমানঘাঁটিতে দুটি ইরানি এফ-৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। আরও দাবি করা হয়েছে, পৃথক আরেকটি হামলায় ধ্বংস হয়েছে ইরানের আটটি ব্যালিস্টিক মিসাইল লঞ্চার, যার মধ্যে ছয়টি ইসরায়েলে হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল।

গত শনিবার রাতেও ইরানের বেশ কয়েকটি স্থাপনায় বড় পরিসরের বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। আইডিএফের তথ্যমতে, একযোগে ২০টি যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানি ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয়েছে ওই হামলায়। এসব যুদ্ধবিমান ইরানের ডজনখানেক সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে বলে দাবি করছে তারা।

আইডিএফের ভাষ্যমতে, হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ সংবলিত একটি সামরিক ঘাঁটি, অস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণের কেন্দ্র, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ইস্পাহান বিমানবন্দরের সামরিক অবকাঠামো। ইরানের বিমানবাহিনী যেন সেখান থেকে আর কোনো হামলা চালাতে না পারে, তা নিশ্চিতেই ওই ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে আইডিএফ।
 

Link copied!