গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নারী-শিশুসহ ১১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর খাদ্য সহায়তার লাইনে অপেক্ষারত ছিলেন।
রোববার (১৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, প্রতিদিনের মতো শনিবারও (১২ জুলাই) সেখানে রক্তাক্ত হলো সাধারণ মানুষের জীবন। খাদ্য সহায়তার লাইনে অপেক্ষারত নিরীহ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে হত্যা করল ইসরায়েলি সেনারা। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো যেসব এলাকাকে ‘মানবিক সহায়তার কেন্দ্র’ বলছে, সেগুলোই পরিণত হয়েছে ‘মৃত্যুকূপে’। এই নির্মমতার মধ্যে নতুন করে উঠে এসেছে ফিলিস্তিনিদের ওপর চরম মানবিক সংকট এবং পরিকল্পিত নিপীড়নের চিত্র।
রাফাহ শহরের আল-শাকুশ এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রটির সামনে গুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বহু মানুষ। আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে রক্তের স্রোত।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের সামনে চোখের জলে বন্ধু হারানোর কথা বলছিলেন সামির শাত। তিনি বলেন, ‘যে ব্যাগে খাবার পাওয়ার আশা ছিল, সেটাই হয়ে গেল কাফনের কাপড়। আল্লাহর কসম, এটা সাহায্য কেন্দ্র নয়, এটা মৃত্যুকূপ।’
একই ধরনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন মোহাম্মদ বারবাখ নামে একজন বাবা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমাদের সাহায্য নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলো, তারপর শিকার করা হাঁসের মতো গুলি চালানো হলো আমাদের ওপর।’
আলজাজিরার গাজা প্রতিনিধি তারেক আবু আজ্জৌম জানান, রাফাহ শহরে জিএইচএফ’র মাত্র একটি কেন্দ্র চালু রয়েছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ খাদ্য সহায়তার জন্য ছুটে আসছেন। ইসরায়েলি সেনারা কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ক্ষুধার্ত জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মে মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত জিএইচএফ’র আশপাশের এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮০০ জন নিহত এবং ৫ হাজার জন আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকেই মাথা ও পায়ে গুলিবিদ্ধ।
শনিবার গাজা শহরের জাফফা স্ট্রিটে বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৪ জন। একই দিন জাবালিয়া এবং শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে ২২ জন নিহত হন। বেইত হানুনে ফেলা হয় অন্তত ৫০টি বোমা।
গাজার তথ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অপুষ্টিজনিত কারণে ৬৭ জন শিশু মারা গেছে। আরও ৬.৫ লাখ শিশু রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এসব হামলায় আহত হয়েছেন এক লাখ ৩৮ হাজার ফিলিস্তিনি। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে এবং অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :