সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০২:৫৭ পিএম

‘ফিলিস্তিনকে আপনাদের কাছে অর্পণ করলাম’, আল জাজিরার সাংবাদিকের শেষ বার্তা

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০২:৫৭ পিএম

সন্তানদের সঙ্গে আল জাজিরার প্রয়াত সাংবাদিক আনাস আল-শরীফ। ছবি- সংগৃহীত

সন্তানদের সঙ্গে আল জাজিরার প্রয়াত সাংবাদিক আনাস আল-শরীফ। ছবি- সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন আল জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরীফ ও তার চার সহকর্মী। হামলার আগমুহূর্ত পর্যন্ত একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন তারা।

তবে আনাস আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন তিনি এবং জানতেন, কোনো না কোনো সময় হয়তো মৃত্যুও বরণ করতে হবে। এ কারণেই গত ৬ এপ্রিল বিশ্ববাসীর কাছে একটি বার্তা লেখেন আনাস। মৃত্যুর পর প্রকাশের জন্য সেই বার্তা রেখে গিয়েছিলেন তিনি। গতকাল মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তার অ্যাকাউন্টে সেই বার্তা প্রকাশ করেন এক বন্ধু। বার্তাটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

‘পত্রের শুরুতে আমার সালাম। আপনার ওপর আল্লাহর রহমত ও আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। আল্লাহ সাক্ষী, আমি আমার সমস্ত শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে আমার জনগণের সহায়ক ও কণ্ঠস্বর হতে চেষ্টা করেছি—যেদিন থেকে আমি জীবনের আলো দেখেছি, জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের গলিপথ ও পাড়া-মহল্লায় বেড়ে উঠেছি। আমি আশা করেছিলাম, আল্লাহ আমার জীবন দীর্ঘ করবেন, যাতে আমি আমার পরিবার ও প্রিয়জনদের নিয়ে আমাদের দখলকৃত জন্মভূমি আশকেলন (আল-মাজদাল)-এ ফিরে যেতে পারি। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল আরও মহান, আর তার ফয়সালা অনিবার্য।

আমি বেদনার প্রতিটি রূপ অনুভব করেছি, বারবার হারানোর কষ্ট সয়েছি। তবুও আমি কখনো বিকৃতি বা মিথ্যাচার ছাড়াই প্রকৃত সত্যকে প্রকাশ করতে দ্বিধা করিনি। আল্লাহ সাক্ষী থাকুন তাদের বিরুদ্ধে, যারা নীরব থেকেছে, যারা আমাদের হত্যাকে মেনে নিয়েছে, যারা আমাদের শ্বাসরোধ করেছে এবং যাদের হৃদয় নাড়া দেয়নি আমাদের শিশু ও নারীদের ছিন্নভিন্ন দেহ দেখে এবং যারা আমাদের জনগণের ওপর গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা হত্যাযজ্ঞ থামাতে কিছুই করেনি।

আমি আপনাদের কাছে অর্পণ করছি ফিলিস্তিনকে—মুসলমানদের মুকুটের রত্ন, বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীন মানুষের হৃদস্পন্দন। আমি আপনাদের হাতে সপে দিচ্ছি এর জনগণকে এবং সেই নিপীড়িত শিশুদের, যারা স্বপ্ন দেখার ও নিরাপদে বেঁচে থাকার সময়ই পায়নি। হাজার হাজার টন ইসরায়েলি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রে তাদের নির্মল দেহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে, ছিন্নভিন্ন হয়ে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে গেছে দেওয়ালে দেওয়ালে।

আমি আপনাদের কাছে মিনতি করছি, পৃথিবীর কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতায় যাতে আপনারা চুপ হয়ে না যান। সীমান্ত যাতে আপনাদের আটকে রাখতে না পারে। দেশ ও জনগণকে মুক্ত করার সেতু হয়ে দাঁড়ান, যাতে মর্যাদা ও স্বাধীনতার সূর্য আমাদের দখলকৃত ভূমিতে উদিত হয়।

আমি আমার পরিবারকে আপনাদের কাছে অর্পণ করছি। অর্পণ করছি আমার নয়নের মণি, প্রিয় কন্যা শামকে, যাকে আমি আমার স্বপ্নের মতো করে বড় হতে দেখতে পারিনি। আমি অর্পণ করছি আমার প্রিয় ছেলে সালাহকে, যার পাশে থেকে তাকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলাম, যাতে সে আমার বোঝা কমিয়ে মিশন সম্পূর্ণ করতে পারে।

আমি অর্পণ করছি আমার প্রিয় মা’কে, যার আশীর্বাদপূর্ণ প্রার্থনা আমাকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে, যার প্রার্থনা ছিল আমার রক্ষাকবচ এবং যার আলো আমার পথপ্রদর্শক। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন তার (মা) হৃদয়কে  শান্ত করে দেন এবং আমার পক্ষ থেকে তাকে উত্তম প্রতিদান দেন।

আমি আরও অর্পণ করছি আমার জীবনসঙ্গিনী, প্রিয় স্ত্রী উম্মে সালাহ বায়ানকে, যাকে এই যুদ্ধ বহুদিন আমার থেকে আলাদা রেখেছে, তবুও তিনি অঙ্গীকারে অটল থেকেছেন, জলপাই গাছের কাণ্ডের মতো অবিচল, ধৈর্যশীল ও সন্তুষ্ট থেকেছেন। এবং আমার অনুপস্থিতিতে সমস্ত শক্তি ও ইমান নিয়ে দায়িত্ব বহন করেছেন।

আমি আপনাদেরকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি, সর্বশক্তিমান আল্লাহর পরে আপনারা তাদের সহায়তাকারী হয়ে যান।

যদি আমি মারা যাই, আমার নীতির ওপর অবিচল থেকে আমি মরব। আমি আল্লাহর সামনে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি তাঁর ফয়সালায় সন্তুষ্ট, তাঁর সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে নিশ্চিত এবং নিশ্চিত যে আল্লাহর কাছে যা আছে তা উত্তম এবং চিরস্থায়ী।

হে আল্লাহ, আমাকে শহিদদের মধ্যে কবুল করুন, আমার অতীত ও ভবিষ্যতের পাপ ক্ষমা করুন এবং আমার রক্তকে আমার জনগণ ও পরিবারের স্বাধীনতার পথের আলো বানিয়ে দিন।

যদি আমি ভুল করে থাকি তবে আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য রহমতের সাথে প্রার্থনা করুন, কারণ আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি এবং কখনো পরিবর্তন বা বিশ্বাসঘাতকতা করিনি।

গাজাকে ভুলে যাবেন না... আর ক্ষমা ও কবুলের জন্য আপনাদের প্রার্থনায় আমাকে ভুলে যাবেন না।’

এদিকে নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে আনাস আল-শরীফ ছাড়াও রয়েছেন আল জাজিরার সংবাদদাতা মোহাম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরাম্যান ইব্রাহিম জাহের, মোয়ামেন আলিওয়া এবং মোহাম্মদ নুফাল।

গাজায় চলমান ২২ মাসের যুদ্ধে প্রায় ২০০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো জানিয়েছে।

এদিকে, ‘ইসরায়েলি’ সেনাবাহিনী তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বিবৃতিতে জানায়, ‘অল্প কিছুক্ষণ আগে গাজা সিটিতে আল জাজিরার নামে পরিচিত হলেও আসলে হামাস সন্ত্রাসী আনাস আল-শরীফকে লক্ষ্যবস্তু করেছে আইডিএফ (‘ইসরায়েল’ ডিফেন্স ফোর্স)।’

‘ইসরায়েলি’ সেনাবাহিনীর দাবি, আনাস আল-শরীফ রকেট হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে জড়িত ছিলেন।

গাজায় আল জাজিরার অন্যতম পরিচিত মুখ ছিলেন আনাস আল-শরীফ। তিনি প্রতিদিনের প্রতিবেদন ও সরাসরি সম্প্রচারের জন্য সামনের সারি থেকে খবর দিতেন। গত জুলাইয়ে ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস’ (সিপিজে) তার নিরাপত্তার আহ্বান জানায় এবং অভিযোগ করে যে, ‘ইসরায়েলি’ সেনাবাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র অনলাইনে তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করে প্রচার চালাচ্ছে।

হামলার পর সিপিজে এক বিবৃতিতে জানায়, কোনো প্রমাণ না দিয়ে সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করার ধারাবাহিকতা ‘ইসরায়েল’র উদ্দেশ্য। এটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। সাংবাদিকরা বেসামরিক মানুষ, তাদের কখনো লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!