দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়, গণমাধ্যম, আইনজীবী প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণের একাধিক অভিযোগ উঠেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। যিনি একসময় ‘ডিপ স্টেট’ এর মাধ্যমে নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছিলেন, তিনিই এখন সেই রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যক্তিগত প্রতিশোধের হাতিয়ার বানাচ্ছেন বলে সমালোচনা চলছে। বার্তাসংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে।
ক্ষমতা কুক্ষিগত করা
ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার পর থেকেই নতুন আইনের সুযোগ নিয়ে ওয়াশিংটনে ফেডারেল এজেন্ট ও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন। তিনি হুমকি দিয়েছেন, ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য শহরেও একই পদক্ষেপ নিতে পারেন। এমনকি প্রমাণ ছাড়াই একজন ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নরকে বরখাস্তও করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তহবিল বন্ধ করেছেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন এবং প্রশাসনিক পরিবর্তন আনতে বাধ্য করেছেন। নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাহার করে অভিবাসনবিরোধী কর্মসূচিতে সহযোগিতা নিয়েছেন।
এ ছাড়া, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে দুর্বল মামলা করেও কোটি ডলারের সমঝোতা আদায় করেছেন। বিচারমন্ত্রী পাম বন্ডিকে দিয়ে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস ও সিনেটর অ্যাডাম শিফকে ঘিরে বিশেষ তদন্ত শুরু করিয়েছেন।
সমর্থকদের প্রশ্রয়
ট্রাম্পের সমর্থকরা এসব পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন। কানসাস ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানী ডেভিড এন. স্মিথ বলেন, রাষ্ট্রকে অস্ত্র বানানো তাদের কাছে সমস্যা নয়, বরং সংস্কৃতি যুদ্ধে এটাই তাদের কাঙ্ক্ষিত কৌশল।
তিনি বলেন, সংস্কৃতি যুদ্ধে জয়লাভের জন্য রাষ্ট্রকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা তাদের এজেন্ডার জন্য অপরিহার্য ছিল। ট্রাম্পকে দমনের জন্য রাষ্ট্রকে একত্র করা হলে তারা তা পছন্দ করেনি। কিন্তু তারা নিজেদের পক্ষে সংস্কৃতি যুদ্ধে রাষ্ট্রকে কাজ করতে দেখে খুশি।
‘শুধু প্রথম দিনের স্বৈরশাসক’
২০২৩ সালে নির্বাচনি প্রচারে ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘যদি কেউ আমাকে আক্রমণ করে, আমি তাদের বিরুদ্ধে যাব।’ এক সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে বলেছিলেন, ‘তিনি স্বৈরাচার হবেন না—কেবল প্রথম দিনে বাদে।’
ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অস্ত্রায়ণ’ শেষ করেছেন। কিন্তু পরের মাসেই ডেমোক্র্যাট-ঘনিষ্ঠ একটি আইনজীবী প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে নির্বাহী আদেশ জারি করেন এবং পরে নিজের প্রশাসনের দুই সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন।
এপিসটেমিক লিবারেশন
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইমেরিটাস স্টিভেন লুকস বলেন, ট্রাম্প কেবল ক্ষমতা প্রয়োগই করছেন না, বরং ‘এপিসটেমিক লিবারেশন’ নামে এক নতুন ধারা তৈরি করেছেন—অর্থাৎ প্রমাণ ছাড়াই তথ্য বানিয়ে তা সত্য হিসেবে প্রচার করছেন, যা উদার গণতন্ত্রে অভূতপূর্ব।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতর ঐতিহ্যগত নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর ফলে তিনি আরও অবাধে প্রতিপক্ষকে দমন করতে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন