ফরাসি সংসদের এক কমিশন সুপারিশ করেছে, ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত এবং ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের জন্য রাত ১০টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ‘ডিজিটাল কারফিউ’ আরোপ করা প্রয়োজন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টিকটকের মানসিক প্রভাব নিয়ে ছয় মাসের এক তদন্তে দেখা গেছে, স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি ‘জেনেশুনে শিশু ও তরুণদের বিষাক্ত, বিপজ্জনক ও আসক্তিকর কনটেন্টে আসক্ত করছে।’
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘টিকটককে তাদের মডেল নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করতে হবে।’ তদন্তে কিশোর-কিশোরী এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের সাক্ষ্যও নেওয়া হয়।
টিকটকের পাল্টা যুক্তি
কমিশনের অভিযোগ অস্বীকার করে টিকটক বলেছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হয়েছে এবং এটি শিল্প ও সমাজজুড়ে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে দোষারোপের প্রচেষ্টা। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের কাছে কিশোর-কিশোরী ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৭০টিরও বেশি বিশেষ ফিচার রয়েছে।
তবে ফরাসি সংসদীয় ক্রস-পার্টি কমিশন বলেছে, এসব ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। তারা ক্ষতিকর কনটেন্টের সরবরাহ কমাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি।
শিশুদের সুরক্ষায় কঠোর প্রস্তাব
টিকটক ফাঁদ থেকে শিশুদের মুক্ত করতে কমিশন ৪৩টি সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: ১৫ বছরের নিচে শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধকরণ, রাত ১০টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৫-১৮ বছর বয়সিদের জন্য অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ, স্কুলে মোবাইলফোন নিষিদ্ধকরণ, শিশুদের সুরক্ষায় ব্যর্থ হলে অভিভাবকদের ‘ডিজিটাল অবহেলা’কে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব।
কমিশনের প্রধান লেখক লর মিলার বলেন, ডিজিটাল অবহেলার অভিযোগ বিদ্যমান আইনেরই সম্প্রসারণ। ‘যদি ছয় বছরের শিশু প্রতিদিন সাত ঘণ্টা টিকটক দেখে, প্রশ্ন তোলা যায়—অভিভাবকরা কি সত্যিই তাদের নিরাপত্তা ও নৈতিকতা রক্ষা করছেন?’
ইউরোপে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের তৎপরতা
অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে ১৬ বছরের নিচে শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করেছে। সেই পথে হাঁটছে ইউরোপের কয়েকটি দেশও। ডেনমার্ক ১৫ বছরের নিচে ব্যবহারকারীদের জন্য নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করছে, আর স্পেন সংসদে ১৬ বছরের নিচের শিশুদের জন্য ‘অভিভাবকের অনুমতি’ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার আইন বাস্তবায়ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ২০২৫ সালের শেষে ইউরোপের জন্য ‘সেরা পন্থা’ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন নেওয়া হবে।
টিকটকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্তের সম্ভাবনা
তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান আর্থার দেলাপোর্ট বলেছেন, টিকটক ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহারকারীদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি করেছে—এই অভিযোগ প্যারিস প্রসিকিউটরের কাছে পাঠানো হবে। পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেবে প্রসিকিউটর।
এ ছাড়া, প্ল্যাটফর্ম কিক-এ গত মাসে লাইভ স্ট্রিমে মারা যাওয়া ফরাসি প্রভাবশালী জ্যঁ পোরমানভের মৃত্যুর ঘটনাটিও খতিয়ে দেখার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।
জাতীয় পরিষদ এখন ডিজিটাল খাত ও কনটেন্টের অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে আলোচনা করছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন