২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ২৪ বছর পূর্ণ হলো গতকাল বৃহস্পতিবার। ভয়াবহ সেই ৯/১১ বা নাইন–ইলেভেন হামলার শোক এখনো ভুলতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রবাসী। পুরো দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ এবং নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আল-কায়েদার সন্ত্রাসীরা দুটি উড়োজাহাজ ছিনতাই করে নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের সুউচ্চ জোড়া ভবন বা টুইন টাওয়ারে হামলা চালায়। আরেকটি উড়োজাহাজ আছড়ে পড়ে পেন্টাগনে। হামলা হয় পেনসিলভানিয়াতেও। এসব হামলায় প্রাণ যায় প্রায় ৩ হাজার মানুষের। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা এটি।
ওই সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মানুষদের স্বজনেরা অনেকে গতকাল নিউইয়র্ক, পেন্টাগন ও পেনসিলভানিয়ার শ্যাঙ্কসভিলে আয়োজিত স্মরণসভায় যোগ দেন। এ আয়োজনে বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদেরাও উপস্থিত হন। কেউ কেউ দিনটি নিজের মতো করে পালন করেছেন।
এদিকে ৯/১১ নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ভার্জিনিয়ার পেন্টাগনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের। ম্যানহাটানের গ্রাউন্ড জিরোর এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্সের।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলায় বাবা রবার্ট লিঞ্চকে হারান জেমস। এ বছর তাঁর সঙ্গী ও মাকে নিয়ে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে ৯/১১ বার্ষিকীর এক দিন আগে আয়োজিত এক দাতব্য কর্মসূচিতে অংশ নেন। ওই কর্মসূচিতে অসহায় মানুষের জন্য খাবার প্রস্তুত করতে হাজারো স্বেচ্ছাসেবক যোগ দিয়েছিলন। জেমস বলেন, ‘শোকের ভেতর আনন্দ খুঁজে পাওয়া—আমার কাছে মনে হয় এটা আমার বেড়ে ওঠার এক বড় অংশ।’
এ বছর ১১ সেপ্টেম্বর পরিবারসহ নিজ শহরের নিউ জার্সির কাছাকাছি এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। এরপর দিনটি কাটাবেন সমুদ্রসৈকতে। জেমস বলেন, ‘এ ধরনের শোক—আমার মনে হয় না কখনো চলে যায়।’
এসব আয়োজনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে নীরবতা পালন, নিহত ব্যক্তিদের নাম পাঠসহ নানা আয়োজন থাকছে। হামলার ঘটনাস্থল ছাড়াও দেশজুড়ে মানুষ সেবা কর্মসূচি ও দাতব্য কাজে অংশ নিয়ে ৯/১১ বার্ষিকী স্মরণ করছেন। স্বেচ্ছাসেবকেরা খাবার ও পোশাক সংগ্রহ, পার্ক ও পাড়া পরিচ্ছন্নতা, রক্তদান এবং অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে এ সন্ত্রাসী হামলা বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে বদলে দিয়েছে। এর ফলে শুরু হয় ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’। এ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তান ও ইরাকে হামলা হয়।
এদিকে এ সন্ত্রাসী হামলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা নিহত হলেও যুক্তরাষ্ট্র সরকার দীর্ঘদিন ধরে এ মামলা শেষ করতে পারছে না। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে ষড়যন্ত্রের মূল পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে। সাবেক এই আল-কায়েদা নেতা ২০০৩ সালে পাকিস্তানে গ্রেপ্তার হন এবং পরে কিউবায় গুয়ানতানামো বে-তে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে নেওয়া হয়, তবে এখনো তাঁর বিচার হয়নি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন