বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ১০:২১ পিএম

পুরো গ্রাম বদলে দিল পাকিস্তানের দুই শিশু!

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ১০:২১ পিএম

শিশু ইউটিউবার শিরাজ-মুসকান। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

শিশু ইউটিউবার শিরাজ-মুসকান। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় শিশু ইউটিউবার মুহাম্মদ শিরাজ ও মুসকান। পাকিস্তানের গিলগিট-বালতিস্তানের ছোট্ট গ্রাম ঘুরসেতে তাদের বসবাস। ডিজিটাল পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের একটি জরাজীর্ণ স্কুলকে আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করে দুই ভাইবোন।

ফলে গ্রামে শিশুদের জন্য তৈরি করেছে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ। ক্ষুদে ইউটিউবারের উদ্যোগ শুধুমাত্র স্কুল সংস্কারে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সমাজের উন্নয়নে সোশ্যাল মিডিয়ার সম্ভাব্য ইতিবাচক প্রভাবের একটি অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে বলে মত নেটাগরিকদের।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিরাজের বাবা মুহাম্মদ তাকি প্রথমে একটি ভিডিও প্রকাশ করে স্কুলের দুরবস্থা তুলে ধরেছিলেন।

তাতে দেখা যায়, শিশুদের ইউনিফর্ম, জুতা বা মৌলিক শিক্ষাসামগ্রী ছাড়া পড়াশোনা করতে হচ্ছে। ইসলামাবাদ শহরে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও তাকি জানান, তারা গ্রামের উন্নয়নের জন্য এখানেই থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ঘুরসে গিলগিট বালতিস্তানের অনেক দূরে। এখানে মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাব। আল্লাহ শিরাজকে খ্যাতি দিয়েছেন। আমাদের কাছে দুটি বিকল্প ছিল—ইসলামাবাদে চলে যাই অথবা গ্রামের জন্য কাজ করি। আমরা গ্রামে থেকেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

জরাজীর্ণ স্কুল (বামে) সংস্কারের পর আধুনিক স্কুল (ডানে)। ছবি- সংগৃহীত

শিরাজ ও মুসকান তাদের ভ্লগের মাধ্যমে গ্রাম এবং এর চারপাশের জীবনধারার নানা দিক তুলে ধরেন। শিরাজের ভিডিওতে পাথুরে রাস্তা, ফার্সি স্থাপত্যধর্মী ঘরবাড়ি, স্থানীয় উৎসব এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন রঙিন চিত্র দেখা যায়। মুসকানের হাসিখুশি উপস্থিতি ও আন্তরিক স্বভাব চ্যানেলটিকে আরও জনপ্রিয় করেছে।

তাকি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি দর্শকদের কাছে কিছু ভালো এবং শিক্ষণীয় দেখানোর। আমাদের উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনকে উজ্জীবিত করা।’

স্কুলটি আধুনিকায়নের প্রকল্পটি সম্ভব হয়েছে শিরাজ ও মুসকানের আয়, ফৌজিয়া জাকি এবং তার ভাগনি জেহরা জাইদের অর্থায়ন ও সহায়তার মাধ্যমে। জমি ক্রয়, নির্মাণ এবং স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নে দেড় থেকে দুই বছর সময় লেগেছে। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম রাখা হয়েছে, ‘জাকি  অ্যাকাডেমি’। এখানে প্রশস্ত শ্রেণিকক্ষ, মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা, বিনোদনমূলক স্থান এবং নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ রয়েছে।

শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি জাকি অ্যাকাডেমি মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা এবং সুবিধা প্রদানেও কাজ করছে। ফৌজিয়া ও জেহরা প্রাথমিক বাঁধ নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য পাম্প স্থাপন, সৌর প্যানেল সংযুক্তি এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন। এই উদ্যোগ শুধু শিক্ষার মান উন্নয়ন নয়, পুরো সম্প্রদায়ের জীবনমানের উন্নয়নের দিকেও অবদান রাখছে।

যদিও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। গত বছরের মে মাসে শিরাজ প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে দেখা করে গ্রামের জন্য একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের অনুরোধ করেছিলেন। তাকি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, তবে স্থায়ী সমাধান এখনও হয়নি। গ্রামের মানুষ অস্থায়ী বাঁধ বানিয়েছে, কিন্তু এটি পর্যাপ্ত নয়।’

শিরাজ সম্প্রতি এক ভিডিওতে বলেন, ‘আপনি যে ক্ষেত্রেই কাজ করুন না কেন, আপনার উদ্দেশ্য পরিষ্কার রাখুন। আল্লাহ আপনাকে সফল করবেন। তবে সর্বদা মনে রাখবেন, আপনাকে অন্যদের জন্য জিনিসগুলো সহজ এবং উন্নত করতে হবে, এমনকি ছোট ছোট উপায়েও।’ তাকি একই মনোভাব প্রকাশ করে বলেছেন, কন্টেন্ট নির্মাতাদের মনে রাখতে হবে যে লাখ লাখ মানুষ তাদের কাজ দেখছেন এবং তাদের মাধ্যমে ক্ষতি এড়ানো জরুরি।

শিরাজ ও মুসকানের উদ্যোগ সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক প্রভাবকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। এটি শুধুমাত্র শিক্ষার উন্নয়ন নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা, সম্প্রদায়ের কল্যাণ এবং তরুণ প্রজন্মকে উদ্দীপনা দেওয়ার ক্ষেত্রেও একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পাকিস্তানের এই ছোট্ট গ্রামের গল্প প্রমাণ করে যে সঠিক উদ্দেশ্য এবং সক্রিয় উদ্যোগের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, সমাজের কল্যাণেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

Link copied!