মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই’র সাবেক পরিচালক জেমস কোমির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ করেছে দেশটির বিচার বিভাগ। মিথ্যা বিবৃতি ও কংগ্রেসের তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এতে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তার। কোমির এ ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে কোমি বলেন, ‘বিচার বিভাগের কারণে আমার মন ভেঙে গেছে। তবে কেন্দ্রীয় বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে এবং আমি নির্দোষ। তাই বিচার হোক এবং আস্থা থাকুক।’
২০১৫ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প। তবে গতকাল তার প্রশাসন প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করতে সফল হয়েছে।
ট্রাম্পের আরও কয়েকজন সমালোচকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছে তার বিচার বিভাগ। তাদের মধ্যে রয়েছেন নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস ও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তার জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জন বোল্টন।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক চাপমুক্ত রাখার জন্য দেশটিতে কয়েক দশকের পুরোনো কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। ট্রাম্পের সমালোচক ও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্য দিয়ে এসব নিয়মকানুন লঙ্ঘন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, জেমস কোমির মামলায় দায়িত্বরত ভার্জিনিয়ার ফেডারেল আইনজীবী গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেছেন। কারণ তিনি মামলার প্রমাণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলে ক্ষুব্ধ হন ট্রাম্প। ওই আইনজীবীর অফিসের অন্যরা বলছেন, এগুলো ফৌজদারি অভিযোগ প্রমাণ করার উপযুক্ত নয়।
ট্রাম্প কোমি ও অন্য সমালোচকদের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে চাপ দিয়েছিলেন। গতকাল জেমস কোমির বিরুদ্ধে অভিযোগের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ন্যায়বিচার!’ ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘তিনি (কোমি) এত দিন ধরে আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন।’
ট্রাম্প ২০১৭ সালে তার প্রথম মেয়াদের শুরুতে কোমিকে বরখাস্ত করেছিলেন। এর পর থেকে নিয়মিতভাবে তিনি কোমির অধীন এফবিআইয়ের তদন্ত কার্যক্রমের সমালোচনা করে আসছেন। এমনই এক তদন্তে বলা হয়েছিল, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় ট্রাম্পকে সহযোগিতা করতে চেয়েছিল রাশিয়া।
কোমির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কিন সিনেটের এক শুনানিতে কোমি দাবি করেন, তিনি কোনো এফবিআই কর্মকর্তাকে গণমাধ্যমে বেনামি সূত্র হিসেবে কথা বলার অনুমতি দেননি। আইনজীবীরা বলেছেন, এ বক্তব্য মিথ্যা ছিল। শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রেখে আইন প্রণয়নের কাজ ব্যাহত করার অভিযোগও আনা হয়েছে কোমির বিরুদ্ধে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন