ইসরায়েলি পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী শ্যারেন হাসকেল ব্রিটেনের ম্যানচেস্টারে হামলার শিকারদের স্মরণে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে উপস্থিত হন। ভাষণের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘একজন ইহুদি হিসেবে আমি তোমাদের রাস্তায় নিরাপদ নই।’
সম্প্রতি ম্যানচেস্টারের ক্রাম্পসল এলাকায় একটি সিনাগগে ইহুদি-বিরোধী হামলায় অন্তত দুইজন নিহত ও চারজন আহত হন। ২ অক্টোবর হিটন পার্ক হিব্রু মণ্ডলীর ওই সিনাগগে এক ব্রিটিশ-সিরিয়ান নাগরিক জিহাদ আল-শামি হামলা চালান বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পরে গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ঘটনাস্থলে এক হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা ও আরেকজনকে আহত করা হয়েছে।
হামলার পর ব্রিটেনে প্রবেশের অনুমতি পান ইসরায়েলি উপমন্ত্রী শ্যারেন হাসকেল। রোববার ম্যানচেস্টারে শতাধিক মানুষের সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হচ্ছে, কেবল আমার অস্তিত্বের কারণেই। আমি এখন তোমাদের সামনে বুলেটপ্রুফ কেভলার জ্যাকেট পরে দাঁড়িয়ে আছি, এটা ছাড়া আমার এখানে থাকার অনুমতি নেই।’
হাসকেল এর আগে ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। তারা অভিযোগ করেন, ইসরায়েল সফরের সময় হাসকেল গোপনে ভিডিও ধারণ করে ইনস্টাগ্রামে তা অবমাননাকর মন্তব্যসহ পোস্ট করেছিলেন।
রোববারের অনুষ্ঠানে হাসকেল তার সরকারের বিতর্কিত নীতিনির্ধারকদের সমালোচনা এড়িয়ে যান। তিনি ইসরায়েলি প্রবাসী বিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলির বিতর্কিত ঘোষণা নিয়েও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
গত শুক্রবার চিকলি ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি চলতি মাসে যুক্তরাজ্যের অতি-ডানপন্থী রাজনীতিক ও দোষী সাব্যস্ত টমি রবিনসনকে ইসরায়েলে আতিথ্য দেবেন।
চ্যানেল ৪ নিউজের প্রশ্নে হাসকেল বলেন, ‘মানুষের তাদের মনের কথা বলার অধিকার আছে।’ একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাজ্যে ইহুদি-বিরোধী মনোভাব মোকাবেলায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তবে তিনি মিথ্যাভাবে দাবি করেন যে, ম্যানচেস্টার হামলাকারী একজন অভিবাসী ছিলেন।
অন্যদিকে, মন্ত্রী চিকলির এই পদক্ষেপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রধান দুটি সংগঠন বোর্ড অব ডেপুটিজ (বিওডি) ও জিউইশ লিডারশিপ কাউন্সিল (জেএলসি)। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, টমি রবিনসনের উপস্থিতি ‘ইসলামী চরমপন্থার বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে কাজ করা ব্যক্তিদের প্রচেষ্টা দুর্বল করবে’।
টমি রবিনসন, যার আসল নাম স্টিফেন ইয়াক্সলি-লেনন, ব্রিটেনে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামবিরোধী বক্তব্য ও সহিংস আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। গত দুই দশকে তিনি ফুটবল হুলিগানিজম, জালিয়াতি, মাদক রাখা, আদালত অবমাননা ও হুমকিমূলক আচরণের অভিযোগে একাধিকবার কারাগারে গেছেন। তাকে ইহুদি-বিরোধী মন্তব্যের অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
রবিনসন জানিয়েছেন, ১৩ অক্টোবর আদালতে হাজিরার পর তিনি ইসরায়েল সফরে যাবেন এবং ইসরায়েলি সরকারের আমন্ত্রণে তার যাতায়াত ও থাকার ব্যয়ভার বহন করা হবে। তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও নেসেট পরিদর্শনেরও কথা বলেছেন।
এর জবাবে বিওডি ও জেএলসি আবারও বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এই সফর ইসরায়েল ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার সামাজিক সংহতি ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রচেষ্টা ব্যাহত করবে।’
শনিবার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী চিকলি বলেন, ‘বোর্ড এখন বামপন্থী ও ফিলিস্তিনপন্থী দলগুলোর সঙ্গে প্রকাশ্যে জোট বেঁধেছে।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘ম্যানচেস্টারে ইহুদিদের হত্যার কয়েক ঘণ্টা পরও তারা সরকারের কাছে জবাবদিহি চাওয়ার বদলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলতে ছুটে গেছে।’
এরপর রোববার সন্ধ্যায় হাসকেল ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনোচের সঙ্গে সাক্ষাতের একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘আমরা ইউরোপজুড়ে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে, ইহুদি-বিরোধিতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলেছি। ম্যানচেস্টারের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে, ঘৃণা শেষ পর্যন্ত কী ভয়াবহতা ডেকে আনতে পারে।’
তিনি একই দিনে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত কনজারভেটিভ পার্টির বার্ষিক সম্মেলনে ‘কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব ইসরায়েল’-এর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দেন।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন