শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ০৪:১০ পিএম

বিশ্লেষণ

‘ফোর-বি আন্দোলন’ কী, কীভাবে শুরু হলো?

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ০৪:১০ পিএম

ফোর-বি আন্দোলন। ছবি- সংগৃহীত

ফোর-বি আন্দোলন। ছবি- সংগৃহীত

লিঙ্গ বৈষম্য ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তরুণীদের মধ্যে এক নতুন চিন্তাধারা ছড়িয়ে পড়ছে। এর নাম ‘ফোর-বি আন্দোলন’—এটি এমন একটি আন্দোলন যেখানে নারীরা যৌন সম্পর্ক, প্রেম, বিবাহ ও সন্তান ধারণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় এক দশক আগে নারী বিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে শুরু হলেও এখন এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

ফোর-বি আন্দোলন কী?

ফোর-বি আন্দোলনের মূল চারটি নীতি রয়েছে, যা কোরিয়ান ভাষায় প্রকাশিত। তবে এই শব্দগুলো সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রত্যেকটি শব্দের শুরুতে ‘বি’ অক্ষর রয়েছে। যেমন: (১) বিহোন (বিবাহ নয়), (২) বিচুলসান (সন্তান জন্ম নয়), (৩) বিয়োনে (ডেটিং নয়), (৪) বিসেক্স (যৌন সম্পর্ক নয়)।

এই আন্দোলনের মুখপাত্ররা মনে করেন, ‘আমরা এমন এক সমাজে আছি, যেখানে সম্পর্কের ক্ষমতার ভারসাম্য নারীদের বিরুদ্ধে কাজ করে, সেখানে এসব সম্পর্ক থেকে বিরত থাকাই আমাদের আত্মরক্ষার একটি রূপ।’

তাদের মতে, ফোর-বি কেবল পুরুষদের প্রত্যাখ্যানের আন্দোলন নয়, বরং নারীর প্রতি বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে একপ্রকার আত্মনির্ভরশীল অবস্থান।

সম্প্রতি আন্দোলনের সঙ্গে আরও দুটি বিষয় যুক্ত হয়েছে, নারী-বিরোধী পণ্য বর্জন এবং এমন পুরুষদের সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলা যারা নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না। এর মাধ্যমে নারী-মালিকানাধীন ব্যবসা, সৃষ্টিশীল উদ্যোগ ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

কীভাবে শুরু হলো ফোর-বি?

ফোর-বি আন্দোলনের জন্ম দক্ষিণ কোরিয়ায়, ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে। এর শিকড় রয়েছে আগের নারীবাদী আন্দোলনগুলোতে—যেমন: ‘এস্কেপ দ্য কর্সেট’, যা নারীদের অবাস্তব সৌন্দর্যের মানদণ্ড থেকে মুক্তি পেতে আহ্বান জানিয়েছিল, এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ‘#MeToo আন্দোলন’, যা যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীদের কণ্ঠকে একত্র করেছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজ দীর্ঘদিন ধরেই পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোয় আবদ্ধ। নারীদের কাছ থেকে এখনো ‘বাবার অনুগত কন্যা’ ও ‘সুন্দরী স্ত্রী’ হওয়ার প্রত্যাশা করা হয়। ফোর-বি আন্দোলনের অনুসারীরা এই সংস্কৃতিকে ‘গভীরভাবে পুরুষতান্ত্রিক’ এবং ‘নারী-বিরোধী’ বলে মনে করেন।

তবে আন্দোলনের উত্থান শুধু সামাজিক নয়, অর্থনৈতিক কারণেও। দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম উচ্চশিক্ষিত নারী জনগোষ্ঠীর একটি দেশ হলেও একই সঙ্গে এটি অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বৈষম্যমূলক দেশগুলোর একটি।

২০২৩ সালে দেশটিতে নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম আয় করেছেন, যা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবধান।

এ ছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ, নেতৃত্বের পদে উপস্থিতি ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এখনো খুবই কম। ফলে শিক্ষিত নারীদের এক বড় অংশই বিবাহ ও মাতৃত্বের প্রচলিত ভূমিকা থেকে সরে গিয়ে নিজেদের পথ খুঁজছেন।

২০১৬ সালে সিউলের এক তরুণীর নির্মম হত্যাকাণ্ড ছিল এ আন্দোলনের মোড় ঘোরানোর এক নতুন মুহূর্ত। ঘটনাটি নারী বিদ্বেষমূলক সহিংসতার প্রতীক হয়ে দাড়ায় এবং হাজারো নারী রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান। এরপর থেকে অনলাইনে নারী-বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর বিষাক্ত বক্তব্য এবং সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর ‘ডিপফেক’ পর্নোগ্রাফির প্রসার আরও অনেক নারীকে ফোর-বি চিন্তাধারার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নারী-সমতা নীতি ও তহবিল কমে যাওয়া—যেমন পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ কর্মসূচির বাজেট হ্রাস এবং শিক্ষাক্রম থেকে ‘লিঙ্গ সমতা’ শব্দ বাদ দেওয়া—এই আন্দোলনের প্রতি ক্ষোভকে আরও গভীর মনে করা হচ্ছে।

কতটা বিস্তৃত এই আন্দোলন?

দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহার এখন বিশ্বের সবচেয়ে কম। সরকারের পক্ষ থেকে নারীকে সন্তান জন্মে উৎসাহিত করতে নানা প্রকল্প নেওয়া হলেও, অনেক নারী সেটিকে তাদের স্বাধীনতার প্রতি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। ২০১৬ সালে সরকার যখন ‘প্রজনন বয়সি নারীদের মানচিত্র’ প্রকাশ করেছিল, তখন তা নারীদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

এভাবে রাষ্ট্রীয় নীতি, সামাজিক চাপ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের জালে বন্দি হয়ে অনেক নারী ৪-বি আন্দোলনকে বেছে নিচ্ছেন জীবনের বিকল্প দর্শন হিসেবে।

ফোর-বি আন্দোলন কোনো সংগঠিত প্রতিষ্ঠান নয়—নেই কোনো নেতা, অফিস, বা আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইট। এটি মূলত অনলাইন সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে উঠেছে, যেখানে নারীরা একে অন্যের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগ করেন ও মানসিক আশ্রয় পান।

তবে, আন্দোলনের ভেতরেও মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, ফোর-বি মানেই পুরুষদের সম্পূর্ণ বর্জন; কেউ বলেন, এটি কেবল একটি রাজনৈতিক অবস্থান। লেসবিয়ান নারীরা এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও ট্রান্স নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে

ফোর-বি আন্দোলন এখন কোরিয়ার সীমা ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের প্রজনন অধিকার সংকুচিত হওয়া ও সামাজিকভাবে নারীবিদ্বেষী প্রবণতা বৃদ্ধির পর, অনেক তরুণী ফোর-বি ভাবনাকে ‘প্রতিবাদের ভাষা’ হিসেবে গ্রহণ করছেন। তবে সেখানে এটি দক্ষিণ কোরিয়ার মতো জীবনদর্শনে রূপ নেয়নি, বরং একটি ‘অস্থায়ী প্রতিবাদ বা জীবনধারার পছন্দ’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

চীনে আবার আন্দোলনটি অন্যভাবে রূপ নিয়েছে। সেখানে এটি রাষ্ট্রনির্ধারিত নারীত্বের ধারণার বিরুদ্ধে ‘নীরব অবাধ্যতা’ হিসেবে বিকশিত হয়েছে। অনেক নারী বিয়ে ও মাতৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, ‘নারীরা এখন আর পুরুষের উপর নির্ভরশীল নয়।’

Link copied!