ক্রোয়েশিয়ার সংসদ ১৭ বছরের বিরতির পর পুনর্বহাল করা বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবার পক্ষে ভোট দিয়েছে। দেশটি ২০০৮ সালে এই খসড়াটি বাতিল করে সম্পূর্ণ পেশাদার সেনাবাহিনীতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। প্রতি বছর প্রায় ১৮ হাজার পুরুষ ১৮ বছর বয়সে দুই মাসের প্রশিক্ষণের জন্য নিয়োগ করা হবে।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক এইচআরটি জানিয়েছে, নতুন আইনের অধীনে প্রতি বছর প্রায় ১৮ হাজার নিয়োগপ্রাপ্তকে পাঁচটি দলে ভাগ করে ক্রোয়েশিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোতে দুই মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য ডাকা হবে।
এই কর্মসূচির বার্ষিক খরচ আনুমানিক ২৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন ইউরো। অংশগ্রহণকারীরা মাসে প্রায় ১ হাজার ১০০ ইউরো পাবেন এবং ভ্রমণ, ছুটি ও জমা দেওয়া কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করবেন। প্রথম ব্যাচ ২০২৬ সালের শুরুতে শুরু হবে।
ক্রোয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইভান আনুসিক জানিয়েছেন, দেশটি ‘বিভিন্ন ধরণের হুমকির বৃদ্ধি দেখছে, যার জন্য বৃহত্তর সম্প্রদায়ের কাছ থেকে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন’।
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অনুরূপ চ্যালেঞ্জের কারণে সৈন্য নিয়োগ পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এই পদক্ষেপ ক্রোয়েশিয়াকে ন্যাটো ও ইইউ দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান তালিকায় যুক্ত করছে যারা সামরিক নিয়োগ পুনরুজ্জীবিত বা সম্প্রসারণ করছে। সুইডেন ২০১৭ সালে একই খসড়া ফিরিয়ে এনেছে এবং রিজার্ভের বয়সসীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া তাদের বাধ্যতামূলক পরিষেবা পুনর্বহাল করেছে, অন্যদিকে এস্তোনিয়া ও ফিনল্যান্ড বার্ষিক নিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। পোল্যান্ডও এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে বিবেচনা করছে।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা ২০২২ সালে ইউক্রেনে সংঘাতের তীব্রতার পর থেকে রাশিয়ার হুমকি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তাদের মতে, রাশিয়া ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, যার ফলে পুরো ব্লক জুড়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
ন্যাটো সদস্য দেশগুলো ‘রাশিয়ান হুমকি’ উল্লেখ করে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মস্কো এই অভিযোগগুলোকে ‘অযৌক্তিক’ এবং ভয় দেখানোর প্রচেষ্টা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার মতে, পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ‘বেপরোয়া সামরিকীকরণ’ হিসেবে দেখা উচিত।
ক্রোয়েশিয়ার এই পদক্ষেপ নতুন করে নির্দেশ করছে, যেভাবে ইউরোপীয় দেশগুলো নিরাপত্তার জন্য সামরিক নীতি পুনর্মূল্যায়ন করছে। এছাড়া, বর্তমান আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং ন্যাটো ও ইইউর নিরাপত্তা পরিকল্পনা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন