ঢাকা শনিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫

মালিতে বাড়ছে সরকার পতনের শঙ্কা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ০৪:০০ পিএম
মালিতে আন্দোলন। ছবি - সংগৃহীত

পশ্চিম আফ্রিকার স্থলবেষ্টিত দেশ মালি এখন ভয়াবহ সংকটে। আল-কায়েদার সাহেল শাখা জামা’আত নুসরাত উল-ইসলাম ওয়া আল-মুসলিমিন (জেএনআইএম) দেশটির জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, এর ফলে রাজধানী বামাকোতে সরকার পতনের আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জেএনআইএম বিদ্রোহীরা সেনেগাল ও আইভরি কোস্ট থেকে আসা জ্বালানি ট্রাকগুলোর ওপর ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে। ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, চালকদের অপহরণ করা হচ্ছে, এবং সীমান্তপথে জ্বালানি পরিবহন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

ফলাফল- দেশজুড়ে তীব্র বিদ্যুৎ বিভ্রাট, যানবাহনের জ্বালানির ঘাটতি এবং দীর্ঘ সারি। প্রায় দুই কোটি দশ লাখ মানুষের দেশটিতে জ্বালানির ৯৫ শতাংশই আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে, তাই এই অবরোধে গোটা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, জেএনআইএম এখন শুধু সামরিক নয়, অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেছে। তাদের উদ্দেশ্য- জনগণকে বোঝানো যে বর্তমান সরকার তাদের রক্ষা বা জীবনযাপন নিশ্চিত করতে অক্ষম।

এই কৌশল অনেকটা আফগানিস্তানে তালেবান ও সিরিয়ায় হায়াত তাহরির আল-শামের প্রাথমিক পদক্ষেপের মতো, যারা স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের সহানুভূতি অর্জন করে পরবর্তীতে ক্ষমতা দখল করেছিল।

জেএনআইএম এরই মধ্যে মালির বিভিন্ন শহরে শরিয়া আইন প্রয়োগ শুরু করেছে। ফারাবুগোতে নারীদের মাথা ঢেকে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে এবং ধর্মনিরপেক্ষ সঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

রাজধানী বামাকোর দিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহীরা পরিবহন ব্যবস্থায় পুরুষ ও নারীদের আলাদা বসার নিয়ম চালু করেছে। তবে জ্বালানি অবরোধের কারণে এখন শহরে প্রবেশ বা ত্যাগ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

জেএনআইএম-এর নেতৃত্বে রয়েছেন দুই প্রভাবশালী জিহাদি নেতা- আইয়াদ আগ-ঘালি ও আমাদু কৌফা। সংগঠনটি গঠিত হয়েছে একাধিক গোষ্ঠীর জোট হিসেবে- আনসার ডাইন, আল-মুরাবিতুন, একিউআইএম ও ম্যাকিনা লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএম) তাদের প্রধান অংশীদার।

এই গোষ্ঠীগুলো স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ছোট ছোট চুক্তি ও মধ্যস্থতা করে ছায়া প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করছে, যা দেশের সরকারি শাসনব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করছে।

পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি ও জার্মানি তাদের নাগরিকদের অবিলম্বে মালি ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে। বর্তমান সামরিক সরকার, যা আসিমি গোইতার নেতৃত্বে ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে, এখন রাশিয়ান ভাড়াটে বাহিনী- প্রথমে ওয়াগনার গ্রুপ এবং পরে তার উত্তরসূরি আফ্রিকা কর্পস- এর ওপর নির্ভর করছে।

মালিতে রাশিয়ান ভাড়াটেদের উপস্থিতি আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ২০২২ সালের মার্চে মৌরা গণহত্যায় ৫০০ জনেরও বেশি বেসামরিক নিহত হয়। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে টিনজাওয়াতেনে তুয়ারেগ ও জিহাদি জোটের হামলায় ৮৪ জন রাশিয়ান ভাড়াটে ও ৫০ জন মালিয়ান সৈন্য নিহত হয়।

এসব ঘটনার ফলে জনগণের আস্থা আরও ক্ষয় হয়েছে, আর গ্রামীণ অঞ্চলে জেএনআইএমের প্রতি সহানুভূতি বেড়েছে।

জেএনআইএম বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার যোদ্ধা নিয়ে সক্রিয়, যারা মালি, বুরকিনা ফাসো, নাইজার, বেনিন, টোগো ও ঘানায় ছড়িয়ে আছে। সম্প্রতি তারা নাইজেরিয়ার কোয়ারা রাজ্যে প্রথমবারের মতো হামলার দাবি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, যদি মালির সরকার পতিত হয়, তবে পুরো পশ্চিম আফ্রিকায় ডমিনো প্রভাব তৈরি হবে, যা জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর জন্য এক বিশাল নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হতে পারে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মালি ইকোওয়াস থেকে বেরিয়ে যায়, যা দেশের নিরাপত্তা দুর্বল করে দিয়েছে। যদিও মালি, নাইজার ও বুরকিনা ফাসো মিলে অ্যালায়েন্স অফ সাহেল স্টেটস (এইএস) নামে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে, তবুও এখন পর্যন্ত সেটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।

বিশ্লেষকদের মতে, জেএনআইএম এখন এমন অবস্থানে রয়েছে যেখানে তারা চাইলে বামাকোর দিকে অভিযান শুরু করতে পারে, তবে তা তাদের শক্তি ছড়িয়ে দেবে বলেই আপাতত কৌশলগত অপেক্ষায় আছে।

তবুও, হঠাৎ আক্রমণের সম্ভাবনা অস্বীকার করা যাচ্ছে না- যেমনটি হয়েছিল ২০২১ সালে তালেবানের কাবুল দখল বা ২০২৪ সালে সিরিয়ার এইচটিএস হামলায়।