একের পর এক কেলেঙ্কারি ও গুরুতর অভিযোগের জেরে রাজকীয় সব পদ-পদবি হারিয়েছেন ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পুত্র প্রিন্স অ্যান্ড্রু । রাজা তৃতীয় চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে সব সামরিক পদবি এবং রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এই অপমানজনক ঘটনার পর অ্যান্ড্রু এখন শুধু অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর নামে পরিচিত হবেন।
পদবি হারানোর এই গুরুতর অপমানের মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি ভয়াবহ অভিযোগ সামনে এসেছে। রয়্যাল ইতিহাসবিদ ও লেখক অ্যান্ড্রু লাউনি দাবি করেছেন, ব্রিটেনের জনগণের টাকায় থাইল্যান্ডে সরকারি সফরে গিয়ে অ্যান্ড্রু চার দিনের মধ্যে ৪০ জন যৌনকর্মীকে তাঁর পাঁচতারা হোটেলে এনেছিলেন।
লেখক অ্যান্ড্রু লাউনি ‘ডেইলি মেইল পডকাস্ট’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেন। নিউইয়র্ক পোস্টসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জীবনীকার লাউনি অভিযোগ করেন, ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে যখন অ্যান্ড্রু যুক্তরাজ্যের সরকারি বাণিজ্য দূত হিসেবে কাজ করতেন, তখন তিনি বহুবার ব্রিটিশ করদাতাদের অর্থে বিদেশ সফর করেছেন। এই সফরগুলোতে তিনি সব সময় দূতাবাসে থাকার পরিবর্তে বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেলে থাকতেই পছন্দ করতেন।
লাউনি বলেন, ‘২০০১ সালে অ্যান্ড্রুর বয়স ছিল ৪১, তাঁর ‘মধ্যবয়সের সংকট’ চলছিল, এবং তিনি প্রচুর নারীর পেছনে ছুটতে শুরু করেন।’ লাউনি আরও যোগ করেন, অ্যান্ড্রু এই সরকারি সফরের অজুহাতে সব সময় দুই সপ্তাহের জন্য ‘ব্যক্তিগত সময়’ রাখতেন। এই অভিযোগে একাধিক সূত্র, এমনকি একজন জ্যেষ্ঠ থাই কর্মকর্তাও সমর্থন করেছেন বলে লাউনি দাবি করেন।
প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ভাবমূর্তি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মার্কিন যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা প্রকাশের পর। অ্যান্ড্রু বহু বছর আগেই এপস্টেইনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার দাবি করলেও পরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, তিনি সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
এই বিতর্কের মধ্যেই এপস্টেইনের অন্যতম প্রধান অভিযোগকারী ভার্জিনিয়া রবার্টস জিউফ্রের মরণোত্তর প্রকাশিত আত্মজীবনী সামনে আসে। জিউফ্রে, যিনি গত এপ্রিলে আত্মহত্যা করেন, তিনি দীর্ঘকাল ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন, কিশোরী থাকাকালে অ্যান্ড্রুর সঙ্গে যৌনকর্মে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। এই প্রকাশনার ফলে রাজপরিবারের ওপর চাপ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। প্রিন্স অ্যান্ড্রু অবশ্য শুরু থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই ধরনের সব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসবিদ লাউনি অভিযোগ করেন, সদ্য সাবেক প্রিন্সের বিতর্কিত কার্যকলাপ নিয়ে রাজকীয় এবং সরকারি মহলে একটি ‘নীরবতা’ ছিল। তিনি যুক্তি দেন, অ্যান্ড্রু বাণিজ্য দূতের পদ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য দেখা করতে চেয়েছেন—এমন ব্যক্তিদের তালিকা পাঠাতেন।
লাউনি ব্রিটিশ ন্যাশনাল আর্কাইভসের কাছে জরুরি ভিত্তিতে নথি প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তাঁর বাণিজ্য দূত হিসেবে ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত করা সব নথি এখনো বাক্সবন্দী রাখা হয়েছে। সেগুলো ন্যাশনাল আর্কাইভসে থাকা উচিত। সেগুলো বাক্সবন্দী রাখা হয়েছে, এবং এটাই অ্যান্ড্রুকে ঘিরে থাকা “নীরবতার ষড়যন্ত্রের” অংশ, এটা আমাদের ভাঙা দরকার।’



