ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

বিতর্কিত সংবিধান সংশোধনী, পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে আজীবন দায়মুক্তি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

পাকিস্তানের সংসদ দেশটির সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বাড়ানো এবং সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার সীমিত করার সংবিধান সংশোধনী বিল অনুমোদন করেছে। সমালোচকরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত দেশটির গণতন্ত্রের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

বুধবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় পরিষদে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোটে বিলটি পাস হয়। মাত্র চারজন আইনপ্রণেতা এর বিরোধিতা করেন। এর আগে সোমবার সিনেটেও বিরোধী দলের বয়কটের মধ্য দিয়ে বিলটি পাস হয়। প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করলে এটি আইনে পরিণত হবে।

সংশোধনী অনুযায়ী, সেনাপ্রধান আসিম মুনির এখন প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌ ও বিমানবাহিনীও তার অধীনে আসবে। মেয়াদ শেষে তিনি পদমর্যাদা ও আজীবন আইনি দায়মুক্তি পাবেন।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই সংশোধনীকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক ঐক্য ও জাতীয় সংহতির পথে একটি পদক্ষেপ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা যখন এটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছি, এটি কেবল ফিল্ড মার্শাল নয়, বিমান ও নৌবাহিনীর স্বীকৃতিও বটে। জাতি তাদের বীরদের সম্মান করতে জানে।’ তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই পরিবর্তনে ক্ষমতা আরও বেশি কেন্দ্রীভূত হচ্ছে সেনাবাহিনী ও শাসক জোটের হাতে।

সংশোধনী অনুসারে, সংবিধানসংক্রান্ত মামলা আর সুপ্রিম কোর্টে নয়, যাবে নতুন গঠিত ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্টে। এই আদালতের বিচারপতি নিয়োগ দেবে সরকার। গত কয়েক বছরে সুপ্রিম কোর্ট সরকারের নীতির বিরুদ্ধে রায় দিয়ে বেশ কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করেছে।

বিলের ভোটের আগে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের সংসদ সদস্যরা সংসদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান ও বিলের অনুলিপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান। দলের মুখপাত্র জুলফিকার বুখারি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থার ধ্বংসে কেউই উদ্বিগ্ন নন। আজ পাকিস্তানের সংবিধানকে কবরে শুইয়ে দেওয়া হলো।’

আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এই সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে। সংবিধানবিদ আসাদ রহিম খান বলেন, ‘আমরা এক অনাবিষ্কৃত পথে প্রবেশ করেছি। এটি একটি বিচারিক ব্যবস্থার ভাঙন, যা প্রায় এক শতাব্দীতে দেখা যায়নি।’

আরেক সংবিধানবিদ মির্জা মইজ বেগ বলেন, এই সংশোধনী স্বাধীন বিচার বিভাগের ‘মৃত্যুঘণ্টা’। এতে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট নতুন আদালতের প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি নিয়োগে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাবেন। এতে সরকারের ওপর আদালতের নজরদারি দুর্বল হবে। বেগ বলেন, ‘এই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের সংসদ আজ এমন কিছু করে দেখাল, যা অতীতের স্বৈরশাসকেরাও কেবল স্বপ্নেই ভেবেছিলেন।’