নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় নাইজার রাজ্যে মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননার অভিযোগে এক নারীকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে জনতা। হত্যার শিকার আমায় একজন মুদি দোকানদার। একে ‘বর্বরোচিত হত্যা’ বলে নিন্দা জানিয়েছে পুলিশ। অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের জন্য তদন্ত শুরু করেছে তারা। খবর বিবিসির।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, উত্তর নাইজেরিয়ার কাসুওয়ান-গারবা শহরে এক ব্যক্তি ঠাট্টা করে একজন দোকানদারকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কিছু লোক তার এই আচরণকে ধর্মনিন্দা হিসেবে মনে করেন।
রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র ওয়াসিউ আবিওদুন জানিয়েছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, একদল লোকের প্রত্যক্ষ মদদ ও আক্রমণে এই ঘটনা সংঘটিত হয়। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী পৌঁছানোর আগেই তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়।’ তিনি শনিবারের এই হত্যাকাণ্ডের পর জনগণকে শান্ত থাকার এবং আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
উত্তর নাইজেরিয়ায় এই ধরনের হত্যাকাণ্ড অস্বাভাবিক নয়। ইসলামিক (শরিয়া) আইনের অধীনে ধর্মনিন্দাকে একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা ১২টি মুসলিমপ্রধান রাজ্যে ধর্মনিরপেক্ষ আইনের পাশাপাশি কার্যকর।
অধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, উত্তর নাইজেরিয়ায় প্রায়ই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ধর্ম অবমাননাকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একটি ছোটখাটো মতবিরোধ বা তর্ক, যা প্রায়ই ইচ্ছাকৃতভাবে সাজানো হয়। ফলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে এবং তারপর জনতা অভিযুক্তকে তাৎক্ষণিকভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।’
গত তিন বছরে এমন অভিযোগে অন্তত আরও দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সমালোচকরা বলেন, মুসলিম ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
২০২২ সালে সোকোটো রাজ্যে ছাত্রী ডেবোরা স্যামুয়েলকে ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে পিটিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। পরের বছর একই রাজ্যে উসমান বুদা নামে একজন কসাইকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়।
যদিও নাইজেরিয়ার সংবিধান বাকস্বাধীনতাকে সমর্থন করে। কিন্তু বাস্তবে দেশটিতে ব্যক্তি বিশ্বাস ও ন্যায়বিচারের বিষয়ে তীব্র দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। নাইজেরিয়ার সুপ্রিম কোর্টও অতীতে রায় দিয়েছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অবশ্যই আদালতে প্রমাণিত হতে হবে।