সুদানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দারফুরের এল-ফাশের শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর হাতে সংঘটিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের প্রমাণ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রাইটস ল্যাব (এইচআরএল)। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এল-ফাশের পতনের পর সুদান সেনাবাহিনী (SAF) শহরের বিস্তীর্ণ অংশে নির্বিচারে বিমান হামলা চালায়। উভয় পক্ষের হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। একই সঙ্গে আরএসএফের দীর্ঘ অবরোধের কারণে শহরের কিছু অংশে প্রায় ১৫ মাস ধরে আইপিসি-৫ পর্যায়ের দুর্ভিক্ষ চলছে—যা দুর্ভিক্ষ সূচকের সর্বোচ্চ ও প্রাণঘাতী ধাপ।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অনুসন্ধানটি সোমবার (২৭ অক্টোবর) স্যাটেলাইট চিত্র, উন্মুক্ত উৎস এবং রিমোট সেন্সিং ডেটা বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনটি বলছে, ‘এল-ফাশের এখন একটি সুসংগঠিত ও পরিকল্পিত জাতিগত নিধনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ফুর, জাঘাওয়া ও বের্তি নামের আদিবাসী অ-আরব সম্প্রদায়গুলোকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে এবং নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে।’
আরএসএফ বহুদিন ধরেই দারফুরে অ-আরব জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত। মানবাধিকার সংস্থা, সহায়তা সংস্থা এবং বিশ্লেষকরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, যদি এল-ফাশের শহরটি আরএসএফ দখলে নিতে পারে, তবে সেখানে বৃহৎ গণহত্যা ও গণউচ্ছেদ ঘটতে পারে। ইয়েল এইচআরএলের প্রতিবেদনে প্রকাশিত স্যাটেলাইট ছবিতে এমন কিছু ‘বস্তুর গুচ্ছ’ ও ভূমির রঙ পরিবর্তনের চিহ্ন দেখা গেছে, যা গবেষকরা মানবদেহের উপস্থিতির সম্ভাব্য প্রমাণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
এই তথ্য স্থানীয় মানবিক সংস্থার প্রতিবেদনগুলোকেও সমর্থন করে, যেখানে মাটিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, হত্যাকাণ্ড, আটক অভিযান এবং হাসপাতালের ওপর আক্রমণের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘আরএসএফের কার্যক্রম যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে, এমনকি তা গণহত্যার পর্যায়েও পৌঁছাতে পারে।’
২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানে আরএসএফ ও সুদানি সেনাবাহিনীর (SAF) মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এই সংঘাত এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ কোটি ২০ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই সংঘাতের কারণে সুদান আবারও ভেঙে যেতে পারে—দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার এক দশকেরও বেশি সময় পর পুনরায় বিভক্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে দারফুর অঞ্চল আরএসএফের শক্ত ঘাঁটি, আর রাজধানী খার্তুমসহ দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল সুদানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত অসংখ্য ভিডিওতে আরএসএফ এর হাতে গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, আরএসএফ এর সন্ত্রাসীরা সাধারণ জনগণকে বসিয়ে আরএসএফ সর্বোচ্চ কমান্ডার মোহাম্মদ হামদান (হেমিদিতি) এর নামে স্লোগান দিতে বাধ্য করে, তারপর সবাইকে সিরিয়ালি গুলি করে মেরে ফেলে।
এদিকে সুদানি সরকারি যৌথ বাহিনী দাবি করেছে, গত রবিবার এল-ফাশের শহর দখলের পর এই দুই দিনে আমিরাত সমর্থিত আরএসএফ বাহিনী ২ হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে।
এই সংঘাতের মধ্যেই সম্প্রতি ‘দ্য কোয়াড’, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্তর্ভুক্ত—একটি নতুন আলোচনার রূপরেখা প্রকাশ করেছে, যার লক্ষ্য হলো সুদানের যুদ্ধের অবসান ঘটানো।



