ঢাকা শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

‘অনৈতিকতা’ রুখতে আফগানিস্তানে ইন্টারনেট নিষিদ্ধ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম
আফগানিস্তানে ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করায় সর্বাধিক ক্ষতির মুখে নারী উদ্যোক্তারা। ছবি- সংগৃহীত

আফগানিস্তানে ফাইবার-অপটিক নেটওয়ার্ক পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায় হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। কান্দাহারের একটি ছোট ঘরে উজ্জ্বল কাপড়ে সূচিকর্মে ব্যস্ত নারীরা এখন গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের একমাত্র ভরসা ছিল ব্রডব্যান্ড সংযোগ, যা এখন অচল।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

স্থানীয় কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি প্রদেশ—বালখ, কুন্দুজ, বাদাখশান, তাখর ও বাঘলানে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক পরিষেবা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের দাবি, ‘অনৈতিক কার্যকলাপ’ রোধের জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও কান্দাহার, হেরাত ও পারওয়ানের বাসিন্দারাও সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ এখনো তা স্বীকার করেনি।

ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় হাজার হাজার বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে গেছে। এখন সবাইকে ব্যয়বহুল ও অনিয়মিত মোবাইল নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর এটাই প্রথমবার এত বড় পরিসরে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা, যদিও তা দেশব্যাপী নয়।

হায়াত হ্যান্ডিক্রাফ্টসের পরিচালক সাবরিনা হায়াত জানান, বিভ্রাটের কারণে তাদের ইন্টারনেট খরচ তিনগুণ বেড়ে গেছে। নয়জন নারী তার অধীনে ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাক ও হস্তশিল্প তৈরি করেন। আগে দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে সহজে অর্ডার আসত, কিন্তু এখন ফাইবারের তুলনায় তিনগুণ বেশি দামের মোবাইল ইন্টারনেট কিনতে হচ্ছে।

গত সপ্তাহে বালখ প্রদেশের গভর্নরের মুখপাত্র হাজি জায়েদ বলেন, ফাইবার-অপটিক ক্যাবলের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ‘অনৈতিক কার্যকলাপ’ রোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় বিকল্প সমাধান দেশের ভেতরেই তৈরি করা হবে। একই ধরনের বিবৃতি দিয়েছে কুন্দুজ প্রাদেশিক মিডিয়া অফিসও।

তবে কাবুলের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

শহরের এক দর্জি দাওরানি জানান, তার কর্মশালায় বিধবা ও অভাবী নারীরা কাজ করতেন। বিক্রি ও অর্ডার পুরোপুরি ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় ব্যবসা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘যদি আমি এই সামান্য আয়ও করতে না পারি, তাহলে বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে যেতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের জন্যও ইন্টারনেট ছিল সীমাবদ্ধ, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য যারা স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষিদ্ধ। উত্তরাঞ্চলে ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় তাদের জন্য সেই বিকল্প পথও বন্ধ হয়ে গেছে। দাওরানি জানান, তার মেয়েরা এখন আর অনলাইনে ইংরেজি ক্লাস করতে পারছে না।

ডিজিটাল অধিকার কর্মীদের অভিযোগ, তালেবানদের যুক্তি নৈতিকতার চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণমূলক। কাবুলভিত্তিক শিক্ষাবিদ ওবায়দুল্লাহ বাহির বলেন, “এটি আগের মতোই একটি প্যাটার্ন। তালেবানরা নারী শিক্ষাসহ নানা নিষেধাজ্ঞার জন্য সবসময় ‘অনৈতিকতা’র অজুহাত ব্যবহার করেছে। সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞা তালেবানদের আধুনিকতা-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। তারা আধুনিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, আর তাদের আচরণ এখন অনেকটা সেইসব লোকের মতো, যাদের একসময় তারা নিজেরাই কঠোর বলত।’ তবে এসব রাজনৈতিক বিতর্ক অনেক নারীর কাছে গৌণ। দাওরানি বলেন, ‘এই সেলাই কাজের মাধ্যমেই আমি সংসার চালিয়েছি। ইন্টারনেট ছাড়া সেটাও হয়তো হারিয়ে যাবে।’