ফিলিপিন্সের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফাং-ওয়ং’। রবিবার (৯ অক্টোবর) রাতে স্থলভাগে আঘাত হানার আগে সুপার টাইফুনে পরিণত হতে পারে এটি। এসময় পাঁচ মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস এবং ধ্বংসাত্মক ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর, সতর্কতা জারি করেছে পূর্ব উপকূলে।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ফাং-ওয়ং ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (৯৩২ মাইল) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হবে। এর প্রভাবে ইতিমধ্যেই ফিলিপিন্সের পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভারি বৃষ্টি ও দমকা হওয়া বইছে। আবহাওয়াবিদ বেনিসন এসতারেজা এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এটি প্রায় পুরো দেশজুড়ে প্রভাব ফেলতে পারে।’
স্থানীয়ভাবে ‘উয়ান’ নামে পরিচিত ফাং-ওয়ং বর্তমানে প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের বেগ ১৪০ কিলোমিটার এবং ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝোড়ো দমকা হাওয়া নিয়ে এগোচ্ছে।
স্থলভাগে পৌঁছানোর আগে প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের বেগ বেড়ে ১৮৫ কিলোমিটার হতে পারে। এতে ঘরবাড়ি, স্থাপনা ধ্বংস এবং গাছপালা উপড়ে যেতে পারে। পূর্ব ফিলিপিন্সের বিভিন্ন প্রদেশে, বিশেষ করে বিকোল অঞ্চল ও সামার এলাকায় ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অপরদিকে, উত্তর ও মধ্য লুজন অঞ্চলে ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। আবহাওয়া দপ্তর নিম্নাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার এবং সমস্ত নৌ কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে। তারা সতর্ক করেছে, প্রবল জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকাগুলোকে প্লাবিত করতে পারে এবং প্রবল বাতাস ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে।
ফাং-ওয়ং-এর সম্ভাব্য আঘাতের আগে কয়েকটি স্থানীয় সরকার সোমবারের ক্লাস স্থগিত করেছে, আর দেশের জাতীয় বিমান সংস্থা কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এই সতর্কতা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মাত্র কয়েক দিন আগেই ঘূর্ণিঝড় কালমেগি ওই অঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়ে গেছে।
কালমেগির আঘাতে ফিলিপিন্সে ২০৪ জন এবং ভিয়েতনামে ৫ জন নিহত হয়েছে। শত-সহস্র মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ব্যাপক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
ভিয়েতনামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, সেখানে ২ হাজার ৮০০টির বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রায় ৫ লাখ মানুষ এখনো বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ফিলিপিন্সে প্রচণ্ড বন্যা ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে এবং রাস্তাঘাটে ধ্বংসাবশেষ জমে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্স প্রশান্ত মহাসাগরের টাইফুন বেল্টের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে ঘূর্ণিঝড় ও ট্রপিক্যাল ঝড়ের ঝুঁকিতে থাকে এবং প্রতি বছর ঝড়ের মৌসুমে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
থাইল্যান্ডেও কালমেগির প্রভাবে উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে ভারি বৃষ্টি ও স্থানীয় বন্যা দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কালমেগির মতো ঘূর্ণিঝড়গুলো আরো শক্তিশালী ও বিধ্বংসী হয়ে উঠছে।



