রাশিয়ার খনিজ তেল কেনার ক্ষেত্রে ইউরোপের একটিমাত্র দেশ হাঙ্গেরিকে ছাড় দেবে আমেরিকা। অন্য কোনও দেশ ওই তেল কিনলেই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। শুক্রবার (৭ অক্টোবর) হোয়াইট হাউস থেকে এ কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রায় চার বছর ধরে পূর্ব ইউরোপে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে। ট্রাম্প নিজে এই যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করেছেন একাধিক বার। কিন্তু সাফল্য মেলেনি। আমেরিকার দাবি, রাশিয়া তেলের ব্যবসা চালিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করছে। তাই তেলের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারলে যুদ্ধ থামাতে বাধ্য হবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
একই যুক্তিতে আমেরিকা চড়া হারে শুল্ক আরোপ করেছে ভারতের উপরেও। রাশিয়ার তেল কেনার কারণে মার্কিন পণ্যে ভারতের উপর চাপানো হয়েছে ৫০ শতাংশ কর। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলির উপরেও ক্ষুব্ধ ট্রাম্প। কারণ, ওই মহাদেশের বহু দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে চলেছে।
ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র অরবান গতকাল শুক্রবার ওয়াশিংটনে যান। হাঙ্গেরি যেন রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি অব্যাহত রাখতে পারে, সে ব্যাপারে ট্রাম্পকে রাজি করানোর চেষ্টায় তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর হাঙ্গেরির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন অরবান। এ সময় তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত জ্বালানির ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা থেকে হাঙ্গেরি ‘পুরোপুরি অব্যাহতি’ পেয়েছে। টার্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা গ্যাস ও দ্রুজবা পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা তেলের ক্ষেত্রে এ অব্যাহতি পাওয়া যাবে।
হাঙ্গেরি ইউরোপের একেবারে মধ্য ভাগে অবস্থিত। চার দিকেই রয়েছে অন্য দেশের ভূখণ্ড, কোথাও কোনও সমুদ্র নেই। অস্ট্রিয়া, স্লোভাকিয়া, ইউক্রেন, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং সার্বিয়া দ্বারা পরিবেষ্টিত এই দেশের পক্ষে খনিজ তেলের একমাত্র ভরসা রাশিয়াই। প্রধানমন্ত্রী অরবান এই যুক্তিতেই ট্রাম্পকে রাজি করিয়েছেন। আবার একই যুক্তিতে মস্কোকেও সন্তুষ্ট রেখে চলে হাঙ্গেরি। এটি অরবানের রাজনীতির অন্যতম কৌশল। আগামী বছরে সে দেশে ভোট রয়েছে। ভোটারদের সস্তায় রাশিয়ার তেলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার বৃহত্তম দু’টি খনিজ তেল সংস্থাকে গত মাসে নিষিদ্ধ (ব্ল্যাকলিস্টেড) করেছে আমেরিকা। বলা হয়েছে, এই দুই সংস্থার কাছ থেকে কোনও দেশ তেল কিনলে তাদের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। একমাত্র হাঙ্গেরি সেই নিষেধাজ্ঞায় ছাড় পেল। অরবানের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা করেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, ‘পুতিনকে বোঝেন অরবান, ওকে খুব ভাল করে চেনেন। তিনিও মনে করছেন, যুদ্ধ শীঘ্র শেষ হবে।’



