টানা তিন বছর ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল দখলও করে নিয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ইউক্রেন প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছে। কারণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আগের মতো মার্কিন সহায়তা বন্ধ। ফলে যুদ্ধবিরতির জন্য নানা মহলে ধর্ণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
যুদ্ধবিরতির জন্য অবশ্য হাজির হয়েছিলেন হোয়াইট হাউজে। ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন। উভয়ই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় বলেও জানা গেছে। তবে পুতিনের সাফ কথা, ইউক্রেনের দখল করা অঞ্চল ছেড়ে দেবেন না তিনি।
অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন পুতিন
ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পরও উভয় পক্ষ হামলা আরও জোরদার করেছে। বিশেষ করে একে অপরকে ঘায়েল করতে উপর্যুপরি ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। রোববার (২৫ মে) রুশ টেলিভিশন চ্যানেল ‘রাশিয়া ১’ জানিয়েছে, কুরস্ক অঞ্চলে পুতিনের হেলিকপ্টারটিকে ঘিরে ধরেছিল ইউক্রেনীয় ড্রোনের ঝাঁক। তবে নিরাপত্তায় থাকা যুদ্ধবিমানের বহর তাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়।
রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা বিভাগের কমান্ডার ইউরি দাশকিন বলেন, ‘ইউক্রেন ওই সময় রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অভূতপূর্ব মাত্রার ড্রোন হামলা চালায়। রুশ বাহিনী মোট ৪৬টি ফিক্সড-উইং (স্থিরডানা) ইউএভি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।’
চীনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের গোয়েন্দা প্রধানের অভিযোগ
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এবার চীনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করার মতো গুরুতর অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান জেনারেল ওলেহ ইভাশচেঙ্কোর।
স্থানীয সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে যে চীন (রাশিয়ার) সামরিক কারখানাগুলোতে সরঞ্জাম, বিশেষ করে রাসায়নিক ও বারুদ সরবরাহ করছে। আমরা ২০টি রাশিয়ান কারখানার তথ্য নিশ্চিত করেছি।
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪-২৫ সালে চীনের সঙ্গে বিমান চলাচল সহযোগিতার অন্তত পাঁচটি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে সরঞ্জাম, যন্ত্রাংশ এবং ডকুমেন্টেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশেষ রাসায়নিকের ছয়টি বড় সরবরাহ। ২০২৫ সালের প্রথম দিকে রাশিয়ান ড্রোনের জন্য ৮০ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক্স চীনা উৎপাদিত।’
রাশিয়ার হয়ে উত্তর কোরিয়ার সৈন্য প্রেরণ
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করতে সেনা পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ এক প্রতিবেদনে বলেছে, পিয়ংইয়ংয়ের সামরিক বাহিনীর দাবি- উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আদেশে তাদের সেনারা কুর্স্ক সীমান্ত এলাকা ‘পুরোপুরি মুক্ত’ করতে রুশ বাহিনীকে সহায়তা করেছে।
বিবিসি লিখেছে, রাশিয়ার চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গিরাসিমভ রুশ বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের ‘বীরত্বের’ প্রশংসা করার কয়েকদিন পর পিয়ংইয়ং যুদ্ধে নিজেদের সেনার উপস্থিতির কথা জানান দিল। আর গিরাসিমভের ওই প্রশংসার মধ্যে মস্কো প্রথমবারের মত উত্তর কোরিয়ার সেনাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে।
গত জানুয়ারিতে পশ্চিমা কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়া থেকে পাঠানো ১১ হাজার সেনার মধ্যে অন্তত এক হাজার সেনা আগের তিন মাসে নিহত হয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস। উত্তর কোরিয়া থেকে যেসব সেনা পাঠানো হয়, তারা স্টর্ম কর্পস নামে একটি এলিট ইউনিটের সদস্য। তারা আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতার জন্য ‘প্রস্তুত নয়’ বলে খবরে বলা হচ্ছে।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক ট্যাংক কমান্ডার কর্নেল হামিশ ডি ব্রেটন-গর্ডন এ বছরের শুরুতে বলেছিলেন, ‘এরা রুশ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বাধীন খুব কম প্রশিক্ষিত সেনা, যাদের বোঝে না ওই কর্মকর্তারা।’
আপনার মতামত লিখুন :