রবিবার, ০১ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম

মাখোঁ ও ব্রিজিত সম্পর্ক : ফ্রান্সের রাজনৈতিক ইতিহাসে ব্যতিক্রম প্রেমকাহিনি

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিত।     ছবি- এএফপি

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিত। ছবি- এএফপি

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিত মাখোঁর প্রেম ও বিবাহের কাহিনি শুধু ব্যতিক্রমই নয়, অনেকের কাছে তা এখনো বিশ্বাসযোগ্য হিসেবেই ঠেকে না। 

আধুনিক ফরাসি রাজনীতির প্রেক্ষাপটে যেখানে প্রেম ও পরকীয়ার গল্প প্রায় নিয়মিত ঘটনা, সেখানে এই সম্পর্ক একেবারেই ভিন্ন। 

কিশোর বয়সে নিজের নাট্যশিক্ষিকাকে ভালোবেসে জীবনের প্রতিটি বাঁক পেরিয়ে অবশেষে তাঁকেই বিয়ে করার এই সাহসী পদক্ষেপ মাখোঁকে ব্যতিক্রমী করে তুলেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত সাংবাদিক সিলভি বোমেলের বই ‘ইল ভনেই দাভোয়ার ডিজ-সেত আন’ (তাঁর বয়স তখন সবে সতেরো)-এ মাখোঁ-ব্রিজিত সম্পর্কের অনেক অজানা দিক উঠে এসেছে। 

বইটিকে ঘিরে পাঠকের আগ্রহের বড় কারণ, এটি এমন এক প্রেমকাহিনির বর্ণনা দেয়, যার শুরু ১৯৯০-এর দশকে। মাখোঁর বয়স তখন মাত্র ১৬। অন্যদিকে, ব্রিজিতের বয়স ৪০।

শিক্ষক-ছাত্রের গল্প

ফ্রান্সের আমিয়েঁ শহরের একটি ক্যাথলিক স্কুলে এই সম্পর্কের সূচনা। সেখানে ব্রিজিত ছিলেন ফরাসি ভাষার শিক্ষিকা ও নাট্যদলের দায়িত্বশীল। নাটকের পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করতে গিয়েই দুজনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

শহরের রক্ষণশীল সমাজে এই সম্পর্ক গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং ব্রিজিতের নিজের পরিবার নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে সম্পর্কটি ভাঙার জন্য।

মাখোঁর সঙ্গে যখন ব্রিজিতের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন তাঁকে নানা বিরোধিতা ও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
ছবি-এএফপি

মাখোঁর মা-বাবা ব্রিজিতকে সরাসরি অনুরোধ করেন তাদের ছেলেকে ছেড়ে দিতে। এমনকি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ ছিল, কারণ ফরাসি আইনে কর্তৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে নাবালকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু তেমন কিছু হয়নি। মাখোঁকে প্যারিস পাঠিয়ে দেওয়া হলেও সম্পর্কটি টিকে থাকে।

এক দশকের অনুগত্য, অতঃপর বিয়ে

ব্রিজিত তখনো বিবাহিত ছিলেন। তাঁর স্বামী ছিলেন ব্যাংকার আন্দ্রে-লুই ওজিয়ের, যাঁর সঙ্গে তাঁর তিনটি সন্তান ছিল। সংসার চালাতে চালাতে তিনি ধীরে ধীরে মাখোঁর সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেন, কিন্তু বাইরের জগতে তা অনেকটা গোপনই থাকে।

অবশেষে ২০০৬ সালে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয় এবং ২০০৭ সালে ব্রিজিত ও মাখোঁ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

প্রেমিক থেকে রাষ্ট্রনায়ক

বোমেলের মতে, মাখোঁর রাজনৈতিক জীবনেও তাঁর এই সম্পর্কের এক ধরনের ছায়া রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অব্যাহত কটাক্ষ, গুজব ও কেলেঙ্কারির মধ্যেও মাখোঁ তাঁর লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি।

তিনি যা চান, তা অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ-এই গুণই তাঁর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের সেতুবন্ধন।

বিতর্ক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ফ্রান্সের একটি অংশ এখনো এই দম্পতির সম্পর্ক মেনে নিতে পারে না। ইন্টারনেটে, চিঠিতে এমনকি এলিসি প্রাসাদের দেওয়ালে ব্রিজিতকে নিয়ে তির্যক মন্তব্য পাওয়া যায়। 

কেউ কেউ বলেন, ব্রিজিত তাঁর সন্তানের বয়সী ছেলেকে ভালোবেসে সামাজিক নিয়ম ভেঙেছেন। কেউ আবার তাঁদের সম্পর্ককে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও রটনা ছড়ান।

২০১৪ সালে মাখোঁ অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তাঁদের নিয়ে নানা গুজব ছড়াতে থাকে। অনেকে দাবি করেন, মাখোঁ সমকামী, কেউ বলেন ব্রিজিত বারবার তরুণদের প্রেমে পড়েছেন। 

সিলভি বোমেলের মতে, এসব গুজব আমাদের সমাজের গভীর মানসিক কাঠামোকে তুলে ধরে, যা বয়স, লিঙ্গ ও সম্পর্ক নিয়ে এখনো রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি বহন করে।

সিলভি বোমেলের বই রাজনৈতিক প্রেমকাহিনি নয়, বরং এক যুগান্তকারী ব্যক্তিগত লড়াইয়ের দলিল।

মাখোঁ-ব্রিজিত সম্পর্ক প্রমাণ করে, সামাজিক বাধা, কটাক্ষ আর বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও অটল থেকে ভালোবাসা ও একে অপরের প্রতি অনুগত্য ধরে রাখা সম্ভব।

এ সম্পর্ক যেমন অনেকের চোখে অস্বাভাবিক, তেমনই অনেকের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক। একজন ছাত্র ও একজন শিক্ষিকার মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রেম, যা সময়ের কাঁটা, সমাজের চোখরাঙানি ও রাজনৈতিক চাপের মুখেও টিকে রয়েছে।

Link copied!