বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ‘পান থেকে চুন খসলেই’ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। আবার সত্যতা যাচাই না করেই দেশটির সরকার দিতে থাকে ইহা বড় বড় বিবৃতি। যেন মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বেপরোয়া হয়ে ওঠে নয়াদিল্লি।
বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের জননিরাপত্তা নিয়ে অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তার। অথচ নিজ দেশেই জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ভ্রমণ করতে পারেন না ভারতীয়রা। সম্প্রতি তারা নরেন্দ্র মোদি সরকারের ওপর বেশ চড়াও হয়েছেন। চান আত্মপরিচয়ের ‘স্বীকৃতি’ এবং অন্য রাজ্য থেকে নিজ রাজ্যে বেঁচে ফেরার গ্যারান্টি। আগামী ১৬ জুলাই ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছেন কর্মসূচিও।
এরমধ্যেই ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শাসিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘কাশ্মীরে কেউ যেন না যান’—এই বক্তব্য আদতে পাকিস্তানের প্রোপাগান্ডার পুনরাবৃত্তি। তাই তিনি মন্তব্য করেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী আসলে পাকিস্তানের চর।’
শনিবার (১২ জুলাই) রাতে হুগলির জাঙ্গিপাড়ায় এক সভায় কল্যাণ আরও বলেন, ‘তুমি আগে তোমার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আটকাও। কেন্দ্রের মন্ত্রীদের বলো কাশ্মীরে যেন না যান। কাশ্মীর তো ভারতেরই অংশ। এই কথাটা কে বলে? পাকিস্তান।’
বাঙালিদের ‘বাংলাদেশি’ বলে হেনস্তার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ-সাত দিনে উড়িষ্যায় ২০০ জন বাঙালিকে আটকানো হয়েছে। কারণ কী? ওরা নাকি বাংলাদেশি। ভাবুন একবার, আপনি যদি কোনও কাজে উড়িষ্যায় যান, বা দিল্লি, বিহার, উত্তরপ্রদেশে যান—আপনি জানেন না আপনি ফিরতে পারবেন কি না! বাংলায় কথা বললেই আজ বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আসাম মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সাম্প্রতিক মন্তব্যেরও উল্লেখ করেন, যেখানে হিমন্ত বলেছিলেন, ‘যে বাংলায় কথা বলবে, সে বাংলাদেশি।” কল্যাণবাবু বলেন, “এই হচ্ছে বিজেপির আসল চেহারা।’
সাংসদের কথায়, “বিজেপি ভাবছে, উত্তরপ্রদেশ আর বিহারের কিছু লোক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ চালাবে। সেটা আমরা হতে দেব না। ওরা হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে লড়াই লাগাতে চাইছে। আমরা বলছি, এটা আমরা হতে দেব না। হিন্দু তোদের বাপের সম্পত্তি নয়! বিজেপির মধ্যে অনেক ‘ভেজাল হিন্দু’ আছে। আসল হিন্দু তারাই, যারা সব ধর্মের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলে।”
তিনি আরও বলেন, ‘বিজেপির স্বপ্ন হলো দাঙ্গা লাগিয়ে মরদেহের উপর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর গদি দখল করা। সেটা কোনও দিনই হবে না।’
বাংলাদেশি অপবাদের রাজনীতি
বিজেপির দীর্ঘদিনের এক বিতর্কিত কৌশল হলো, বাংলা ভাষাভাষী গরিব মানুষদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া। এনআরসি-সিএএ বিতর্কে তা প্রকট হয়েছিল।
আসাম ও ত্রিপুরায় বহু বাঙালি উদ্বাস্তু বহু বছর ধরে নিগৃহীত, এখন সেই ধারা বাংলার বাইরে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা একদিকে জাতীয়তাবাদের নামে বিভাজন, অন্যদিকে বাঙালির রাজনৈতিক আত্মসম্মান ও অস্তিত্বের বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত আঘাত। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য সেই ক্ষোভেরই এক প্রতিধ্বনি।
আপনার মতামত লিখুন :