পাকিস্তানের হুমকির পর বঙ্গোপসাগরের পাশে ওড়িশা উপকূল থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার দূরে আঘাত হানতে সক্ষম ‘অগ্নি-৫’ নামের মাঝারি পাল্লার মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। বুধবার (২০ আগস্ট) ওড়িশার চান্দিপুরের ইন্টেগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ (আইটিআর) থেকে মিসাইলটি সফলভাবে পরীক্ষা করে নয়াদিল্লি। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কৌশলগত বাহিনীর কমান্ডের অধীনে পরিচালিত এই উৎক্ষেপণ কার্যক্রম ক্ষেপণাস্ত্রটির সব কার্যকরী ও কারিগরি মানদণ্ড যাচাই করেছে।
ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ডিআরডিও) তৈরি অগ্নি-৫ ভারতীয় দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক। এর পাল্লা ৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি। উন্নত ন্যাভিগেশন, গাইডেন্স, ওয়ারহেড এবং প্রপালশন প্রযুক্তি-যুক্ত এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করেছে।
অগ্নি-৫ সম্পর্কে বিস্তারিত
পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম: অগ্নি-৫ একটি স্থলভিত্তিক আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা একাধিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।
পাল্লা: এর পরিসর ৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। ডিআরডিও বর্তমানে এর উন্নত সংস্করণে কাজ করছে, যার পাল্লা হবে সাড়ে ৭ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত।
এমআইআরভি পরীক্ষা: ২০২৪ সালের ১১ মার্চ তামিলনাড়ুর কালপাক্কম থেকে ভারতের প্রথম এমআইআরভি প্রযুক্তি সংবলিত উৎক্ষেপণ সফল হয়। এতে একাধিক ওয়ারহেড বহন ও আলাদা আলাদা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা যাচাই করা হয়।
ওয়ারহেড ক্ষমতা: অগ্নি-৫ একই সঙ্গে তিনটি পর্যন্ত পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন ও নিক্ষেপ করতে সক্ষম।
ভবিষ্যৎ উন্নয়ন: আসন্ন সংস্করণগুলোতে বাঙ্কার-বাস্টার প্রযুক্তি সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে সুরক্ষিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা বাড়ে।
পাকিস্তানের উদ্বেগ
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভারতের এই পরীক্ষায় ইসলামাবাদে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। পাকিস্তানভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক স্ট্র্যাটেজিক ভিশন ইনস্টিটিউট (এসভিআই) প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সতর্ক করে বলেছে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ‘গুরুতর ঝুঁকি’ তৈরি করছে।
এসভিআই উল্লেখ করেছে, ২০১৬ সালে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (এমটিসিআর)-এ যোগ দেওয়ার পর থেকে ভারত উন্নত প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার পায় এবং এর ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি দ্রুত অগ্রসর হয়।
তাদের সতর্কবার্তায় বলা হয়, ভবিষ্যতে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৮ হাজার কিলোমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা ওয়াশিংটন, মস্কো এমনকি বেইজিং পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম হবে।
পাকিস্তানের উদ্বেগ ভারতের বেড়ে চলা নৌ-পরমাণু অস্ত্রাগারকেও ঘিরে, বিশেষ করে সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এসভিআই-এর মতে, অগ্নি-৫ পরীক্ষা ভারতের বৈশ্বিক কৌশলগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত দেয় এবং নয়াদিল্লিকে অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা ও আলোচনার পথে আনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে আহ্বান জানায়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতদের এক সমাবেশে দেশটির সেনাপ্রধান আসিম মুনির বলেন, ভবিষ্যতে পাকিস্তানের অস্তিত্বের জন্য কোনো হুমকি এলে তার দেশ ‘বিশ্বের অর্ধেককে’ ধ্বংস করে দেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিই প্রথম ঘটনা যেখানে কোনো তৃতীয় দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমি থেকে পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দেওয়া হলো।
এ সময় আসিম মুনির সিন্ধু পানি চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ভারত যদি এই চুক্তির আওতায় কোনো বাঁধ নির্মাণ করে, তবে পাকিস্তান তা ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র মেরে ধ্বংস করে দেবে। মুনির আরও বলেন, ‘সিন্ধু নদ ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের কোনো অভাব নেই।